আগরতলা: জনজাতি এলাকার উন্নয়ন ছাড়া ত্রিপুরার উন্নয়ন সম্ভব নয় এবং সেই লক্ষ্যে রাজ্য সরকার ২০২৫-২৬ আর্থিক বছরে জনজাতি এলাকার উন্নয়নের জন্য বাজেট থেকে ৪০% এর অধিক বরাদ্দ রেখেছে। আজ ধলাই জেলার ছৈলেংটা বাজার মাঠে আয়োজিত প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ব্রু প্রার্থীদের রাজ্যভিত্তিক টুলকিট বিতরণ এবং ভার্চুয়ালি বিভিন্ন প্রকল্পের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা।

ভার্চুয়ালি উদ্বোধন হওয়া প্রকল্পগুলির মধ্যে রয়েছে – ছামনু দ্বাদশ স্কুলের নতুন ভবন, ছামনু ফায়ার স্টেশনের নতুন ভবন, মনু আরডি ডিভিশনের অধীন এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার অফিসের নতুন ভবন এবং মনুতে রাস্তার ধারে সৌন্দর্যায়ন সুবিধা নির্মাণ।

অনুষ্ঠানে উদ্বোধকের বক্তব্যে মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা বলেন, এই কার্যক্রমের শুরুতে স্বাবলম্বন যোজনায় ৬টি অটো রিক্সার ফ্ল্যাগ অফ করেছি। এই প্রকল্পে বেনিফিসিয়ারীদের প্রায় ১ লক্ষ টাকার মতো সাবসিডি দেওয়া হয়। আর ব্যাংক লোনের বাকি অর্থ খুব কম সুদে দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী কৌশল্য যোজনা এবং মুখ্যমন্ত্রী দক্ষতা যোজনা এই দুটো প্রকল্প মিলে বিভিন্নভাবে রিয়াং ভাইবোনদের দক্ষতা উন্নয়নের জন্য কাজ করা হচ্ছে।

আজ থেকে কয়েক মাস আগে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ আমবাসায় এসে রিয়াং শরণার্থীদের পুনর্বাসন কেন্দ্র পরিদর্শন করতে এসেছিলেন। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তাদের দক্ষতা উন্নয়ন করার জন্য আমাদের নির্দেশ দিয়েছিলেন। আজ এখানে এসে সেই বিষয়টি প্রত্যক্ষ করেছি। আমি তাদের সঙ্গে কথা বললে তারা আমাদের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।

টুলকিট বিতরণ কার্যক্রমের মাধ্যমে তাদের আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি পাবে এবং আয়ের উৎস খুঁজে পেলে উন্নয়নও হবে। কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে আমাদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য গুরুত্ব দিতে হবে। আমরা প্রধানমন্ত্রীর মার্গ দর্শনে দক্ষতা উন্নয়নের লক্ষ্যে কাজ করছি। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা সবাই জানি যে মিজোরাম থেকে উদ্বাস্তু হয়ে আসা রিয়াং শরণার্থীরা দীর্ঘ ২৩ বছর ধরে কি দুর্বিষহ অবস্থায় ছিলেন।

এরআগে অনেক সরকার ছিল, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ছিল। কিন্তু শুধু কুম্ভীরাশ্রু ছাড়া কাজের কাজ কিছু হয়নি। কিন্তু ২০১৮ সালে ভারতীয় জনতা পার্টির সরকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর মানবিক দৃষ্টিভঙ্গির নিরিখে তাদের সমস্যা সমাধান করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। আমাদের সরকার আপনাদের সাথে আছে এবং আপনাদের উন্নয়নের জন্য কাজ করছে।

এই সরকার মানুষকে স্বাবলম্বী করতে কাজ করছে। আমরা চাই তাদের আর্থ সামাজিক উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির। যখন ব্রু রিয়াংদের জন্য চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, তখন ধারাবাহিক আলোচনার ভিত্তিতে ১২টি স্থানে তাদের পুনর্বাসন প্রদান করার ব্যবস্থা হয়। বর্তমানে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ৪৪৫ জনকে প্লেসমেন্ট দেওয়া হয়েছে। আমরা ৮৯৫ জনকে টুলকিট এবং ২০০ জনকে ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদান করেছি। এজন্য ১.৪৫ কোটি টাকা ব্যয় হয়।

মুখ্যমন্ত্রী জানান যে ত্রিপুরা স্কিল এন্ড এন্টারপ্রেনারশিপ পলিসি ২০২৪ গত বছর প্রণয়ন করা হয়েছে। যার মূল লক্ষ্য হচ্ছে কর্মসংস্থান প্রদান করা। এই লক্ষ্যকে বাস্তবায়ন করতে ৩৫,০০০ নতুন প্রার্থী এআই, রিনিউবেল এনার্জি, আইটি সার্ভিস এবং হাসপাতাল সেক্টরের উপর নজর রেখে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন।

ত্রিপুরা এমন একটি রাজ্য যেখানে আমরা দক্ষ কর্মীকে চিহ্নিত করছি এবং তাদের জাপানে পাঠানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে ৫ জন যুবকে পাঠানো হয়েছে, ৪ জন খুব সহসাই রওনা হয়ে যাবে। এছাড়াও ৬০ জন জাপানি ভাষা শিখছেন। অথচ বিরোধীরা সব সময় বলেন যে বর্তমান সরকার চাকরি দিচ্ছে না। আমি তাদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই আমার বক্তব্য শুনুন এবং নেতিবাচক প্রচারণা করবেন না।

আলোচনায় মুখ্যমন্ত্রী আরো বলেন, ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষে মোট বাজেটের মধ্যে জনজাতি এলাকার উন্নয়নের জন্য ৬,৬৪৫ কোটি টাকা প্রদান করা হয়েছে, যা প্রায় ৩৯.০৬%। ২০২৫-২৬ সালে আমরা শিক্ষা, খেলাধুলা, চিকিৎসা ইত্যাদি ক্ষেত্রে জনজাতি এলাকার উন্নয়নের জন্য বাজেটের ৪০% এর অধিক বরাদ্দ রেখেছি। আমরা জনজাতি এলাকার জন্য এক্সটার্নালি এইডেড তহবিলও নিয়েছি। কারণ জনজাতি এলাকার উন্নয়ন ছাড়া ত্রিপুরার উন্নয়ন সম্ভব নয়।

অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রী সান্তনা চাকমা, বিধায়ক শম্ভু লাল চাকমা, ধলাই জেলার সভাধিপতি সুস্মিতা দাস, শিল্প ও বাণিজ্য দপ্তরের সচিব কিরণ গিত্যে, ধলাই জেলার জেলাশাসক বিবেক এইচ বি, দক্ষতা উন্নয়ন দপ্তরের অধিকর্তা প্রদীপ কে সহ অন্যান্য নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি ও পদস্থ আধিকারিকগণ।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *