আগরতলা: বিদ্যুৎমন্ত্রী রতন লাল নাথ আজ জানান যে রাজ্যে বর্তমানে দৈনিক গড়ে ২৩ ঘণ্টা ৪৯ মিনিট বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে, যা বিদ্যুৎ বণ্টনে ত্রিপুরাকে দেশের চতুর্থ স্থানে নিয়ে গেছে।

তিনি জানান, এর মধ্যে গ্রামাঞ্চলে ২৩ ঘণ্টা ৪৩ মিনিট ও শহরাঞ্চলে ২৩ ঘণ্টা ৫৯ মিনিট বিদ্যুৎ সরবরাহ সম্ভব হচ্ছে।

মন্ত্রী বলেন আমাদের সরকারে আসার আগে রাজ্যে প্রতিদিন প্রায় ২১ ঘণ্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হত। এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৩ ঘণ্টা ৪৯ মিনিটে। এটি কেন্দ্রীয় সরকারের ন্যাশনাল ফিডার মনিটরিং সিস্টেম (NFMS)-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী। গত সাড়ে সাত বছর ধরে বিদ্যুৎ দপ্তর নিরবচ্ছিন্ন ও মানসম্মত বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে নিরন্তর কাজ করে চলেছে। এর জন্য একাধিক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

রুখিয়া ১২০ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল গ্যাস টারবাইন প্রকল্পের ভূমিপূজন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের পর এই তথ্য জানান বিদ্যুৎ মন্ত্রী।

তিনি বলেন, সিপাহিজলা জেলার রুখিয়ায় গ্যাসভিত্তিক এই তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি ১৯৯০ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত ছয় দফায় নির্মিত হয়। এখানে মোট নয়টি ওপেন সাইকেল (OC) গ্যাস টারবাইন জেনারেটর ইউনিট রয়েছে। প্রথম ছয়টি ইউনিট—১ থেকে ৬—প্রতিটির ক্ষমতা ৮ মেগাওয়াট।

বিদ্যুৎ মন্ত্রী জানান এই ছয়টি ইউনিটের কার্যক্ষমতার মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ায় এগুলোকে বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে। ২০০২ থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে বিভিন্ন সময়ে এগুলোর উৎপাদন পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। বাকি তিনটি ইউনিটের ক্ষমতা প্রতিটি ২১ মেগাওয়াট। বর্তমানে কেন্দ্রটির মোট উৎপাদন ক্ষমতা ৬৩ মেগাওয়াট হলেও গ্যাসের স্বল্পতার কারণে মাত্র ১৯ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে,।

মন্ত্রী আরও জানান যে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের আর্থিক সহায়তায় এই ৬৩ মেগাওয়াট ওপেন সাইকেল ইউনিটকে ১২০ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল ইউনিটে রূপান্তর করা হবে। এর ফলে অতিরিক্ত গ্যাস ব্যবহার করে ১২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব হবে। ওপেন সাইকেল টারবাইন থেকে নির্গত গরম গ্যাস ব্যবহার না হওয়ায় এর দক্ষতা মাত্র ৩৫–৪৫ শতাংশ। কিন্তু কম্বাইন্ড সাইকেলে ওই গরম গ্যাস দিয়ে স্টিম টারবাইন চালিয়ে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়, ফলে দক্ষতা বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় ৬০ শতাংশে। প্রকল্পের মোট ব্যয় ১,৩২০ কোটি টাকা এবং আগামী তিন বছরের মধ্যে কাজ সম্পূর্ণ হবে।

মন্ত্রী আরও জানান যে গ্রামীণ এলাকায় হুকলাইন ও বিদ্যুৎ চুরি রোধে মোট ১৩,৪৩৫ কিলোমিটার অ্যারিয়াল বাঞ্চড কেবল (AB Cable) স্থাপন করা হয়েছে, যেখানে আগে মাত্র ১৯৮ কিলোমিটার ছিল।

তিনি বলেন,পিএম-জনমন প্রকল্পের আওতায় মোট ১১,৬৯২ পিভিটিজি (রিয়াং) পরিবারকে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়েছে।

মন্ত্রী জানান, এনএইচপিসির সহযোগিতায় ধলাই জেলার ছাওমানু এলাকায় ৮০০ মেগাওয়াটের পাম্পড স্টোরেজ প্রকল্প স্থাপনের সম্ভাবনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে উত্তর-পূর্ব ভারতে এটি প্রথম পাম্পড স্টোরেজ প্রকল্প হবে এবং ত্রিপুরার আর্থিক অগ্রগতি উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়বে,” তিনি বলেন।

মন্ত্রী আরও জানান যে বর্তমানে মোট গ্রাহকের ৪৬.৪৯ শতাংশ নিয়মিতভাবে মাসিক বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করছেন, যেখানে পূর্বে এই হার ছিল ৪২.২৮ শতাংশ। এই সংখ্যা ধীরে ধীরে আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *