আগরতলা: রাজ্যের বিদ্যুৎ মন্ত্রী রতন লাল নাথ আজ জানিয়েছেন যে, ত্রিপুরা “হাইড্রোজেন ভ্যালি হাব” গড়ে তোলার অনন্য সম্ভাবনা রয়েছে— যা গ্রিন হাইড্রোজেন মিশ্রণ ও রপ্তানির কেন্দ্র হিসেবে বিকশিত হতে পারে।

তিনি আরও বলেন, ক্ষুদ্র জলবিদ্যুৎ প্রকল্পগুলির প্রাক-সম্ভাব্যতা সমীক্ষা পরিচালনার জন্য পুনর্নবীকরণ শক্তি মন্ত্রণালয় (MNRE)-এর আর্থিক ও প্রযুক্তিগত সহায়তা অত্যন্ত প্রয়োজন।গুয়াহাটিতে আয়োজিত “উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় পুনর্নবীকরণ শক্তি মন্ত্রণালয় বিষয়ক আঞ্চলিক কর্মশালা”-য় বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি এই কথা বলেন। ওই অনুষ্ঠানে পিএম-কুসুম (PM-KUSUM) প্রকল্প বাস্তবায়নে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মধ্যে প্রথম স্থান অর্জন করে ত্রিপুরা। এ উপলক্ষে পুনর্নবীকরণ শক্তি মন্ত্রণালয় বিষয়ক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রহ্লাদ জোশির কাছ থেকে রাজ্যের পক্ষ থেকে সম্মানজনক জাতীয় পুরস্কার গ্রহণ করেন বিদ্যুৎ মন্ত্রী রতন লাল নাথ।

বক্তব্যে মন্ত্রী বলেন জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও সভ্যতার বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে জ্বালানির চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। ত্রিপুরা পাহাড়ি রাজ্য হওয়ায় ভৌগোলিক বিচ্ছিন্নতা এবং পরিকাঠামোগত সীমাবদ্ধতার কারণে উন্নয়নের পথে নানা বাধা রয়েছে।তিনি বলেন বিশ্বের বহু উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশ তাদের জ্বালানি মিশ্রণে পুনর্নবীকরণ শক্তির অংশ বাড়ানোর লক্ষ্যে কাজ করছে। ত্রিপুরা সরকারও এই ক্ষেত্রে একাধিক যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।

রাজ্যের বিদ্যুৎ বিভাগাধীন ত্রিপুরা পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি উন্নয়ন সংস্থা (TREDA)-র মাধ্যমে বিভিন্ন পুনর্নবীকরণ শক্তি প্রকল্প বাস্তবায়ন করে গ্রামীণ জনগণ ও দরিদ্র পরিবারের জীবিকায় উন্নতি, আয় বৃদ্ধি এবং সামগ্রিক সামাজিক-অর্থনৈতিক উন্নয়নের সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে।মন্ত্রী আরও জানান, রাজ্যের বিদ্যুৎ চাহিদা ও ভবিষ্যৎ প্রয়োজন বিবেচনা করে ত্রিপুরা সরকার বিকেন্দ্রীকৃত নবীকরণযোগ্য শক্তি কর্মসূচি যেমন — গ্রিড ও অফ-গ্রিড প্রকল্পের মাধ্যমে বিভিন্ন পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে পিএম-কুসুম (PM-KUSUM), পিএম-ডিভাইন (PM-DevINE), পিএম-সুর্য ঘর মুফত বিজলি যোজনা (PM-Surya Ghar Muft Bijli Yojana), গ্রামীণ বাজার আলোক জ্যোতি প্রকল্প (Grameen Baazar Alok Jyoti Prakalpa) এবং সোলার ও বায়োগ্যাস মাইক্রো-গ্রিড প্রকল্প, যা প্রত্যন্ত অঞ্চলে জ্বালানি সরবরাহে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

মন্ত্রী জানান, ৩ লক্ষ স্টাডি ল্যাম্প বিতরণ করা হয়েছে ৩,৩৩৫টি স্কুলে, ১৫,০০০ সোলার স্ট্রিটলাইট স্থাপন হয়েছে ১,০১২টি গ্রামীণ বাজারে, ৩০,০০০ সোলার স্ট্রিটলাইট বসানো হয়েছে গ্রামীণ সড়ক ও গুরুত্বপূর্ণ স্থানে, ১২৬টি সোলার হাই মাস্ট লাইট স্থাপন করা হয়েছে বাজার ও গুরুত্বপূর্ণ এলাকায়, ৬,০৫১টি সোলার পাম্প (PM-KUSUM B) স্থাপন করা হয়েছে ১২,১০২ একর জমির সেচের জন্য, ৫৮৪টি কৃষি পাম্প (PM-KUSUM C) সৌরায়িত হয়েছে, ৪৫৪টি সোলার পাম্প ব্যবহৃত হচ্ছে পানীয় জলের জন্য,এবং ২৮৯টি প্রত্যন্ত গ্রাম/অঞ্চল সৌর মাইক্রো-গ্রিডের মাধ্যমে আলোকিত হয়েছে।তিনি আরও জানান, পিএম-সুর্য ঘর মুফত বিজলি যোজনা প্রকল্পে এখন পর্যন্ত ১৬,৯৫১ জন ভোক্তা নিবন্ধিত হয়েছেন, ১,১৮৬টি পরিবারে মোট ৪.০ মেগাওয়াট ক্ষমতার সিস্টেম স্থাপন করা হয়েছে এবং ৯৮৮ জন ভোক্তা সরকারি ভর্তুকি পেয়েছেন।

এখন পর্যন্ত রাজ্যে মোট ৪৮.৫৩ মেগাওয়াট পুনর্নবীকরণ শক্তি উৎপাদন ব্যবস্থা স্থাপন হয়েছে এবং ২০৩০ সালের মধ্যে ৫০০ মেগাওয়াট লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।মন্ত্রী বলেন পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির ক্ষেত্রে রাজ্যে কাজের গতি বহুগুণ বেড়েছে। এই খাতে ৮১৩.৪৭ মেগাওয়াট প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি করা জরুরি। অনুমান করা হচ্ছে, ২০৩০ সালের মধ্যে ত্রিপুরায় প্রায় ৪,২৩৪টি কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। এই লক্ষ্যে আর্থিক সহায়তা অত্যন্ত প্রয়োজন।”তিনি আরও বলেন সবুজ হাইড্রোজেন (Green Hydrogen) খাতে ভারত ইতিমধ্যেই বিশ্বে নেতৃত্বের স্থান নিয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকার ঘোষিত জাতীয় গ্রিন হাইড্রোজেন মিশন নীতি (National Green Hydrogen Mission Policy) অনুযায়ী ত্রিপুরা ‘হাইড্রোজেন ভ্যালি হাব’ হিসেবে বিকাশের সম্ভাবনা রাখে — যা দেশের জন্য এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।

শেষে মন্ত্রী জানান, উত্তর-পূর্বে পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি খাতের উন্নয়নের জন্য জনবল বৃদ্ধি, সক্ষমতা উন্নয়ন এবং একটি নতুন আঞ্চলিক পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি নীতির প্রয়োজন রয়েছে, যাতে বেসরকারি খাতকে আকৃষ্ট করে গ্রামীণ জীবিকা ও ডি-আর-ই (DRE) অ্যাপ্লিকেশনের বিকাশ ঘটানো যায়।উক্ত অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের বিদ্যুৎ সচিব অভিষেক সিং এবং ট্রেডা-র ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক দেবব্রত শুক্ল দাস।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *