আগরতলা, ফেব্রুয়ারী ১৫ঃআজ এক ঐতিহাসিক মুহূর্তের সাক্ষী রইল ত্রিপুরা শান্তিনিকেতন মেডিকেল কলেজ, যখন আনুষ্ঠানিকভাবে ‘ইন্ডিয়া বুক অফ রেকর্ডস’-এ কলেজের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হলো। এই সম্মান অর্জিত হয়েছে ‘সর্বাধিক রাজ্যব্যাপী ভর্তি সংখ্যা নিয়ে প্রথম শিক্ষাবর্ষেই রেকর্ড’ বিভাগে। কলেজ কর্তৃপক্ষ, ছাত্র-ছাত্রী ও রাজ্যের স্বাস্থ্য শিক্ষার জগতে এটি এক বড় অর্জন বলে মনে করা হচ্ছে।
আজকের এই বিশেষ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ইন্ডিয়া বুক অফ রেকর্ডস-এর পক্ষে বিশিষ্ট চিকিৎসক ডাঃ ইয়াশ গৌতম, ত্রিপুরা পশ্চিমের জেলা শাসক ডাঃ ভিশাল কুমার, ত্রিপুরায় নিযুক্ত বাংলাদেশের অ্যাসিস্ট্যান্ট হাই কমিশনার আরিফ মোহাম্মদ, সৌগত পীট, কলেজের অধ্যাপকগণ, ছাত্র-ছাত্রী ও অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বরা। কলেজ চত্বরে আয়োজিত এক বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে এই ঘোষণা করা হয়।
ইন্ডিয়া বুক অফ রেকর্ডস-এর পক্ষ থেকে কলেজ কর্তৃপক্ষকে একটি বিশেষ সম্মানপত্র ও স্মারক প্রদান করা হয়।রেকর্ডের পথচলা ত্রিপুরা শান্তিনিকেতন মেডিকেল কলেজ ২০২৪ সালে তাদের প্রথম শিক্ষাবর্ষ শুরু করে। কলেজের লক্ষ্য ছিল রাজ্যের শিক্ষার্থীদের জন্য বিশ্বমানের মেডিকেল শিক্ষার সুযোগ তৈরি করা। প্রথম বর্ষেই এই কলেজে বিভিন্ন রাজ্য থেকে ব্যাপক সংখ্যক ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি হয়েছেন, যা দেশের অন্যান্য নতুন মেডিকেল কলেজগুলোর তুলনায় ব্যতিক্রমী ঘটনা।কলেজের সভাপতি ডঃ মলয় পীট বলেন, “এই রেকর্ড শুধু কলেজের নয়, গোটা ত্রিপুরার গর্বের বিষয়। আমরা উন্নতমানের মেডিকেল শিক্ষা প্রদান ও গবেষণায় আরও উন্নতি করতে চাই।
এই স্বীকৃতি আমাদের দায়িত্ব আরও বাড়িয়ে দিল।”প্রসঙ্গত উল্লেখ করা যেতে পারে যে প্রথম বছরে্ ত্রিপুরা শান্তিনিকেতন মেডিকেল কলেজে, ভর্তি হওয়া ছাত্রছাত্রীদের তালিকা দেখলে বোঝা যায়, এখানে ভারতবর্ষের প্রায় প্রতিটি কোণ (মোট ২১ রাজ্য থেকে) থেকে শিক্ষার্থীরা এসেছে। ত্রিপুরা থেকে সর্বাধিক ৪৭ জন ছাত্রছাত্রী এখানে ভর্তি হয়েছে। এছাড়াও পশ্চিমবঙ্গ, অন্ধ্রপ্রদেশ, অরুণাচলপ্রদেশ, উত্তরপ্রদেশ, অসম, বিহার, ছত্তিশগড়, গুজরাট, হরিয়ানা, , হিমাচলপ্রদেশ, ঝাড়খণ্ড, কেরালা, মহারাষ্ট্র, নাগাল্যান্ড, দিল্লি, ওডিশা, পাঞ্জাব, তামিলনাড়ু, তেলেঙ্গানা, এবং উত্তরাখণ্ড থেকে ছাত্রছাত্রীরা এখানে পড়তে এসেছে। এই সংখ্যা প্রমাণ করে যে, ‘ত্রিপুরা শান্তিনিকেতন মেডিকেল কলেজ’ জাতীয় স্তরের এক অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সেরা স্বাস্থ্য শিক্ষার কেন্দ্র হয়ে উঠতে চলেছে। প্রথম থেকেই এই কলেজ দেশের মেধাবী ছাত্রছাত্রী ও তাদের অভিবাবকদের আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছে।আজকের অনুষ্ঠানে ইন্ডিয়া বুক অফ রেকর্ডস-এর পক্ষে বিশিষ্ট চিকিৎসক ডাঃ ইয়াশ গৌতম অসামান্য এই স্বীকৃতির স্মারক, মেডেল ও মানপত্র তুলে দেন ত্রিপুরা শান্তিনিকেতন মেডিকেল কলেজের শিশুরোগ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডাঃ নীলরতন মজুমদারের হাতে। আজকের এই কৃতিত্ব অর্জনে কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরাও অত্যন্ত উচ্ছ্বসিত।
সেই উচ্ছাস তাদের সাংস্কৃতিক পরিবেশনায় ফুটে ওঠে। এদিন তারা ২১টি রাজ্যের সাংস্কৃতিক ও জীবন চর্চার বৈশিষ্ট্য তুলে ধরে। ত্রিপুরা পশ্চিমের জেলা শাসক ডাঃ ভিশাল কুমার বলেন, “ত্রিপুরার মতো ছোট রাজ্যের জন্য এটি একটি বড় প্রাপ্তি। এ বিষয়ে আমি কলেজের সভাপতি মলয় পীটকে বিশেষ কৃতজ্ঞতা জানাতে চাই। তার জন্যই এটা সম্ভব হয়েছে। দেশের আর কথাও এমনটা হয়েছে বলে আমার জানা নেই। এই কলেজের মাধ্যমে মেডিকেল শিক্ষার পাশাপাশি স্বাস্থ্য পরিষেবা ও কর্মসংস্থান বিষয়েও অগ্রগতি হবে। ভবিষ্যতে আরও উন্নতির দিকে এগিয়ে যেতে সরকারের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সহায়তা করা হবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ত্রিপুরা শান্তিনিকেতন মেডিকেল কলেজের এই সাফল্য রাজ্যের স্বাস্থ্যখাতকে আরও সমৃদ্ধ করবে এবং আগামী দিনে আরও বেশি শিক্ষার্থীকে এই কলেজের প্রতি আকৃষ্ট করবে।“এই সম্মাননা শুধু কলেজের জন্য নয়, গোটা ত্রিপুরা তথা উত্তর-পূর্ব ভারতের জন্য গর্বের বিষয়। ভবিষ্যতে এই কলেজ আরও নতুন নতুন রেকর্ড গড়বে, এমনটাই আমাদের প্রত্যাশা,” বলে জানালেন কলেজের সভাপতি ডঃ মলয় পীট।।