আগরতলা:রাতের অন্ধকারে ছাই ৫–৬টি বসতঘর ও একটি রেশন দোকানদমকলের দেরি, জল–সংকট ও গাফিলতির অভিযোগে উত্তাল স্থানীয়রা।শান্তিরবাজার মহকুমার অন্তর্গত মুহুরীপুর বাজারে বুধবার গভীর রাতে ঘটে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড।
রাত প্রায় সাড়ে দশটা নাগাদ বাজারের একটি রেশন দোকান থেকে আগুনের সুত্রপাত হয়েছে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা যায়। প্রথমদিকে ছোট পরিসরে থাকা আগুন কয়েক মিনিটের মধ্যেই ভয়ঙ্কর আকার ধারণ করে, কারণ দোকানের ভেতরে থাকা প্লাস্টিক ও অন্যান্য দাহ্য সামগ্রী আগুনকে দ্রুত ছড়িয়ে দেয়। মুহূর্তের মধ্যে আগুন লাফিয়ে লাফিয়ে পাশের বসতঘরগুলো গ্রাস করতে শুরু করে।
পরিবারের সদস্যরা আতঙ্কে ঘর থেকে বেরিয়ে আসে, অনেকেই ঘরে থাকা মূল্যবান সামগ্রী পর্যন্ত বের করতে পারেননি।অগ্নিকাণ্ডের খবর স্থানীয়রা দ্রুত জোলাইবাড়ী অগ্নি নির্বাপক দপ্তরে জানান। কিন্তু অভিযোগ উঠেছে, দমকল প্রথম দলটি ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে উল্লেখযোগ্য দেরি করে। স্থানীয়দের বক্তব্য—“সময়মতো দমকল পৌঁছালে এত বড় ক্ষতি হতো না।” তাঁদের অভিযোগ, প্রথম দফায় আসা দমকলের গাড়িতে যথেষ্ট পরিমাণ পানি ছিল না, জেনারেটরেও জ্বালানির ঘাটতি ধরা পড়ে।
এমনকি দমকলকর্মীদের মধ্যে কয়েকজনের আচরণ দায়িত্বজ্ঞানহীন ছিল বলেও অভিযোগ তুলছেন ক্ষতিগ্রস্তরা। তাঁদের দাবি, কিছু কর্মী মদ্যপ অবস্থায় ছিলেন এবং আগুন নিয়ন্ত্রণে স্থানীয়দের সহায়তা নিতে গিয়ে কথাকাটা কাটিও হয়।দমকলের দেরি ও বিশৃঙ্খলার ফলে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে আশেপাশের আরও ঘরবাড়িতে। আনুমানিক পাঁচ থেকে ছয়টি বসতঘর সম্পূর্ণ পুড়ে ভস্মীভূত হয়ে যায়। বাজারের ওই রেশন দোকানটিও সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে।
ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর অভিযোগ—বহু গৃহস্থালি সামগ্রী, আসবাবপত্র, গুরুত্বপূর্ণ নথি, এমনকি বহু বছরের সঞ্চয়—সবকিছুই আগুনে পুড়ে গেছে।পরিস্থিতি বেগতিক বুঝে ঋষ্যমুখ, বিলোনিয়া, সাব্রুম ও শান্তিরবাজার অগ্নি নির্বাপক দপ্তরের দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণের কাজে নেমে পড়ে। সঙ্গে যোগ দেন নবম বাহিনীর টি এস আর জওয়ানরাও।চারদিক থেকে ফোর্স পৌঁছানোর পরই আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।
দমকল বাহিনীর কর্তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি সামাল দেন, তবে স্থানীয়দের ক্ষোভ শান্ত হয়নি। তাঁদের অভিযোগ—মহকুমার দমকল ব্যবস্থা দীর্ঘদিন ধরেই অচল, গাড়িতে নিয়মিতই জল ও জ্বালানির অভাব দেখা যায়, আর দায়িত্বে থাকা কর্মীদের উপর নজরদারি নেই।ঘটনার পর প্রশাসনের পক্ষ থেকে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ শুরু হয়েছে। অগ্নিকাণ্ডের সঠিক সুত্রপাত ও কারণ খতিয়ে দেখতে তদন্তও শুরু করেছে দমকল বিভাগ ও পুলিশ। তবে আগুনের উৎস রেশন দোকানের ভেতর থেকেই এসেছে বলে প্রাথমিক অনুমান।
ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের জন্য অস্থায়ী ত্রাণ ও সাহায্যের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।ঘটনার পর এলাকায় আতঙ্কের সঙ্গে সঙ্গে তীব্র ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। স্থানীয়রা প্রশ্ন তুলেছেন—“একটা রেশন দোকানে আগুন লাগল, অথচ দমকলের ব্যর্থতায় কয়েকটি পরিবার ঘরবাড়ি হারাল—এ দায় কে নেবে?” দমকল বিভাগের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ নিয়ে এখনো পর্যন্ত কোনো সরকারি প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
মুহুরীপুর বাজারের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড আবারও সামনে এনে দিল মহকুমার অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থার দুর্বলতা। মানুষের দাবি—এ ধরনের ঘটনায় যাতে ভবিষ্যতে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি না হয়, তার জন্য অবিলম্বে দমকল ব্যবস্থায় সংস্কার আনা প্রয়োজন।
