আগরতলা।। বিচার প্রক্রিয়া যাতে স্বচ্ছ, দ্রুত এবং সাধ্যের মধ্যে হয় সেদিকে বিশেষ নজর রাখতে হবে। মানুষ যাতে বিচার পেতে হয়রানির শিকার না হয় সেটা নিশ্চিত করতে হবে। এর পাশাপাশি রাজ্যের মানুষের আর্থ সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন করার লক্ষ্যে কাজ করছে সরকার।
আজ পশ্চিম জেলার মোহনপুর মহকুমায় সাব ডিভিশন্যাল জুডিশিয়্যাল ম্যাজিস্ট্রেট ও সিভিল জজ (জুনিয়র ডিভিশন) কোর্টের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা। অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা বলেন, আজ সাব ডিভিশন্যাল জুডিশিয়্যাল ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টের উদ্বোধন মোহনপুরের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশিকা মেনে এই কোর্ট ভবন তৈরির পরিকাঠামো করা হয়েছে। আমাদের আটটি জেলায় জেলা আদালত রয়েছে। রাজ্যের ২৩টি মহকুমার মধ্যে এখন পর্যন্ত প্রায় ১৫টি সাব ডিভিশন্যাল জুডিশিয়্যাল ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট হয়েছে। এরমধ্যে আজ মোহনপুরে নতুন সংযোজন হয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, মানুষ যাতে তাড়াতাড়ি বিচার প্রক্রিয়ার সুফল পায় এবিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি উন্নয়ন, পরিকাঠামো, নিরাপত্তা, আত্মনির্ভরতা ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে ব্যাপক গুরুত্ব দিয়েছেন। তিনি দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। আমাদের আরো উপরের দিকে যেতে হবে। দেশের গণতন্ত্র ব্যবস্থা চারটি স্তম্ভের উপর দাঁড়িয়ে আছে। এক্ষেত্রে বিচার বিভাগ একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ। দেশের উন্নয়নে বিচার বিভাগের একটা বড় দায়িত্ব রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর মার্গদর্শনে বিকশিত ত্রিপুরা ও বিকশিত ভারত গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ চলছে। গতকালই বিকশিত ত্রিপুরা ২০৪৭ এর নির্দেশিকা প্রকাশ করেছি আমরা। আর সেই দিশায় কাজ করছে সরকার।
মুখ্যমন্ত্রী আরো বলেন, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, সমস্ত গোষ্ঠীর উন্নয়ন, মহিলা ক্ষমতায়ন, সমাজ কল্যাণ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, মানব সম্পদ উন্নয়নের লক্ষ্যে নিরলসভাবে কাজ করছে বর্তমান সরকার। আর এসব একমাত্র সম্ভব হচ্ছে স্বচ্ছ ও সুশাসন নীতির কারণে। আগামীদিনে ত্রিপুরার ভবিষ্যত খুবই উজ্জ্বল। ২০২৩ – ২৪ অর্থবর্ষে জিএসডিপি প্রায় ১৪.২১% বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে ত্রিপুরা সারা দেশের মধ্যে টপ পারফর্মিং স্টেট হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। এটা আমাদের জন্য খুবই গর্বের বিষয়।
আর্থিক সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও পরিকাঠামো, শিক্ষা, স্বাস্থ্য পরিষেবা, বিচার বিভাগ সহ সমস্ত দপ্তরে উন্নয়নের লক্ষ্যে কাজ করছে সরকার। ত্রিপুরার জনসাধারণের আর্থ সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন করার লক্ষ্যে কাজ করছে সরকার। ডাঃ সাহা বলেন, মোহনপুর মহকুমায় এখন ব্যাপক উন্নয়ন হচ্ছে। বিচার প্রক্রিয়ার জন্য আগে অনেক পয়সা খরচ করে আগরতলায় যেতে হতো এখানকার মানুষের। সেই জায়গায় এখন এখানেই বিচার পাবেন মানুষ। ত্রিপুরা ক্ষুদ্র রাজ্য হলেও এর সৌন্দর্যে আকৃষ্ট হয়ে পড়েন বাইরের মানুষ। ত্রিপুরায় অনুষ্ঠিত প্ল্যানারী সেশনে উত্তর পূর্বাঞ্চলের সমস্ত রাজ্যপাল, মুখ্যমন্ত্রী এবং আধিকারিকগণ এসেছিলেন। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহও এসেছিলেন। আর এধরণের প্ল্যানারী সেশন বারবার যাতে ত্রিপুরায় হয় সেকথা বলছিলেন তাঁরা। কারণ স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে আমরা মন্ত্রী থেকে শুরু করে আধিকারিক এবং অন্যান্যরা একটা টিম হিসেবে কাজ করছি এখানে। প্রধানমন্ত্রী আমাদের স্বপ্ন দেখতে শিখিয়েছেন।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বিচার বিভাগের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে যা যা সহযোগিতার প্রয়োজন সেটা করা হবে। বিচার প্রক্রিয়া যাতে স্বচ্ছ, দ্রুত এবং সাধ্যের মধ্যে হয় সেদিকে নজর রাখতে হবে। মানুষ যাতে বিচার পেতে হয়রানির শিকার না হয় সেদিকে বিশেষ লক্ষ্য রাখতে হবে। এতে বিচার বিভাগের প্রতি মানুষের আস্থা আরো বৃদ্ধি পাবে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ত্রিপুরা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি এম এস রামচন্দ্র রাও, বিদ্যুৎ ও কৃষি মন্ত্রী রতন লাল নাথ, ত্রিপুরা হাইকোর্টের বিচারপতি টি অমরনাথ গৌড়, মুখ্যসচিব জে কে সিনহা, এডভোকেট জেনারেল শক্তিময় চক্রবর্তী, পুলিশের মহানির্দেশক অনুরাগ, আইন সচিব সঞ্জয় ভট্টাচার্য, বিচারক শুভাশিস শর্মা রায় সহ হাইকোর্ট, আইন দপ্তরের পদস্থ আধিকারিক ও বিশিষ্ট আইনজীবীগণ।