আগরতলা, ১৩ নভেম্বর: রাজ্যের মানুষ অশান্তি চায় না। সকলে চায় জাতি ও জনজাতি উভয় সম্প্রদায়ের মানুষ ঐক্যবদ্ধ থাকতে। আজ ধলাই জেলার শান্তিরবাজারে সাম্প্রতিক হিংসাত্মক ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে তাদের আর্থিক সহায়তার ঘোষণা দেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা। পরিদর্শন কালে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন ধলাই জেলার সভাধিপতি সুস্মিতা দাস, বিধায়ক মনোজ কান্তি দেব, রাজ্য সরকারের সচিব, ধলাই জেলার জেলাশাসক সহ অন্যান্য পদস্থ আধিকারিকগণ।
ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা বলেন, গত ২৩ অক্টোবর ত্রিপুরা সিভিল সোসাইটির নামে একটা বনধ ডাকা হয়। পরবর্তী সময়ে শান্তিরবাজারে যেটা না হওয়ার সেটা হয়েছে। এই ঘটনা একটা চক্রান্ত ছাড়া আর কিছু না। এরআগেও গন্ডাতুইসা, ধর্মনগর সংলগ্ন সহ বিভিন্ন জায়গায় অনভিপ্রেত ঘটনা হয়। সাধারণ মানুষ কোন অবস্থায় এসব ঘটনা চায় না। সেদিন শান্তিরবাজারে এই ঘটনার পর সারা রাত ধরে আমি মনিটর করেছি। উচ্চপদস্থ পুলিশ আধিকারিকদের ঘটনাস্থলে পাঠানোর ব্যবস্থা করেছি। আর ২৩ তারিখই ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ১৬৩ ধারা লাগু করার ব্যবস্থা হয়। যা ৩১ অক্টোবর প্রত্যাহার করা হয়।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ত্রিপুরায় জাতি জনজাতি মিলে আমাদের একসাথে থাকতে হবে। কিন্তু কিছু স্বার্থান্বেষী লোক এটা চায় না। তাই আমাদের অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে। যারা এধরণের ঘটনায় যুক্ত তাদের কোন অবস্থায় ছাড় দেবে না সরকার। সে যেই হোক না কেন। আমার কাছে খবর রয়েছে শান্তিরবাজারের ঘটনায় ৭ জন গ্রেপ্তার হয়েছে। এক্ষেত্রে আইন আইনের পথে চলবে। উত্তেজনা দিয়ে কোন বিষয়ের সমাধান করা সম্ভব নয়। সেই সঙ্গে এসকল ঘটনায় সরকারের সদিচ্ছা বা প্রচেষ্টা আছে কিনা সেটা দেখতে হবে। এই ঘটনায় আহতদের শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নিতে আমি নিজেও হাসপাতালে গিয়েছি। সরকারের তরফে যা যা করণীয় সেটা করা হচ্ছে। গাইডলাইন মেনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এখানে একটা পুলিশ স্টেশন দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। সেক্ষেত্রেও একটা সুনির্দিষ্ট গাইডলাইন রয়েছে। এনিয়ে আমি ডিজির সঙ্গে কথা বলবো। এছাড়াও যেসমস্ত দাবি উত্থাপন করা হয়েছে সেনিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলবো।
মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা আরো জানান, শান্তিরবাজারের ঘটনা খতিয়ে দেখতে নেতা, মন্ত্রীদের সহ একটা টিম এসেছিল। তারা পুরো রিপোর্ট আমার কাছে পেশ করেছেন। আর আজ এখানে একটা কার্যক্রমে এসে আমি এখানকার লোকজনের সঙ্গে কথা বলতে এসেছি। এই ঘটনা অত্যন্ত দুঃখের ও পরিতাপের বিষয়। ঘটনায় কারোর দোকান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, আবার কারোর উপর প্রাণঘাতী হামলা হয়েছে। এবিষয়ে আমি জেলাশাসকের সঙ্গে কথা বলেছি। মুখ্যসচিবের সঙ্গেও কথা বলে তাদের কিভাবে আইন মেনে সহায়তা করা যায় সেটা দেখতে বলেছি। গাইডলাইনের বাইরেও আমরা কিছু করার উদ্যোগ নিয়েছি।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এখানে যারা জাতি ও জনজাতি গোষ্ঠীর রয়েছেন – তারা সবাই মিলে শান্তি বৈঠক করেছেন। এটা খুবই ভালো উদ্যোগ। মানুষ চায় না যে কোন জায়গায় অশান্তি হোক। এধরণের ঘটনার যাতে পুনরাবৃত্তি না হয় সেদিকে নজর রাখতে হবে আমাদের। এই ঘটনায় আইন মেনে যতটুকু করা সম্ভব, সেটা করা হবে। এখানে যাতে শান্তি বজায় থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
এদিন ক্ষতিগ্রস্ত লোকজন ও ব্যবসায়ীদের জন্য একটি ত্রাণ প্যাকেজ ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা।
তিনি জানান, সরকার সম্পূর্ণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ি এবং দোকানের জন্য প্রত্যেককে ৩ লক্ষ টাকা, এর পরের পর্যায়ে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ১.৫ লক্ষ টাকা এবং আংশিক ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ১৫,০০০ টাকা প্রদান করা হবে।
মুখ্যমন্ত্রী আরও আশ্বাস দেন যে হিংসাত্মক ঘটনায় আহত ব্যক্তিদের প্রয়োজনীয় আর্থিক ও চিকিৎসা সহায়তা প্রদান করা হবে।
