আগরতলা ।।শিক্ষা ক্ষেত্রে ত্রিপুরায় অনেক উন্নতি হয়েছে। এখন রাজ্যে প্রচুর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হয়েছে। ত্রিপুরার ছেলেমেয়েদের মধ্যে প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। ত্রিপুরা রাজ্যে এখন একটা এডুকেশন হাব তৈরি করা হয়েছে। রাজ্যে আরো নতুন ৩টি জেনারেল কলেজ গড়ে তোলা হবে। আজ হাঁপানিয়া আন্তর্জাতিক মেলা প্রাঙ্গণে আয়োজিত মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় শীর্ষ ১০ – স্থান অধিকারী ছাত্রছাত্রীকে সম্বর্ধনা প্রদান অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা।

ত্রিপুরা মধ্যশিক্ষা পর্ষদ ও বিদ্যাজ্যোতি পরিচালিত স্কুলের কৃতি ছাত্রছাত্রীদের এই সম্মাননা প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী তথা শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ সাহা বলেন, আজ এখানে ২০২৫ মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় শীর্ষ ১০ – স্থান অধিকারী ছাত্রছাত্রীকে সম্বর্ধনা প্রদান করা হচ্ছে। আজ আমি সত্যিই আনন্দিত। এই ছাত্রছাত্রীদের জন্য ত্রিপুরাবাসী খুবই গর্বিত। আজ যারা ভালো ফলাফল করেছে আগামীদিনে তারাই ত্রিপুরার ভবিষ্যত। দেখা গেছে যেসকল ছাত্রছাত্রীরা ভালো ফল করেছে বাস্তব ক্ষেত্রেও তারা সফল হয়েছে। শুধু ত্রিপুরায় নয়, ভারতবর্ষে এমনকি বিদেশেও তারা স্থান করে নিয়েছে। আজ এখানে মোট ৮২ জনকে সম্বর্ধনা প্রদান করা হবে। এরমধ্যে টিবিএসই’র মাধ্যমিকে ২৫ জন ও উচ্চ মাধ্যমিকে ২০ জন এবং সিবিএসই’র বিদ্যাজ্যোতির অধীনে মাধ্যমিকে ২২ জন ও উচ্চ মাধ্যমিকে ১৫ জন। গত বছর বিদ্যাজ্যোতির ফলাফল নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছিল। কিন্তু এবার অনেক ভালো ফলাফল হয়েছে। কোন কোন জায়গায় ঘাটতি বা ত্রুটি ছিল সেগুলি পূরণ করেই এবার সাফল্য এসেছে। যারা ভালো ফল করেছে আমি তাদের উজ্জ্বল ভবিষ্যত কামনা করছি। বক্তব্যে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, শুধু পুঁথিগত বিদ্যা অর্জনের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে চলবে না। মানুষ আমাদের কাছ থেকে অনেক আশা করে সমাজের জন্য কাজ করার। তাই শুধু আত্মকেন্দ্রিক হলে চলবে না। রাজ্যে আগে শিক্ষা ক্ষেত্রে তেমন সুযোগ সুবিধা ছিল না। কিন্তু এখন ত্রিপুরায় প্রচুর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হয়েছে। মাদক মুক্ত ত্রিপুরা গড়ে তুলতে ছাত্রছাত্রীদেরও বিশেষ ভূমিকা পালন করতে হবে। এক্ষেত্রে সব জায়গায় তাদেরও সতর্ক নজর রাখতে হবে। পরীক্ষা সম্পর্কিত বিষয়ে ছাত্রছাত্রীদের চাপ কমানোর লক্ষ্যে ‘পরীক্ষা পে চর্চা’ কার্যক্রম শুরু করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। আর পড়াশুনার পাশাপাশি জীবন শৈলীর দিকেও নজর রাখতে হবে। পড়াশুনার সাথে সাথে খেলাধুলার প্রতিও নজর দিতে হবে।

তথ্য দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী জানান, ত্রিপুরায় শিক্ষা দপ্তর এনসিইআরটি পাঠক্রম চালু করেছে। বিভিন্ন স্কুলকে ইংলিশ মিডিয়ামে উন্নীত করা হয়েছে। সুপার ৩০ প্রকল্পে ২০২৪ – ২৫ অর্থবর্ষে ১ জন আইআইটি, ৩ জন এনআইটি এবং ৩ জন এমবিবিএস এ সুযোগ পেয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মেধা পুরস্কার চালু করা হয়েছে। ট্যালেন্ট সার্চ এক্সামিনেশন চালু করা হয়েছে। ১২৫টি বিদ্যাজ্যোতি স্কুল চালু করা হয়েছে। পড়াশুনায় মেয়েদের উৎসাহিত করার জন্য বিনামূল্যে বাই সাইকেল দেওয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত ১,১২,৫০০ এর অধিক বাই সাইকেল ছাত্রীদের দেওয়া হয়েছে। প্রয়াস প্রকল্পে বিনামূল্যে ওয়ার্ক বুক দেওয়া হয়েছে। আরক্ষা কর্মীদের ছেলেমেয়েদের আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে। টিবিএসই পরীক্ষার আমূল সংস্কার করা হয়েছে। স্কুলগুলিতে স্মার্ট ক্লাশ, থিঙ্কারিং ল্যাব, আইসিটি ল্যাব চালু করা হয়েছে। প্রি প্রাইমারি ক্লাশ ও মিশন মুকুলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। পিএম শ্রী প্রকল্প ও অভিন্ন প্রশ্নপত্র চালু করা হয়েছে। ২০২৪ – ২৫ সালে শিক্ষা দপ্তর থেকে ৪৪টি স্কুলে নতুন ভবন নির্মাণে ব্যয় করা হয়েছে ১৫৩ কোটি টাকা। এছাড়া আরো প্রায় ৩০টি স্কুলে ২৬৪ কোটি টাকা ব্যয়ে পরিকাঠামো উন্নয়ন করা হবে। ২০২৫ সালে মাধ্যমিকে প্রায় ৩৪৫টি স্কুলে ১০০% পাশ করেছে। মোট পাশের হার ৮৬.৫৩%। উচ্চ মাধ্যমিকে ৩৯টি স্কুলে ১০০% পাশ করেছে। পাশের হার ৭৯.২৯%। মুখ্যমন্ত্রী আরো বলেন, ছাত্রছাত্রীদের গুণগত শিক্ষা প্রদানে রাজ্য সরকার সচেষ্ট রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রবর্তিত জাতীয় শিক্ষা নীতি রাজ্যের স্কুল কলেজগুলিতেও চালু করা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী কন্যা আত্মনির্ভর যোজনায় উচ্চ মাধ্যমিক উত্তীর্ণ কৃতি ১৪০ জন ছাত্রীকে বিনামূল্যে স্কুটি দেওয়া হয়েছে। ছাত্রীদের উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলতে সমস্ত সাধারণ ডিগ্রি কলেজে তাদের ফি মুকূব করা হয়েছে।

সবদিক দিয়ে শিক্ষা ক্ষেত্রের উন্নয়নে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে রাজ্য সরকার। অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষা দপ্তরের বিশেষ সচিব রাভেল হেমেন্দ্র কুমার, অধিকর্তা এন সি শর্মা সহ অন্যান্য পদস্থ আধিকারিকগণ।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *