আগরতলা।।পরিকাঠামো উন্নয়নে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে রাজ্যের বর্তমান সরকার। এই লক্ষ্যে বাজেটে প্রায় ৭,০০০ কোটি টাকা রাখা হয়েছে। কৈলাশহর ও আগরতলায় আরো দুটি ওয়ান স্টপ সেন্টার স্থাপনের জন্য আর্থিক মঞ্জুরি পাওয়া গেছে। সমাজ কল্যাণ ও সমাজ শিক্ষা দপ্তরের পক্ষ থেকে ১৪,৫৭৫ জন দিব্যাঙ্গজনকে প্রতি মাসে ২ হাজার টাকা সামাজিক ভাতা দেওয়া হচ্ছে।
আজ আগরতলার রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবনে ১৪টি উন্নয়নমূলক প্রকল্পের ভার্চুয়াল উদ্বোধন ও ৫টি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা। ভিত্তিপ্রস্তর করা প্রকল্পগুলির মধ্যে রয়েছে – ৫টি ১০০ শয্যার ওয়ার্কিং ওমেন হোস্টেল ও ডায়েট (ডিআইইটি) এর ৫০ শয্যা বিশিষ্ট বয়েজ হোস্টেল। সমাজ কল্যাণ ও সমাজ শিক্ষা দপ্তরের উদ্যোগে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা বলেন, রাজ্যের মানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন করতে বিভিন্নভাবে কাজ করছে সরকার। আজ প্রায় ৬১ কোটি টাকা ব্যয়ে বিভিন্ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও শিলান্যাস করা হয়েছে।
আজকের উল্লেখযোগ্য উদ্বোধনের মধ্যে রয়েছে জিরানিয়া ও মোহনপুর মহকুমায় ৯টি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের উদ্বোধন। পাশাপাশি অভয়নগর, এডি নগর, বোধজংনগর, সাব্রুম ও বিলোনিয়ায় ওয়ার্কিং ওমেন হোস্টেলের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী জানান, আজকের অনুষ্ঠানে পোষণ অভিযানের আওতায় অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের প্রায় ১১,১৩০টি স্মার্ট ফোন প্রদানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এসব মোবাইলে পোষণ ট্র্যাকার অ্যাপ চালু থাকবে। এতে দৈনিক কাজকর্মের তথ্য জানা যাবে। এই প্রকল্পের অর্থরাশি প্রায় ১২ কোটি ৮৯ লক্ষ টাকা। কেন্দ্রীয় সরকারের নারী ও শিশু কল্যাণ মন্ত্রক থেকে এই অর্থরাশি দেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন পরিলক্ষিত হয়েছে।
আলোচনায় মুখ্যমন্ত্রী আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ২০৪৭ এ বিকশিত ভারত গড়ার পরিকল্পনা নিয়েছেন। সেই লক্ষ্যে রাজ্যগুলিকে রোড ম্যাপ তৈরি করার কথা বলেছেন তিনি। আর ইতিমধ্যে ত্রিপুরা সরকার বিকশিত ত্রিপুরা গড়ে তোলার লক্ষ্যে রোড ম্যাপ তৈরি করেছে। এক্ষেত্রে সারা দেশের মধ্যে আমাদের রাজ্য ৫ম স্থানে এবং উত্তর পূর্বাঞ্চলের ৮টি রাজ্যের মধ্যে প্রথম স্থানে রয়েছে। ডাঃ সাহা জানান, রাজ্যে আরো ১০টি ওয়ার্কিং ওমেন হোস্টেল স্থাপন করা হবে। এরমধ্যে আজ ৫টির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়েছে। এই প্রকল্পে প্রায় ১১৪ কোটি টাকা অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি হোস্টেলের জন্য ১১ কোটি ৪০ লক্ষ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে।
আমবাসা, ধর্মনগর ও কৈলাশহরে ইতিমধ্যে শিলান্যাস করা হয়েছে। পরবর্তী সময়ে উদয়পুর ও কুমারঘাটে এধরণের হোস্টেল করা হবে। এসব হোস্টেলে জিম, বিনোদন কেন্দ্র, স্পোর্টস কোর্ট, ২৪ ঘণ্টার নিরাপত্তা ও শিশুদের যত্নের জন্য ব্যবস্থা থাকবে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ডোনার মন্ত্রক ও নর্থ ইস্ট স্পেশাল ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট স্কিমে ৪৬টি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র করা হয়েছে। এই অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র গড়ে তোলার মূল লক্ষ্য হচ্ছে পুষ্টি, স্বাস্থ্য ও প্রাক প্রাথমিক শিক্ষার মৌলিক সেবা প্রদান করা। জুভেনাইল জাস্টিস আইন ২০১৫ অনুযায়ী ১৮ থেকে ২১ বছরের তরুণীদের জন্য আফটার কেয়ার হোম স্থাপন করা হচ্ছে।
এর মাধ্যমে তাদের খাদ্যের নিশ্চয়তা, শিক্ষা, পেশাগত প্রশিক্ষণ, জীবন দক্ষতা ও মানসিক সহায়তা দিয়ে আত্মনির্ভর করা যাবে। ডাঃ সাহা বলেন, ২০২৫ সালে শুধু আগস্ট মাস পর্যন্ত রাজ্যের বিভিন্ন মহকুমায় প্রায় ৮০০ কোটি টাকার অধিক বিভিন্ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী জানান, নতুনভাবে সামাজিক পুনর্মিলনের জন্য ১০১ জন শিশুকে ৫০,০০০ টাকা করে পুনর্বাসন অনুদান দেওয়া হয়েছে। জুভেনাইল জাস্টিস ফান্ডে বিগত ৩ বছরে মোট ১৪৪ জন শিশুকে ২০ হাজার টাকা থেকে ৩ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আর্থিক সহায়তা করা হয়েছে। ২০২৪ – ২৫ অর্থ বছরে প্রায় ৪,২৮৬ জন শিশুকে প্রতি মাসে ৪,০০০ টাকা করে স্পনসরশিপ প্রদান করা হয়েছে। চাইল্ড কেয়ার ইন্সটিটিউটে রাজ্যের ৮টি জেলায় ৪৪টি শিশু নিবাসে ৯৪০ জন শিশুকে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। সরকারিভাবে বিগত ৩ বছরে প্রায় ৩১ জন শিশুকে দত্তক দেওয়া হয়েছে। দিব্যাঙ্গজনদের সুবিধা প্রদানের লক্ষ্যে প্রায় ৪১,৬৯৪টি ডিসেবিলিটি আইডেন্টি কার্ড দেওয়া হয়েছে।
সেই সঙ্গে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলি যথাযথ পরিচালনার জন্য ২০২৩ এর ১ এপ্রিল থেকে এখন পর্যন্ত ১,৪০২ জন অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী ও ১,৬১৫ জন অঙ্গনওয়াড়ি সহায়িকা নিয়োগ করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সমাজ কল্যাণ ও সমাজ শিক্ষা মন্ত্রী টিংকু রায়, সমাজ কল্যাণ ও সমাজ শিক্ষা দপ্তরের সচিব তাপস রায়, অধিকর্তা টি কে দাস সহ অন্যান্য পদস্থ আধিকারিকগণ।