আগরতলা: জঙ্গিবাদ দমনে অপারেশন সিন্দুরের সাফল্যে ত্রিপুরা বিধানসভার অধিবেশনের প্রথম দিনে অভিনন্দনসূচক প্রস্তাব উত্থাপন করলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা। আজ রাজ্য বিধানসভায় দাঁড়িয়ে পহেলগাঁও হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানান মুখ্যমন্ত্রী।

সভায় মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা বলেন, গত ২২ এপ্রিল, ২০২৫ এ কাশ্মীরের পহেলগাঁও-এ পাকিস্তানের মদতপুষ্ট কট্টরপন্থী সন্ত্রাসবাদীরা নিরীহ পর্যটকসহ মোট ২৬ জন নাগরিককে নির্মমভাবে হত্যা করে। এই নৃশংস হত্যাকাণ্ড সমগ্র দেশবাসীকে গভীরভাবে শোকাহত করে তোলে। আমি এই সভায় এই নৃশংস হত্যাকান্ডের জন্য তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি এবং নিহতদের পরিবার পরিজনদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানায়।

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এই ন্যাক্কারজনক হত্যাকান্ডের পরপরই ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দ্ব্যর্থহীন ভাষায় দেশবাসীকে জানিয়েছিলেন, ভারত এই ধরণের জঙ্গি হামলাকে কোনভাবেই আর সহ্য করবে না। এই ঘটনায় যুক্ত জঙ্গিদের এবং তাদের পৃষ্ঠপোষকদের সমুচিত জবাব দেওয়া হবে। জঙ্গিরা যেখানেই লুকিয়ে থাকুক না কেন, তাদেরকে খুঁজে বের করে উপযুক্ত জবাব দেওয়া হবে বলে দেশবাসীকে অবগত করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। অবশেষে, কাশ্মীরের গণহত্যার প্রতিবাদে এবং জঙ্গি দমনে ভারতীয় সেনাবাহিনী গত ৭ মে, ২০২৫ গভীর রাতে ‘অপারেশন সিন্দুর’ অভিযান সংগঠিত করে। সুপরিকল্পিত এই অভিযানে পাকিস্তানের অভ্যন্তরে থাকা বেশ কয়েকটি জঙ্গি ঘাঁটি ও প্রশিক্ষণ শিবিরকে ধ্বংস করে দেওয়া হয়। এই অভিযানে পাকসেনার প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ব্যাপক সংখ্যক সন্ত্রাসীরা হতাহত হয় বলে জানা গেছে। পরদিন পাকিস্তান ভারতকে লক্ষ্য করে গোলাবর্ষণ শুরু করলে ভারতীয় সেনা, নৌ ও বায়ুসেনার সম্মিলিত পরিচালনায় ক্ষেপনাস্ত্রের পাল্টা আঘাতে পাকিস্তানের বেশ কয়েকটি সামরিক পরিকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হলেও পাকিস্তানের নাগরিকের উপর কোন আঘাত ছাড়াই সফলভাবে এই অভিযান সম্পন্ন করা হয়।

সভায় মুখ্যমন্ত্রী বলেন, পাকিস্তানের প্রতিটি আক্রমনকে ভারতীয় সেনাবাহিনীর বীর জওয়ানরা অত্যন্ত সাহস ও দক্ষতার সঙ্গে প্রতিহত করেছে। কোন প্রকার ক্ষয়ক্ষতি ছাড়াই ভারতবর্ষ সম্পূর্ণভাবে সুরক্ষিত রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দূরদর্শী নেতৃত্বে সাফল্যের সঙ্গে এই অভিযান এবং পাকিস্তানি হামলার যোগ্য জবাব যেভাবে ভারতের সেনাবাহিনী দিয়েছে তাতে ভারতের বীর পরাক্রমকেই সূচিত করে। সন্ত্রাসবাদ এবং সন্ত্রাসবাদীদের বিরুদ্ধে ভারতের এই অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে প্রধানমন্ত্রী যে ঘোষণা দিয়েছেন আমি রাজ্যবাসীর পক্ষ থেকে এর প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানাচ্ছি। ভারতের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গত এক দশকে যেরকম শক্তিশালী হয়েছে এই অভিযান তারই সাক্ষ্য বহন করে। ভারত অহিংসার পূজারী ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে বিশ্বাসী। কিন্তু ভারতের বিরুদ্ধে নাশকতামূলক জঙ্গি কাজকর্ম এবং দেশের স্থিতিশীলতাকে নষ্ট করার যেকোন চক্রান্তকেই ভারতবর্ষ যোগ্য জবাব দিতে প্রস্তুত।

ডাঃ সাহা আরো বলেন, ত্রিপুরা রাজ্য বিধানসভার এই পবিত্র সভা থেকে প্রধানমন্ত্রীর এই বাস্তবোচিত পদক্ষেপ এবং ভারতীয় স্থল, নৌ এবং বিমানবাহিনীর অভূতপূর্ব সাফল্যকে অভিনন্দিত করছি। সীমান্তরক্ষী বাহিনী সহ নিরাপত্তা বাহিনীর সকল স্তরের অফিসার এবং কর্মীগণ যারা অকুতোভয়ে অসীম সাহসিকতার সঙ্গে আমাদের সীমানায় অতন্দ্র প্রহরীর কাজ করছেন এবং দেশকে সুরক্ষিত রাখছেন রাজ্য বিধানসভার এই সভা থেকে আমি তাদেরকে অভিনন্দন জানাচ্ছি। ‘অপারেশন সিন্দুর’ অভিযানের মাধ্যমে ভারত শুধু কাশ্মীর উপত্যকার মানবতা বিরোধী গণহত্যাকান্ডের উপযুক্ত জবাবই দেয়নি, গোটা বিশ্বকে প্রমাণ করেছে সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় ভারত সর্বদা সতর্ক, শক্তিশালী এবং প্রয়োজনে সীমান্ত পেরিয়ে শত্রুর ঘাঁটিতে সরাসরি আঘাত হানতেও ভারত দ্বিধা করে না।

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘অপারেশন সিন্দুর’ নিঃসন্দেহে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের এক ঐতিহাসিক মাইলফলক হিসেবে স্থান করে নিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দৃঢ় নেতৃত্ব ও সুপরিকল্পিত পদক্ষেপের ফলে অর্জিত এই গৌরবোজ্জল বিজয় উপলক্ষ্যে ত্রিপুরা বিধানসভা প্রধানমন্ত্রী, প্রতিরক্ষামন্ত্রী, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা, চিফ অব ডিফেন্স স্টাফ, ভারতীয় সেনাবাহিনী, নৌ-সেনা ও বায়ুসেনার প্রধানসহ বি এস এফ-এর প্রধান এবং মাতৃভূমিকে সুরক্ষিত রাখার শপথ নেওয়া সকল বীর জওয়ানদের প্রতি আন্তরিক শ্রদ্ধা ও অভিনন্দন জ্ঞাপন করছে।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *