আগরতলা: গ্রাম পঞ্চায়েত, ভিলেজ কমিটি থেকে শুরু করে জেলা শহর সহ রাজ্যের সব জায়গা উন্নয়নের লক্ষ্যে কাজ করছে সরকার। এজন্য পরিকাঠামো উন্নয়নকে অন্যতম অগ্রাধিকার দিয়েছে রাজ্য সরকার। গ্রামীণ এলাকার মানুষের আর্থিক অবস্থার উন্নয়নে কাজ করছে রাজ্যের বর্তমান সরকার।
গতকাল খোয়াই জেলার বাইজল বাড়ি স্কুল মাঠে আয়োজিত একাধিক উন্নয়নমূলক প্রকল্পের উদ্বোধন করে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা। এদিন মুখ্যমন্ত্রীর হাত ধরে উদ্বোধন হয় নবনির্মিত বাইজল বাড়ি থানা এবং বাইজল বাড়ি দ্বাদশ শ্রেণী বিদ্যালয়ের ৫০ আসনের জনজাতি ছাত্রাবাস। এর পাশাপাশি আরো ৬টি প্রকল্পের ভার্চুয়াল উদ্বোধন করেন তিনি।
অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা বলেন, ত্রিপুরা জাতি জনজাতির মিশ্র সংস্কৃতির রাজ্য। গত কয়েক বছরে ত্রিপুরাতে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সবাইকে একসাথে নিয়ে সুন্দরভাবে চলছে এই রাজ্য। আগামীদিনেও একসাথে থাকলে এক ত্রিপুরা, শ্রেষ্ঠ ত্রিপুরা এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির এক ভারত শ্রেষ্ঠ ভারত গড়ে তোলা সম্ভব হবে। শান্তি সম্প্রীতি না থাকলে কোনকিছু করা সম্ভব নয়। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আগে খোয়াইকে অচ্ছুত করে রাখা হয়েছিল। রাজ্যের প্রায় সমস্ত জায়গায় অনুন্নয়নের ছোঁয়া দেখা গিয়েছিল। আর আমাদের সরকার আসার পর উন্নয়নের গতি দ্রুত এগিয়ে চলছে। আজকের দিনে ভারতবর্ষ সারা পৃথিবীর মধ্যে অর্থনীতির দিক থেকে চতুর্থ স্থানে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী মোদি ২০৪৭ এ বিকশিত ভারত এর লক্ষ্য নিয়েছেন। তিনি সবসময় গরীব মানুষের কথা ভাবেন। ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়ে জনজাতিদের উন্নয়নে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্য সরকার শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নকে বিশেষ অগ্রাধিকার দিয়েছে। জনজাতিদের সার্বিক উন্নয়নে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে রাজ্য সরকার। স্বনির্ভরতার উপরও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। রাজ্যে বর্তমানে স্বসহায়ক দলের সংখ্যা অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। রাজ্যে লাখপতি দিদির সংখ্যা ৯১ হাজারের অধিক হয়েছে। রাজ্যের নিজস্ব সম্পদ বাঁশ, আগর, রাবার, প্রাকৃতিক গ্যাস, কৃষি ইত্যাদি ক্ষেত্রকে কাজে লাগিয়ে আর্থ সামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যে জোর দেওয়া হয়েছে। গত বাজেটে ২৭,০০০ কোটি টাকা ছিল। এবারের বাজেটে ৩২,০০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। ত্রিপুরার সার্বিক উন্নয়ন নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় প্রশংসা করেছেন খোদ প্রধানমন্ত্রীও। তিনিই আমাদের এগিয়ে যাওয়ার মার্গদর্শন দিয়েছেন। বক্তব্য রাখতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, গ্রামীণ এলাকার মানুষের আর্থিক উন্নয়নে নজর দিয়েছে সরকার। প্রধানমন্ত্রীর ফ্ল্যাগশিপ প্রকল্পগুলি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে রাজ্যে। প্রধানমন্ত্রীর আয়ুষ্মান ভারত জন আরোগ্য যোজনার অনুকরণে রাজ্যের মানুষকে চিকিৎসা পরিষেবা প্রদানে রাজ্যেও চালু করা হয়েছে মুখ্যমন্ত্রী জন আরোগ্য যোজনা। প্রাণী সম্পদ বিকাশের লক্ষ্যে মুখ্যমন্ত্রী প্রাণী সম্পদ বিকাশ যোজনা ও মৎস্য উৎপাদনের লক্ষ্যে মুখ্যমন্ত্রী মৎস্য বিকাশ যোজনা শুরু করা হয়েছে। নগর পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য মুখ্যমন্ত্রী নগর উন্নয়ন প্রকল্প শুরু করা হয়েছে।
কৃষি ক্ষেত্রের উন্নয়নেও অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশিত এআই (আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স) এর মাধ্যমে কৃষির উন্নয়নে নজর দেওয়া হয়েছে। পঞ্চায়েতি রাজ ব্যবস্থায় অসাধারণ কাজের জন্য আমাদের সরকার ৭টি জাতীয় পুরস্কার পেয়েছে। গোমতী ও ধলাই জেলাও জাতীয় পুরস্কার অর্জন করেছে।
মুখ্যমন্ত্রী আরো বলেন, ত্রিপুরা একমাত্র রাজ্য যেখানে ক্যাবিনেট থেকে শুরু করে রাজ্য, জেলা, মহকুমা ও ত্রিস্তর পঞ্চায়েতে ই অফিস চালু হয়েছে। এতে স্বচ্ছতার পাশাপাশি কাজে গতি এসেছে। আমার সরকার পোর্টালের মাধ্যমে জনগণের বিভিন্ন সমস্যা সমাধান করা হচ্ছে। ডাঃ সাহা জানান, শুধু ২০২৫ সালে মে মাস পর্যন্ত কয়েক মাসে আমি নিজে ৫৮০ কোটি টাকার বিভিন্ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছি। মানুষের জীবন মানের উন্নতি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য প্রসার, কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরিকে অগ্রাধিকার দিয়েছে সরকার। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আজ বাইজল বাড়ি থানা উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে রাজ্যে এখন ৮৯টি থানা হয়ে গেল। আইনের শাসন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। রাজ্যে ২০২৩ – ২৪ সালে ১৯.৪% অপরাধ হ্রাস পেয়েছে। মহিলাদের সুরক্ষাকেও বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। নেশা ও অনুপ্রবেশের বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। মহিলাদের নিরাপত্তায় রাজ্যের প্রত্যেকটি জেলায় মহিলা পরিচালিত থানা খোলা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, গত ১৩ মে ৯৭৫ জন পুরুষ ও মহিলা কনস্টেবল নিয়োগ করা হয়েছে। এরমধ্যে মহিলা রয়েছেন ৩৩২ জন। রাজ্য সরকার আরো ৯১৬ জন কনস্টেবল নিয়োগের অনুমোদন দিয়েছে। ৬ হাজারের অধিক স্পেশাল এক্সিকিউটিভ পদে যথাসময়ে নিয়োগ করা হবে। এছাড়াও ২১৮ জন সাব ইন্সপেক্টর পদে নিয়োগের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এই ৭ বছরে স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে প্রভূত উন্নতি হয়েছে রাজ্যে। সম্প্রতি এইমস এর অধিকর্তার নেতৃত্বে এক প্রতিনিধি দল জিবি, আইজিএম সহ বিভিন্ন হাসপাতাল পরিদর্শন করেছেন।
অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জনজাতি কল্যাণ মন্ত্রী বিকাশ দেববর্মা, খোয়াই জেলার সভাধিপতি অপর্ণা সিংহ রায় দত্ত, বিধায়ক রঞ্জিত দেববর্মা, রাজ্য পুলিশের মহানির্দেশক অনুরাগ, খোয়াই জেলাশাসক রজত পন্থ, পঞ্চায়েত দপ্তরের অধিকর্তা প্রসূন দে, জেলা পুলিশ সুপার রানাদিত্য দাস সহ অন্যান্য জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের পদস্থ আধিকারিকগণ।