আগরতলা : জনজাতিদের সার্বিক কল্যাণকে অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করছে বর্তমান রাজ্য সরকার। জনজাতি অংশের মানুষের কৃষ্টি, সংস্কৃতি, পরম্পরা ও ঐতিহ্য রক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এই সরকার।

আজ সন্ধ্যা রাতে গোমতী জেলার উদয়পুরের নাতিনটিলায় আয়োজিত ওয়াঙ্গালা উৎসবের উদ্বোধন করে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা বলেন, সারা ভারতবর্ষে জনজাতি গোষ্ঠীর সংখ্যা প্রায় ৭০০। আমাদের ত্রিপুরায় ১৯টি জনজাতি গোষ্ঠী রয়েছে। এছাড়াও অনেকগুলি উপগোষ্ঠী রয়েছে। এর সংখ্যা প্রায় ৪০ এর মতো। আমাদের সরকার বারবার চেষ্টা করছে এই উপগোষ্ঠীগুলি যাতে হারিয়ে না যায়। সরকার তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের মাধ্যমে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। জনজাতি গোষ্ঠীর সমাজপতিদের সাম্মানিক প্রদানের ব্যবস্থা করেছে এই সরকার।

আমাদের সরকার আসার পর তাদের ২,০০০ টাকা করে সাম্মানিক প্রদানের ব্যবস্থা হয়। যদিও আগের সরকার এবিষয়ে কোন চিন্তাভাবনা করে নি। কিছুদিন আগে ক্যাবিনেটে সিদ্ধান্ত নিয়ে তাদের সাম্মানিক ভাতা ৫,০০০ টাকা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সমাজপতিদের পাশাপাশি অন্যান্য জনজাতি গোষ্ঠীর যাদের সমাজপতি নেই, তাদের প্রধান বা সর্দারদেরও ৫,০০০ টাকা করে সাম্মানিক প্রদানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এজন্য জেলাশাসকদের প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেওয়া হয়। আলোচনায় মুখ্যমন্ত্রী আরো বলেন, সংস্কৃতির মাধ্যমে আমরা নিজেদের চিনতে পারি, বুঝতে পারি।

আমাদের কৃষ্টি, সংস্কৃতি, পরম্পরা এরমধ্যেই লুকিয়ে আছে। কাজেই এগুলিকে হারিয়ে যেতে দেওয়া যাবে না। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বারবার বলছেন সবকা সাথ, সবকা বিকাশ, সবকা বিশ্বাস, সবকা প্রয়াস। প্রতিটি মানুষকে, প্রতিটি গোষ্ঠীকে শ্রেষ্ঠত্বের দিকে ধাবিত করতে না পারলে সমাজ পরিবর্তন কোনদিন সম্ভব হবে না। আমি জনজাতি গোষ্ঠীর প্রত্যেকটি কার্যক্রমে উপস্থিত থাকার চেষ্টা করি।

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ওয়াঙ্গালা উৎসব গারো জনজাতিদের অন্যতম প্রধান উৎসব। এর মানেই হচ্ছে নবান্ন উৎসব। ফসল তোলার পর আরাধ্য দেবতার কাছে প্রথম উৎসর্গ করা হয়। আগামীদিনেও যাতে ভালো ফসল হয় সেই উদ্দেশ্যে আরাধ্য দেবতার কাছে প্রার্থনা করা হয়। আগে ৭ দিন ধরে পুজো হতো।

এখন সেটা দুদিন করা হয়েছে। ডাঃ সাহা বলেন, এবার লক্ষী পূজা ও দেওয়ালি রবিবার দিন পড়েছে। তাই এই উৎসব যাতে ভালোভাবে উদযাপন করা যায় সেজন্য সোমবার ছুটি ঘোষণার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আর এটাই হচ্ছে সাধারণ মানুষের প্রতি সরকারের দায়বদ্ধতা। এরআগেও গড়িয়া পুজোতে একদিনের ছুটি ছিল। আর আমরা সেটা বাড়িয়ে দুদিনের করেছি। সংগ্রঙমা পুজোর দিনেও রেস্ট্রিক্টেড হলিডে হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। আজকেও গারো সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে রেস্ট্রিক্টেড হলিডের জন্য আবেদন করা হয়েছে। নিশ্চয় সেটা বিবেচনা করা হবে।

মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা তাঁর বক্তব্যে আরো বলেন, আজ এখানে এসে শুনলাম প্রায় ২০ হাজারের অধিক গারো সম্প্রদায়ের মানুষের বসবাস রয়েছে ত্রিপুরায়। শিক্ষার দিক থেকে প্রায় ৯২% রয়েছে তারা। যা ভাবা যায় না। কিছুদিন আগে তৃতীয় পূর্ণ সাক্ষর রাজ্য হিসেবে ঘোষিত হয়েছে ত্রিপুরা। ইউনেস্কোর গাইডলাইন মেনে এই স্বীকৃতি অর্জন করেছে ত্রিপুরা। কেন্দ্র ও রাজ্যের বর্তমান সরকার বিকশিত ত্রিপুরা এবং বিকশিত ভারতের লক্ষ্যে সকল সম্প্রদায়ের সার্বিক উন্নয়নে বহুমুখী প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করছে। শিক্ষা, রাস্তাঘাট, পানীয়জল, স্বাস্থ্য সহ বিভিন্ন পরিকাঠামোগত উন্নয়নে রাজ্য সরকার সমানভাবে গুরুত্ব দিচ্ছে। তিনি উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি স্বাধীনতা সংগ্রামী ভগবান বীর বিরসা মুন্ডার জন্মদিনকে ‘জনজাতি গৌরব দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করেছেন।

অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অর্থমন্ত্রী প্রণজিৎ সিংহ রায়, বিধায়ক অভিষেক দেবরায়, বিধায়ক জিতেন্দ্র মজুমদার, গোমতী জিলা পরিষদের সভাধিপতি দেবল দেবরায়, উদয়পুর পুর পরিষদের চেয়ারম্যান শীতল চন্দ্র মজুমদার, গোমতী জেলার পুলিশ সুপার ডা. কিরণ কুমার কে, অতিরিক্ত জেলাশাসক ও সমাহর্তা সুভাষ আচার্য, ত্রিপুরা গারো ইউনিয়নের সভাপতি সুভাষ মারাক, উপদেষ্টা শান্তি চিরাং, উপদেষ্টা সুধীন সাংমা সহ অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিগণ।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *