আগরতলা: ২০২৩ সালের তুলনায় ২০২৫ সালের নভেম্বর পর্যন্ত সামগ্রিক অপরাধের হার অনেক কমেছে। মানুষের ভালো ও মঙ্গলের জন্য কাজ করতে হবে পুলিশকে। ন্যায় বিচারের আশায় আসা সাধারণ মানুষের জন্য কাজ করতে হবে তাদের। রাজ্যে অপরাধের হার আগের তুলনায় এখন অনেক হ্রাস পেয়েছে। আইন শৃঙ্খলা নিয়ে বর্তমান সরকার কোন ধরনের আপোস করবে না।

                            

আজ আগরতলার প্রজ্ঞা ভবনে অনুষ্ঠিত আইন শৃঙ্খলা নিয়ে পর্যালোচনা সভায় অংশ নিয়ে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা। 
                            সাংবাদিক সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ডাঃ সাহা বলেন, আজ বিভিন্ন থানার ওসি এবং এসডিপিওদের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। আমি এই বৈঠকে তাদের সঙ্গে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে কথা বলেছি। উর্দি হচ্ছে পুলিশের একটা অলঙ্কার। কাজেই এটাকে শ্রদ্ধা করা আপনাদের দায়িত্ব। একটা সময় ছিল কিছু পুলিশ অফিসারকে পার্টির লোক হিসেবে তুলনা করা হতো। কিন্তু কেন সেটা হবে? পুলিশের সঙ্গে পার্টির কিসের সম্পর্ক? যখন যে সরকার থাকবে সেই সরকারের ভালোর জন্য কাজ করতে হবে তাদের। ভালো কাজের নিরিখে অর্থাৎ মানুষের জন্য ভালো কাজ করার সুবাদে আমরা তাদের চিহ্নিত করি। আমি নিজে আজ পর্যন্ত কোন থানার ওসি কিংবা এসডিপিওকে ফোন করি নি। বরং নিউজপেপার দেখে আপনাদের সঙ্গে আলোচনায় বসি। 
                              মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা নতুন ত্রিপুরা গড়ে তোলার লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছি। আর পুলিশকে তাদের নিজেদের কাজ করতে হবে। পুলিশের কাজের মধ্যে সবসময় একটা চাপ থাকে। সেটাও নজরে রাখতে হবে। মানুষ ন্যায় বিচারের আশায় আপনাদের কাছে যায়। সারাদিনে এফআইআরগুলি যথাযথভাবে লেখা হয়েছে কিনা সেটা দেখার দায়িত্ব ওসিদের উপর। এতে মনিটরিং ব্যবস্থাও ভালো হবে। কোন অধঃস্তন অফিসার যদি মানসিক অসুস্থতার শিকার হন তবে প্রয়োজনে তাকে কাউন্সেলিং করাতে হবে। বিশেষ করে বিএসএফ, সিআরপিএফের মতো আধা সামরিক বাহিনীতে এধরণের প্রবনতা দেখা যায়। যে কারণে অনেকে আত্মহত্যার রাস্তা বেছে নেয়। তাই আগে থেকে নজর রাখা হলে এধরণের ঘটনা থেকে বিরত থাকা যাবে। আজকের বৈঠকে এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। মামলার চার্জশিট যথাযথ সময়ে পেশ করার বিষয়েও আলোচনা করা হয়। ওসি এবং তদন্তকারী অফিসারদের সঙ্গে সরকারি আইনজীবীদের যথাযথ সংযোগ স্থাপন রাখাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
                             সাংবাদিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী আরো বলেন, পুলিশের জন্য ফিজিক্যাল ফিটনেস (শারীরিক সক্ষমতা) একটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এজন্য এক্সারসাইজ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আজকের বৈঠকে ক্রাইম রেইট নিয়েও আলোচনা হয়েছে। দেখা গেছে ক্রাইম রেইট অনেক কমে গেছে রাজ্যে। তথ্য দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী জানান, ২০২৩ এ ক্রাইম এগেইনস্ট হিউম্যান বডি ছিল ১,৩৮৫টি। আর ২০২৫ এর নভেম্বর পর্যন্ত এই সংখ্যা ৭৫৩টি। যদিও বিরোধীরা তথ্য ছাড়া অনেক কথা বলে থাকেন। ক্রাইম এগেইনস্ট প্রোপার্টি ২০২৩ এ ৪১২টি। এখন সেই সংখ্যা ২৭৫। ক্রাইম এগেইনস্ট ওমেন ২০২৩ এ ৭৯১টি। এখন ৬২৭। রোড ট্রাফিক এক্সিডেন্ট এর হার কমানো নিয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। বিশেষ করে লাইসেন্স প্রদানের ক্ষেত্রে যাতে যথাযথ নিয়ম মানা হয় সেটা দেখতে বলা হয়েছে। 
                             মুখ্যমন্ত্রী বলেন, মাদকের (এনডিপিএস মামলা) বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতির উপর গুরুত্ব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। আর সেই দিশায় কাজ করছে রাজ্য সরকারও। ডাঃ সাহা বলেন, কাজ করতে গিয়ে পুলিশের সমস্যা কিংবা অসুবিধাগুলো দূর করার চেষ্টা করছে বর্তমান সরকার। নতুন ত্রিপুরা ও নতুন ভারত গড়ে তোলার জন্যও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রয়েছে পুলিশের। এজন্য আপনাদের সহযোগিতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমি আপনাদের মাধ্যমে রাজ্যবাসীর উদ্দেশ্যে বলতে চাই যে আইন শৃঙ্খলা ব্যবস্থা নিয়ে কোন ধরণের আপোস করবে না সরকার। আমরা চাই ত্রিপুরায় শান্তি ও সুস্থিতি বজায় থাকুক। 

                               এই গুরুত্বপূর্ণ পর্যালোচনা সভা ও সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন মুখ্যসচিব জে কে সিনহা, রাজ্য পুলিশের মহানির্দেশক অনুরাগ সহ উচ্চপদস্থ আধিকারিকগণ। এই সভায় যোগদান করেন রাজ্যের বিভিন্ন জেলার পুলিশ সুপার, মহকুমা পুলিশ আধিকারিক এবং থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিকগণ।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *