আগরতলা: রাজ্যে সংস্কৃতি চর্চার ক্ষেত্রকে আরো উন্নত থেকে উন্নততর করতে হবে। সেন পাড়ার বাংলা সংস্কৃতি বলয়ের সংস্কৃতি হাটের পরিকাঠামো উন্নয়নে পুরাতন আগরতলা ব্লককে ৫০.২৫ লক্ষ টাকা অনুদান দেওয়া হবে।
আজ আগরতলার নন্দননগরস্থিত সেন পাড়ায় বাংলা সংস্কৃতি বলয়ের সংস্কৃতি হাটের ১০০ সপ্তাহ উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা বলেন, ২০২৩ সালের ১০ ডিসেম্বর এই জায়গায় প্রথমবারের মতো এই সাংস্কৃতিক হাটের আনুষ্ঠানিক সূচনা হয়েছিল। আমারও এখানে আসার সৌভাগ্য হয়েছিল। আবারও শততম হাটে উপস্থিত হতে পেরে আমি খুবই আনন্দিত। সমস্ত বাধা বিপত্তিকে উপেক্ষা করে গত ৯৯ সপ্তাহ ধরে আয়োজকরা নিয়মিতভাবে এই সাপ্তাহিক হাটের আয়োজন করে গিয়েছেন।
এক সপ্তাহের জন্যও বন্ধ রাখা হয়নি। এজন্য আমি তাদের ধন্যবাদ জানাই। এই ধারাবাহিক কার্যক্রমের মাধ্যমে সংস্কৃতি প্রেমীরা অনেক বেশি উপকৃত হবেন। এখন এই সংস্কৃতি বলয়ের কথা ত্রিপুরা থেকে শুরু করে বাংলাদেশ, পশ্চিমবঙ্গের মানুষও জানেন। এটা একটা খুবই জনপ্রিয় কার্যক্রম হয়ে উঠেছে। এই অনুষ্ঠানের সাক্ষী হতে বিভিন্ন জায়গা থেকে মানুষ সমবেত হন। এর একটা ইতিবাচক সাড়া ইতিমধ্যে পরিলক্ষিত হয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি লাখপতি দিদি তৈরি করার উপর গুরুত্ব দিয়েছেন। সেই লক্ষ্যে আমাদের ত্রিপুরায় ইতিমধ্যে ১ লক্ষ ৮ হাজার লাখপতি দিদি হয়েছেন। আর স্ব সহায়ক দলের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন প্রায় ৪ লক্ষ ৮৫ হাজারের মতো মহিলা। এতে বিকল্প আয়ের উৎস পরিলক্ষিত হচ্ছে। এই সংস্কৃতি হাটকে কেন্দ্র করে শুধু বিনোদন নয়, আত্মনির্ভরতার বিষয় আমরা দেখতে পাচ্ছি। একে ঘিরে প্রায় ৪০/৫০টি পরিবার স্ব সহায়ক দলের সঙ্গে যুক্ত হয়ে নিজস্ব জিনিসপত্র তৈরি ও খাবার বিক্রি করে নিজেদের উন্নয়ন করতে সক্ষম হচ্ছেন। সেই সঙ্গে এলাকার সমাজও আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছে। এতে আর্থ সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন হচ্ছে।
অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা জানান, এই সেন পাড়ায় সাপ্তাহিক হাটকে কেন্দ্র করে জীবন জীবিকার পটভূমির সার্বিক উন্নয়নে টিআরএলএম (ত্রিপুরা গ্রামীণ জীবিকা মিশন) এর পক্ষ থেকে পুরাতন আগরতলা ব্লককে মোট ৫০ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা এককালীন আর্থিক অনুদান দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এর মাধ্যমে পরিকাঠামো উন্নয়ন করা হবে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, সংস্কৃতি ছাড়া আমরা কেউ বাঁচতে পারবো না। সংস্কৃতি হচ্ছে অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যতের মধ্যে সংযোগ স্থাপনের অন্যতম উপাদান।
সংস্কৃতি হচ্ছে আমাদের একটা অলঙ্কার। ত্রিপুরার সমৃদ্ধ সংস্কৃতি আমাদের গর্বিত করে। আমাদের রাজ্যে ১৯টি জাতিগোষ্ঠী রয়েছে। এছাড়া মণিপুরী, সংখ্যালঘু ও বাঙালিরা আছেন। সবমিলিয়ে রাজ্যে রয়েছে একটা মিশ্র সংস্কৃতির আবহ। বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য রয়েছে আমাদের ত্রিপুরায়। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে সামনের দিকে এগিয়ে চলছে দেশ। ত্রিপুরাতেও শান্তি বজায় রেখে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে কাজ করছে সরকার।
ডাঃ সাহা বলেন, তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের মাধ্যমে রাজ্যে হারিয়ে যাওয়া সংস্কৃতি রক্ষায় গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে সরকার। এরমধ্যে রয়েছে যাত্রাপালা, লোকযাত্রা, পুতুল নাচ ইত্যাদি। ত্রিপুরায় ন্যাশনাল স্কুল অফ ড্রামার ইউনিট রয়েছে। সেই সঙ্গে ত্রিপুরায় ফিল্ম এন্ড টেলিভিশন ইন্সটিটিউট স্থাপন করা হয়েছে। ইতিমধ্যে বিভিন্ন সার্টিফিকেট কোর্স চালু করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন যুব বিষয়ক ও ক্রীড়া মন্ত্রী টিংকু রায়, বিধানসভার প্রাক্তন অধ্যক্ষ তথা বিধায়ক রতন চক্রবর্তী, রাজ্যভিত্তিক সাংস্কৃতিক উপদেষ্টা কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান সুব্রত চক্রবর্তী, পশ্চিম ত্রিপুরা জেলার জেলাশাসক বিশাল কুমার, টিআরএলএম এর সিইও তড়িৎ কান্তি চাকমা, বাংলা সংস্কৃতি বলয়ের বিশ্ব কমিটির সভাপতি সেবক ভট্টাচার্য সহ শিল্পী, গুণীজন ও অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিগণ।
এদিন অনুষ্ঠান শুরুর আগে রাজধানী শহরের বুক থেকে একটি মশাল মিছিল শুরু হয়ে সংস্কৃতি হাটে এসে জমায়েত হয়। সেখানে মুখ্যমন্ত্রী সহ অন্যান্য অতিথিদের হাতে মশাল তুলে দেওয়া হয়।
