আগরতলা।।দেবী পক্ষের আনুষ্ঠানিক সূচনা হলো মহালয়ার মধ্যে দিয়ে । মহালয়ার পুণ্য প্রভাতে সাধারণত বিভিন্ন ধর্মীয় স্থানে, মন্দিরে অর্থাৎ কোনো পবিত্র স্থানে পূর্বপুরুষদের আত্মার শান্তির জন্য তর্পণ করা হয়ে থাকে।
এছাড়া, ভোর থেকেই বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্রের গাওয়া দেবীর স্তুতি ‘মহিষাসুরমর্দিনী’ শোনার মধ্যে দিয়ে মানুষের ঘুম ভাঙে। অগণিত মানুষ এদিন প্রাতঃভ্রমণে বের হন। মহালয়ার মধ্যে দিয়ে শুরু হলো দেবী পক্ষের। শারদীয় দুর্গোৎসবের আগমনী বার্তা নিয়ে মহালয়ার দিনটি বাঙালির জীবনে এক বিশেষ আবেগের স্থান দখল করে আছে। রবিবার ভোর থেকেই রাজধানী আগরতলায় তার বিশেষ আমেজ চোখে পড়েছে।
শহরের বিভিন্ন স্থানে উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা যায়। ভোরের আলো ফুটতেই কিশোর থেকে প্রবীণ সব বয়সীরা বেরিয়ে পড়েন প্রাতঃভ্রমণে। হাওয়ায় মিশে থাকে ভোরবেলার ভক্তিমূলক সংগীতের সুর, মায়ের আগমনের আবহ ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। রেডিও, টেলিভিশনে ভেসে আসা চণ্ডীপাঠের ধ্বনি যেন শহরের প্রতিটি কোণে উৎসবের আবেশ ছড়িয়ে দেয়।
বিশেষ করে আগরতলার কলেজ টিলা এলাকার প্রাত ভ্রমনকারীদের উপচে পড়া ভিড় দেখা যায়। ভোর থেকেই সাধারণ মানুষ জমায়েত হন দেবীপক্ষের সূচনা উপলক্ষে। তবে আগের মতো ভোর রাতে রেডিওতে বীরেন্দ্রকিশোর ভদ্রের কণ্ঠে মহিষাসুরমর্দিনী এখন আরখুব একটা শোনা যায় না। এখন অনেকেই তা মোবাইলে শোনেন। সময় বদলেছে, কিন্তু মহালয়ার সঙ্গে মানুষের আবেগ আজও অটুট।
এদিকে প্রতিবারের মতো এদিন রাজধানীর ঐতিহ্যবাহী লক্ষ্মীনারায়ণ বাড়ির দিঘি সহ বিভিন্ন দীঘি ও ঘাটে পূর্ব পুরুষদের উদ্দেশে পিতৃ তর্পণ করেন অনেকে । ভোর থেকেই মানুষ তর্পনের জন্য ভিড় জমায়। দেবীপক্ষের আগে ১৫ দিন ধরে চলে পিতৃপক্ষ। ভাদ্র মাসের পূর্ণিমা তিথি থেকে আশ্বিন মাসের কৃষ্ণপক্ষের অমাবস্যা তিথি হল পিতৃপক্ষের সময়।
তারপরেই শুরু হয়ে যায় দেবীপক্ষ। পিতৃপক্ষের সময় পূর্বপুরুষদের স্মরণ করা হয়, তাঁদের সন্তুষ্ট করার জন্য এবং আত্মার শান্তির জন্য, তর্পণ, পিন্ড দান, শ্রাদ্ধ কর্ম করা হয়ে থাকে। শাস্ত্র মতে, পূর্বপুরুষরা এই সময়ে মর্ত্যে বংশধরদের থেকে জল গ্রহণ করেন। সেই দিকে লক্ষ রেখে আজ সকাল থেকেই বিভিন্ন দিঘী তথা জলাশয়ে দেখা যায় পিতৃ পুরুষের উদ্দেশ্যে তর্পণ করার দৃশ্য। শুধু তর্পণ নয়, মহালয়ার এই দিনে মানুষের মধ্যে উৎসবের আনন্দও চোখে পড়ে।
পরিবার-পরিজন নিয়ে অনেকে বেড়াতে বেরিয়ে পড়েন। শিশু থেকে বৃদ্ধ – প্রত্যেকের মনে আজ এক অদ্ভুত উচ্ছ্বাস। আগরতলার রাস্তাঘাটে, পার্কে, এমনকি চায়ের দোকানেও মহালয়ার আলোচনা জমে ওঠে। পূজার পরিকল্পনা নিয়ে সবার মধ্যে চলে হাসি-গল্প ।