আগরতলা: জনজাতি অংশের মানুষের আর্থ সামাজিক অবস্থার উন্নয়নের জন্য নিরন্তর কাজ করে চলছে রাজ্যের বর্তমান সরকার। জনজাতিদের সার্বিক বিকাশে আগামীদিনে যা যা করার প্রয়োজন সেটা করবে রাজ্য সরকার। এর পাশাপাশি জনজাতিদের রীতিনীতি, কৃষ্টি সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য রাজ্য সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
শনিবার সন্ধ্যায় গোমতী জেলার করবুকের বাশি চন্দ্র পাড়া ইংলিশ মিডিয়াম দ্বাদশ স্কুলে আয়োজিত রাজ্যভিত্তিক বুইসু উৎসবের উদ্বোধন করে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা।
ত্রিপুরা চুবুলাই বুথু সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থার উদ্যোগে আয়োজিত এই উৎসবে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা বলেন, আজ বুইসু উৎসব উপলক্ষে প্রথমবার আসতে পেরে খুবই ভালো লাগছে। এতে আপনাদের সম্পর্কে জানতে পারলাম। আমি জনজাতিদের বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশগ্রহনের চেষ্টা করি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সবসময় বলছেন সবকা সাথ, সবকা বিকাশ, সবকা প্রয়াস, সবকা বিশ্বাসের কথা। আর এই দিশায় কাজ করছে রাজ্য সরকারও। ত্রিপুরী জনজাতিদের অন্যতম প্রধান উৎসব বুইসু। বিগত ২৩ বছর ধরে এই উৎসবের আয়োজন করা হচ্ছে। আমি প্রথমবার রাজ্যসভার সদস্য হিসেবে শপথ গ্রহণের পর দ্বিতীয় দিনে রাজ্যের ডার্লং সম্প্রদায় সম্পর্কে বক্তব্য রাখতে হয়েছে। আর এই বক্তব্যের পর অনেকে আমাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।
অনুষ্ঠানে বুইসু, বিজু ও নববর্ষ উপলক্ষে রাজ্যবাসীকে শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা। তিনি বলেন, জনজাতিদের বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী উৎসব রয়েছে যেমন - গড়িয়া, বুইসু, বিজু, হজাগিরি, ওয়াংগল সহ ইত্যাদি। এবারের বাজেটে করবুকে একটা কলেজ স্থাপনের জন্য আর্থিক সংস্থান রাখা হয়েছে। এতে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের জন্য অনেক সুবিধা হবে ছাত্রছাত্রীদের। আমরা বিগত ৩৫ বছরের রাজত্ব দেখেছি রাজ্যে। দেখেছি কংগ্রেসের শাসনও। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নরেন্দ্র মোদি দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই জনজাতিদের উন্নয়ন জোরদার হয়েছে। ত্রিপুরার জনজাতি গোষ্ঠীর প্রতিনিধি হিসেবে তেলেঙ্গানার রাজ্যপাল করা হয়েছে জিষ্ণু দেববর্মাকে। জনজাতিদের রীতিনীতি, কৃষ্টি সংস্কৃতি রক্ষায় এই সরকার খুবই আন্তরিক। তাদের যাতে কোন সমস্যা না হয় সেটা নিশ্চিত করবে সরকার।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্য সরকার তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের মাধ্যমে জনজাতিদের ঐতিহ্যবাহী কৃষ্টি সংস্কৃতি চর্চার ব্যবস্থা করেছে। প্রধানমন্ত্রী রাজ্যের জনজাতিদের সম্মানে ৭ জন জনজাতি ব্যক্তিত্বকে পদ্মশ্রী সম্মানে ভূষিত করেছেন। যা এরআগে কখনো দেখা যায় নি। আমরা চাই বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য। আমরা এবারের বাজেটে জনজাতিদের ঐতিহ্যবাহী বাদ্যযন্ত্র রক্ষায় আর্থিক সংস্থান রাখার ব্যবস্থা করেছি। রাজ্যের পুরনো সংস্কৃতি যাতে হারিয়ে না যায় সেই ব্যবস্থা করছে সরকার। তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের উদ্যোগে গত এক বছরে ৫০১টি বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মসুচি করা হয়েছে। ১২২টি ইভেন্ট করা হয়েছে এবং ১০১টি সাংস্কৃতিক সংগঠনকে সাংস্কৃতিক কর্মসুচি করার জন্য সহায়তা করা হয়েছে। গত নভেম্বর থেকে এখন পর্যন্ত ৩৩০ জন শিল্পীকে রাজ্যের বাইরে পাঠানো হয়েছে। যারমধ্যে অধিকাংশ জনজাতি অংশের ছেলেমেয়ে।
অনুষ্ঠানে ডাঃ সাহা বলেন, ডোনার মন্ত্রকের আর্থিক সহায়তায় ত্রিপুরায় কালচারাল হাব গড়ে তোলা হবে। এজন্য সাড়ে ৩২ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। রাজ্যে ন্যাশনাল স্কুল অফ ড্রামা, ললিত কলা একাডেমি, সঙ্গীত নাটক একাডেমি, সাহিত্য একাডেমি রয়েছে। এতে ছেলেমেয়েদের বিভিন্নভাবে সুবিধা হচ্ছে এবং তারা ভবিষ্যত গড়ে তোলার সুযোগ লাভ করছে। জনজাতিদের উন্নয়নে এবারের বাজেটে প্রচুর আর্থিক সংস্থান রাখা হয়েছে। বাজেটের হিসেব ছাড়াও আরো বিভিন্নভাবে তাদের উন্নয়নে প্রচেষ্টা জারি রয়েছে। জনজাতিদের এলাকায় পরিকাঠামো উন্নয়নের চেষ্টা করছে সরকার। সেই সঙ্গে তাদের জীবন মানের উন্নয়নে কাজ করছে সরকার। জনজাতি ছেলেমেয়েদের দক্ষতা উন্নয়ন করার জন্যও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জনজাতি কল্যাণ মন্ত্রী বিকাশ দেববর্মা, সমবায় মন্ত্রী শুক্লা চরণ নোয়াতিয়া, প্রাক্তন সাংসদ রেবতী ত্রিপুরা, বিধায়ক সঞ্জয় মানিক ত্রিপুরা, এডিসির কার্যনির্বাহী সদস্যা ডলি রিয়াং, এডিসি সদস্য কংজং মগ, গোমতী জেলার জেলাশাসক তড়িৎ কান্তি চাকমা সহ অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিগণ। দুদিন ব্যাপী এই উৎসব চলবে রবিবার পর্যন্ত। উৎসবকে ঘিরে নানা সাংস্কৃতিক কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে আয়োজক সংস্থার দুটি ম্যাগাজিন ও বাৎসরিক পত্রিকার আবরণ উন্মোচন করেন মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা।