আগরতলা, ৩০ অক্টোবর: ভেটেরিনারি কলেজকে সারা দেশের মধ্যে অন্যতম শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ করতে হবে। বর্তমানে দুধ উৎপাদনে উত্তর পূর্বাঞ্চলের মধ্যে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে আমাদের রাজ্য। আগামীদিনে দুধ ও ডিম উৎপাদনের ক্ষেত্রে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করতে হবে আমাদের।
আজ আরকে নগরস্থিত ভেটেরিনারি সায়েন্সেস এন্ড এনিম্যাল হাজবেন্ডারি কলেজের ১৭তম প্রতিষ্ঠা দিবসের অনুষ্ঠানে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা বলেন, পরিকাঠামোগত দিক দিয়ে এই ভেটেরিনারি সায়েন্সেস এন্ড এনিম্যাল হাজবেন্ডারি কলেজ অন্য মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চাইতে কোন অংশে কম নয়। ভেটেরিনারি সায়েন্স হিউম্যান সায়েন্সের থেকেও একটু জটিল। এই ক্ষেত্রে ছাত্রছাত্রীদের প্রচুর পড়াশুনা করতে হয়। আমি প্রায়শ শুনতাম আরকে নগরে ভেটেরিনারি কলেজ সম্পর্কে। এই কলেজের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে জানতে আমি দপ্তরের মন্ত্রী এবং সচিবের কাছ থেকে খবর নিতাম। আমি এই কলেজের ফ্যাকাল্টির স্বল্পতা পূরণে গুরুত্ব দিয়েছি। কোন রাজ্যে ভেটেরিনারি কলেজ থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আগে ত্রিপুরার জন্য শুধু এক দুটো সিট ছিল। সেই জায়গায় এখন বড় পরিসরে মেডিকেল কলেজ হয়েছে। বর্তমানে এখানে প্রায় ৬৬টি আসন সংখ্যা রয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, লাইভ স্টকের দিক দিয়ে সারা পৃথিবীর মধ্যে এখন ভারতবর্ষ একটা বৃহৎ অংশের দাবিদার। লাইভ স্টকের সঙ্গে গ্রামীণ এলাকার মানব জীবনের উন্নয়ন সরাসরি যুক্ত রয়েছে। এই ভেটেরিনারি কলেজকে সারা দেশের মধ্যে অন্যতম শ্রেষ্ঠ কলেজ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। যাতে এই কলেজের সঙ্গে যুক্ত ছাত্রছাত্রী ও ফ্যাকাল্টিরা গর্ববোধ করতে পারেন। এখন এআই ও ফাইভ জির যুগ। তাই যুগের সঙ্গে টাল মিলিয়ে পড়াশুনার ক্ষেত্রেও আপডেট করতে হবে ছাত্রছাত্রী ও ফ্যাকাল্টিদের।
অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী ভেটেরিনারি সায়েন্সকে আরো উন্নত মানের করতে গুরুত্ব তুলে ধরেন। দুধ, ডিম, মাংসে ত্রিপুরা খুবই ভালো অবস্থানে রয়েছে। তথ্য দিয়ে তিনি জানান, ত্রিপুরায় ডিমের মাথাপিছু প্রাপ্যতা উত্তর পূর্বাঞ্চলের মধ্যে সর্বপ্রথম এখন। যা আমাদের জন্য খুবই গৌরবের বিষয়। দুধ উৎপাদনে উত্তর পূর্বাঞ্চলের মধ্যে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ত্রিপুরা। মাংস উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে রাজ্য। দুধ ও ডিম উৎপাদনের ক্ষেত্রে আগামীদিনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করতে হবে আমাদের। এজন্য সরকারের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট সকলকে এগিয়ে আসতে হবে।
বক্তব্যে মুখ্যমন্ত্রী আরো বলেন, রাজ্য সরকার মুখ্যমন্ত্রী উন্নত গো ধন প্রকল্প শুরু করেছে। প্রাণী পালক সম্মান নিধি শুরু হয়েছে। সেখানে প্রত্যেক বেনিফিসিয়ারিকে ৬ হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। এতে ২০২৩ - ২৪ ও ২০২৪ - ২৫ এ প্রায় ৮ হাজারের অধিক পরিবার উপকৃত হয়েছে। ভ্রাম্যমান পশু চিকিৎসা ইউনিট করা হয়েছে। সবুজ প্রাণী খাদ্য উন্নয়ন প্রকল্প শুরু করা হয়েছে। প্রায় ২৮৬ হেক্টর জমিতে সবুজ প্রাণী খাদ্য চাষ করা হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী প্রাণী সম্পদ যোজনায় হাঁস, মুরগী পালন শুরু হয়েছে। ন্যাশনাল প্রোগ্রাম ফর ডেভেলপমেন্ট প্রকল্পে ১৫ মে, ২০২৫ এ বামুটিয়ায় প্রায় ৪০,০০০ লিটার ক্ষমতা সম্পন্ন দুগ্ধ প্রক্রিয়াকরণ ও দুগ্ধজাত দ্রব্য উৎপাদন কেন্দ্রের উদ্বোধন করা হয়েছে। আগামীদিনে আরো মিনি মোবাইল ইউনিট চালু করার জন্য ২০২৫ - ২৬ অর্থবর্ষে বাজেটে ৪ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা রাখা হয়েছে। ডাঃ সাহা বলেন, এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি এমন একটি প্রতিষ্ঠান হোক যাতে শুধু ভারতবর্ষ নয়, সারা পৃথিবীতে সুনাম অর্জন করতে পারে।
মুখ্যমন্ত্রী জানান, এই এলাকায় সিজা হাসপাতাল গড়ে উঠতে চলেছে। খুব সম্ভব আগামী ৫ তারিখ এই হাসপাতালের ভূমি পুজন করতে যাচ্ছি। যখন এখানে সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল তৈরি হবে তখন প্রচুর মানুষ আসবে।
অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রাণী সম্পদ বিকাশ মন্ত্রী সুধাংশু দাস, প্রাক্তন অধ্যক্ষ তথা বিধায়ক রতন চক্রবর্তী, পশ্চিম ত্রিপুরা জেলা পরিষদের সভাধিপতি বিশ্বজিত শীল, ত্রিপুরা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর শ্যামল দাস, প্রাণী সম্পদ বিকাশ দপ্তরের সচিব দীপা ডি নায়ার, অধিকর্তা ড. নীরজ কুমার চঞ্চল, ভেটেরিনারি সায়েন্স কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ডাঃ পূরবী বর্মন সহ অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিগণ।
