আগরতলা: বিদ্যুৎ ছাড়া উন্নয়ন সম্ভব নয়—এই বার্তা তুলে ধরে ত্রিপুরা বিদ্যুৎ দপ্তর সারা রাজ্যে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে আধুনিকীকরণের পথে এগোচ্ছে।
আজ আগরতলার বোধজংনগরে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বিদ্যুৎ মন্ত্রী রতন লাল নাথ ৯টি ১৩২ কেভি ট্রান্সমিশন লাইনের এইচটিএলএস কন্ডাক্টর পুনর্নির্মাণ প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এই প্রকল্পে ব্যয় হবে প্রায় ১২৬ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। ত্রিপুরা পাওয়ার ট্রান্সমিশন লিমিটেড (TPTL)-এর উদ্যোগে এবং ডোনার মন্ত্রকের বিশেষ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থায়নে কাজটি সম্পন্ন হবে।মন্ত্রী জানান, এই অবকাঠামো উন্নয়ন বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থাকে আরও আধুনিক ও দক্ষ করে তুলবে।
পাশাপাশি তিনি উল্লেখ করেন, আগামী ২০৩১-৩২ অর্থবছরে ত্রিপুরার বিদ্যুৎ চাহিদা ৭০০ মেগাওয়াটে পৌঁছাবে—এই লক্ষ্যকে সামনে রেখেই লাইন আধুনিকীকরণ শুরু হয়েছে। আমরা এখন লাইন পরিবর্তন করছি, এবং এক বছরের মধ্যে সম্পূর্ণ কাজ শেষ হবে। এই ৯টি লাইন পরিবর্তিত হবে, যার ফলে চাহিদা বাঁচানো সম্ভব হবে।মন্ত্রী আরও উল্লেখ করেন, ২০১৮ সালের আগে রাজ্যে ১২টি ১৩২ কেভি সাবস্টেশন ছিল, যা বর্তমানে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২০-এ। আরও দুটি নতুন সাবস্টেশন তৈরি হচ্ছে। একইভাবে ৩৩ কেভি সাবস্টেশনের সংখ্যা ৪৪ থেকে বেড়ে হয়েছে ৭৫। বর্তমানে রাজ্যে গড়ে ২৩ ঘণ্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে। তবে বিদ্যুৎ চুরি, অতিরিক্ত লোড, ঝড়ঝঞ্ঝা এবং অন্যান্য নানা কারণে অনেক সময়ই নিরবিচ্ছিন্ন সরবরাহ ব্যাহত হয়।
উদাহরণ টেনে মন্ত্রী বলেন স্কুল তিন দিন বন্ধ থাকলে তেমন সমস্যা হয় না, কিন্তু বিদ্যুৎ এক ঘণ্টার জন্যও বন্ধ হলে বিশাল অসুবিধা দেখা দেয়। তিনি আরও বলেন, আগে ট্রেন কয়লার উপর নির্ভরশীল ছিল, পরে ডিজেল এলো, যা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। এখন বৈদ্যুতিক ট্রেনের যুগ শুরু হচ্ছে। ভবিষ্যতে যানবাহনও ক্রমে বৈদ্যুতিক হয়ে উঠবে। গ্যাস বা ডিজেলভিত্তিক যানবাহনের উপর নির্ভরতা কমে আসবে। তাই আমাদের সৌরশক্তির উপর গুরুত্ব দিতে হবে। আমরা PM Surya Ghar প্রকল্প চালু করেছি, কারণ গ্যাস একদিন শেষ হয়ে যাবে। নবায়নযোগ্য শক্তির দিকেই এখন এগোতে হবে ।
তিনি আরও জানান, শুধু সরকারের উদ্যোগ যথেষ্ট নয়, মানুষকেও স্বনির্ভর হতে হবে। আধুনিক প্রযুক্তি ও সুবিধা গ্রহণ করা জরুরি। স্মার্ট মিটার সেই আধুনিকতারই একটি অংশ, যা সবার জন্য উপকার বয়ে আনবে।এই আধুনিকীকরণের আওতায় যে নয়টি ট্রান্সমিশন লাইন পুনর্নির্মাণ করা হবে সেগুলো হলো— বোধজংনগর থেকে সুর্যমনিনগর, সুর্যমনিনগর থেকে সুর্যমনিনগর লিলো পয়েন্ট, সুর্যমনিনগর থেকে বোধজংনগর, পি.কে. বারী থেকে পি.কে. বারী লিলো পয়েন্ট, আমবাসা থেকে মনু (পি.কে. বারীর মাধ্যমে), পি.কে. বারী থেকে কুমারঘাট, আমবাসা থেকে কমলপুর, রুখিয়া থেকে উদয়পুর এবং রবীন্দ্রনগর থেকে নিপকো মনারচাক।
এই অনুষ্ঠানে বিদ্যুৎ মন্ত্রীর পাশাপাশি উপস্থিত ছিলেন বিধায়ক রতন চক্রবর্তী, পুরাতন আগরতলা পঞ্চায়েত সমিতির চেয়ারপার্সন ঝর্ণা রানি দাস, শান্তিপাড়া গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান গোপা দাস, আর.কে. নগর গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান অনু চন্দ্র দাস, TSECL-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিশ্বজিৎ বসু এবং TPTL-এর জেনারেল ম্যানেজার রঞ্জন দেববর্মা।