আগরতলা : ড্রাগস পাচারকারীদের কোন অবস্থায় বরদাস্ত করা হবে না। তাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি নিয়ে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকার মাদকের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়ে কাজ করছে। ড্রাগসের বিরুদ্ধে সমাজের সকল অংশের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে লড়াই করতে হবে।

আন্তর্জাতিক মাদক বিরোধী দিবস ও বেআইনি পাচার রোধ করা নিয়ে আজ আগরতলার উমাকান্ত ময়দান থেকে আয়োজিত মোটর সাইকেল র‍্যালিতে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা। নেশামুক্ত ভারত অভিযানের অংশ হিসেবে এদিন এই কার্যক্রমে এক রক্তদান শিবিরেরও আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ডাঃ সাহা বলেন, ১৯৮৭ সালে রাষ্ট্রসংঘ এই অবৈধ ড্রাগস পাচার রোধ এবং এসম্পর্কে সচেতনতার জন্য আজকের দিনটিকে আন্তর্জাতিক মাদক বিরোধী দিবস ও বেআইনি পাচার রোধ দিবস হিসেবে পালন করার উদ্যোগ নেয়। আজকের তারিখে এই বিষয়টি খুবই প্রাসঙ্গিক। ত্রিপুরা ভৌগোলিক অবস্থানের নিরিখে তিনদিক দিয়ে আন্তর্জাতিক সীমান্ত বেষ্টিত এবং কিছু অংশ আসাম ও মিজোরামের সঙ্গে সংযোগ রয়েছে। এই অবস্থায় ত্রিপুরার ছেলেমেয়েদের টার্গেট করা এবং বাংলাদেশে ড্রাগস আনা নেওয়ার লক্ষ্যে করিডোর হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে। ড্রাগস পাচারকারীরা অর্থের জন্য ড্রাগস পাচার করছে। আর এতে আমাদের ছেলেমেয়েরা জড়িয়ে পড়ছে। কিন্তু তাদের কোন দোষ নেই। দেখা যায় এটা যখন ত্রিপুরায় আসছে তখন তারা ভিকটিম (শিকার) হয়। এই ভিকটিমদের চিকিৎসার খুবই প্রয়োজন। সেই লক্ষ্যে গত বাজেটে রাজ্য সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্যের ৮টি জেলায় মাদক মুক্তি কেন্দ্র (ডি এডিকশন সেন্টার) খোলার। প্রতিটি সেন্টারের জন্য প্রায় ২০ কোটি টাকা আর্থিক সংস্থান রাখা হয়েছে। ডোনার মন্ত্রক থেকে ত্রিপুরায় আরও বড় মাপের মাদক মুক্তি কেন্দ্র স্থাপনের জন্য প্রায় ১৯৮ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। সেখানে চিকিৎসক থেকে শুরু করে সমস্ত ধরণের ব্যবস্থা থাকবে। বিশ্রামগঞ্জে এই সেন্টারের ভূমিপুজন ইতিমধ্যে করেছি আমি।

বক্তব্যে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এখনো দুটো জায়গায় মাদক মুক্তি কেন্দ্র রয়েছে। এছাড়া বেসরকারি উদ্যোগে আরো কিছু সেন্টার রয়েছে। বেসরকারি উদ্যোগে যারা করেছেন তাদের জন্য কিছু নীতি নির্দেশিকা রয়েছে। কিছুদিন আগে বিধানসভায় সমস্ত মন্ত্রী ও বিধায়কদের নিয়ে এইচআইভি/ এইডস সম্পর্কিত বিষয়ে বৈঠক হয়েছিল। এইচআইভি যখন কোন ব্যক্তিকে আক্রমণ করে তখন সেটা পুরোপুরি নিরাময় করা সম্ভব হয় না। দেখা যায় যারা সিরিঞ্জের মাধ্যমে ড্রাগস ব্যবহার করে অধিকাংশ ক্ষেত্রে তারা এতে আক্রান্ত হয়। আমরা চেষ্টা করি দ্রুত সনাক্ত হলে সেইসব ব্যক্তিদের চিকিৎসা প্রদান করার। এইচআইভি/ এইডস রোধ করতে রাজ্যে এইডস কন্ট্রোল সোসাইটি বিভিন্ন কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। রেড রিবন ক্লাব স্কুল কলেজগুলিতে সংযোগ করা হয়েছে। এইচআইভিতে আক্রান্ত হলে শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। এইচআইভি কিংবা এইডসে আক্রান্ত হলে মৃত্যু হয় না। কিন্তু শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেলে ধীরে ধীরে জীবনিশক্তি কমে আসে। তাই এটা আমাদের জন্য খুবই উদ্বেগের বিষয়। বিশেষ করে কম বয়সের ছেলেমেয়েদের মধ্যে এধরণের প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

মুখ্যমন্ত্রী আরো বলেন, এইচআইভি/ এইডস এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ করতে ওএসটি’র ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ডাঃ সাহা বলেন, সেক্স এডুকেশন সম্পর্কেও আমাদের ছেলেমেয়েদের বুঝানো প্রয়োজন। কারণ এসব বিষয়ে তাদের অবগত না করলে আগামীদিনে একটা বিভীষিকাময় অবস্থা হতে পারে। আমরা এসব বিষয়ে কথা বলছি এবং বিভিন্ন স্কুল কলেজে সচেতনতা করা হচ্ছে। ড্রাগসের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি নিয়ে কাজ করছে রাজ্য সরকার। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেছেন যারা ড্রাগস পাচারকারী তাদেরকে কোন অবস্থায় ছাড়া হবে না। আমরাও সেভাবে ত্রিপুরায় যুদ্ধ ঘোষণা করেছি। ত্রিপুরায় ২০২৩ – ২৪ থেকে ২৪ – ২৫ এ ড্রাগস বাজেয়াপ্তের পরিমাণ ১০৩/১০৪% বৃদ্ধি পেয়েছে। ড্রাগস ধ্বংসের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে ১৩২%। পুলিশ, নিরাপত্তা সংস্থা এবং অন্যান্য এজেন্সিগুলি মাদকের বিরুদ্ধে কাজ করে যাচ্ছে। এর পাশাপাশি সাধারণ মানুষকেও মাদকের বিরুদ্ধে মোকাবিলায় সামিল হতে হবে। এবিষয়ে ছাত্রছাত্রী ও অভিভাবকদেরও সতর্ক হতে হবে। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় নেশামুক্ত ত্রিপুরা ও নেশামুক্ত ভারত গড়ে তোলা সম্ভব হবে।

এদিন আলোচনায় স্বেচ্ছা রক্তদানের প্রেক্ষাপট নিয়েও গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করেন মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা। তিনি বলেন, জনসংখ্যার অনুপাতে ১% রক্ত মজুত রাখতে হয়। গত বছর প্রায় ৪২ হাজার ব্লাড ইউনিট ছিল রাজ্যে। এবারও এই লক্ষ্য পূরণ হয়ে যাবে।

                                
অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাজ্য সরকারের মুখ্যসচিব জে কে সিনহা, রাজ্য পুলিশের মহানির্দেশক অনুরাগ, উত্তর পূর্বাঞ্চলের নার্কোটিক্স ব্যুরোর ডিডিজি আর সুধাকর, এন্টি নার্কোটিক্স টাস্ক ফোর্স হেড অব ত্রিপুরা এ আর রেড্ডি, স্বরাষ্ট্র সচিব অভিষেক সিং, গুয়াহাটির নার্কোটিক্স ব্যুরোর এডিশন্যাল ডিরেক্টর প্রকাশ রঞ্জন মিশ্র, পশ্চিম জেলার জেলাশাসক ড. বিশাল কুমার, পুলিশ সুপার ড. কিরণ কুমার কে সহ অন্যান্য পদস্থ আধিকারিকগণ। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর মোটর সাইকেল র‍্যালির ফ্ল্যাগ অফ করেন মুখ্যমন্ত্রী।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *