আগরতলা, ১৬ সেপ্টেম্বর: জনজাতি কল্যাণে প্রতিটি মহকুমা ও জেলা স্তরে টিসিএস সমতুল্য অফিসার রাখা হবে। জনজাতি মানুষের সমস্যা সমাধানে আদি সেবা কেন্দ্র চালু করা হবে। রাজ্যের বর্তমান সরকার জনজাতিদের সার্বিক কল্যাণে খুবই আন্তরিক।
আজ আগরতলার প্রজ্ঞাভবনে আয়োজিত রাজ্য স্তরের দিকনির্দেশনা কার্যক্রমে (ওরিয়েন্টেশন প্রোগ্রাম) অংশগ্রহণ করে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা।
অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা বলেন, ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নরেন্দ্র মোদি দায়িত্ব গ্রহণের পর সমাজের অন্তিম ব্যক্তি পর্যন্ত উন্নয়নে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। তিনি বলছেন যতক্ষন পর্যন্ত সবদিক দিয়ে তাদের উন্নতি না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত দেশের উন্নতি হবে না। সারা দেশে প্রায় ৭০০ জনজাতি গোষ্ঠী রয়েছে এবং আমাদের রাজ্যে ১৯টি জনজাতি গোষ্ঠী রয়েছে। আর এই ১৯টির মধ্যেও অনেক উপগোষ্ঠী রয়েছে রাজ্যে। কিন্তু ধীরে ধীরে এই উপগোষ্ঠীগুলি হারিয়ে যাচ্ছে। কেন্দ্রীয় সরকারের দিক নির্দেশনায় সবকা সাথ, সবকা বিকাশ, সবকা বিশ্বাস, সবকা প্রয়াস দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে কাজ করছে ত্রিপুরা সরকার।
বক্তব্যে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, সরকারের বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়নে আধিকারিকদের দায়িত্ব অনেক বেশি। কিভাবে প্রকল্পগুলি যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করা হবে সেটা দায়িত্ব সহকারে পালন করতে হবে। জনজাতি অংশের মানুষের কল্যাণে নিযুক্ত থাকা মহকুমা ও জেলা স্তরের অফিসারদের পদ তুলে দেওয়া হয়েছিল ২০০৫ এ। তাই কিছুদিন আগে আমরা ক্যাবিনেটে সিদ্ধান্ত নিই যে প্রতিটি মহকুমা ও জেলা স্তরে জনজাতি কল্যাণে টিসিএস সমতুল্য অফিসার রাখা হবে। সরকারের আধিকারিকরা হচ্ছেন আদি কর্মযোগী। অফিসার, কর্মচারীরা হচ্ছেন সরকারের অন্যতম চালিকাশক্তি। কারণ সরকার যে সিদ্ধান্ত নেয় সেগুলি বাস্তবায়ন হয় অফিসার কর্মচারীদের মাধ্যমে।
অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী আরো বলেন, আগে জনজাতিদের ভোটের বাক্সে পরিণত করার জন্য রাজনীতি হত। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নেতৃত্বাধীন সরকার ও আমাদের সরকার চাইছে প্রকৃত অর্থে জনজাতিদের উন্নয়ন। এই উন্নয়নমূলক অভিযানে রয়েছেন আদি কর্মযোগী, আদি সহযোগী ও আদি সাথী। এই লক্ষ্য বাস্তবায়নে আদি সেবা কেন্দ্র রাখা হবে। যেটা হবে সিঙ্গেল উইন্ডো সিস্টেম। যেখানে একই জায়গার মধ্যে যার যে সমস্যা সেটা সমাধানের ব্যবস্থা করা হবে। সপ্তাহে একদিন অভিযোগ নিষ্পত্তির দিন ধার্য্য করা হয়েছে। যা সেবা আওয়ার নামে বিবেচিত হবে। স্থানীয় এলাকায় জনজাতিদের যে সমস্যা রয়েছে সেগুলি নিষ্পত্তি করতে হবে। এর পাশাপাশি মাসে একদিন সেবা ডে রাখা হয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা জানান, আদি কর্মযোগী অভিযানের অধীনে স্টেট প্রোসেস ল্যাবে রাজ্যে ৩৯২টি রাজস্ব গ্রামে ৮ লক্ষ জনজাতির জন্য রাজ্য স্তরে ৮ জন মাস্টার ট্রেইনার, ৪০ জন জেলা মাস্টার ট্রেইনার ও ২৬০ জন ব্লক মাস্টার ট্রেইনার নিযুক্তি পেয়েছেন।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ধরতি আভা জনজাতিয় গ্রাম উৎকর্ষ অভিযানে এখন পর্যন্ত ৮টি জেলায় ৫২টি ব্লকে ৭৮৯টি গ্রাম পঞ্চায়েত ও ভিলেজ কমিটি উপকৃত হয়েছে। এই অভিযানে রাজ্যের নির্ধারিত ২০টি দপ্তরের মাধ্যমে আবাসন নির্মাণ, গ্রামীণ সড়ক নির্মাণ, বিদ্যুতায়ন, নতুন সৌর প্রকল্প স্থাপন, ভ্রাম্যমান মেডিকেল ইউনিটের ব্যবস্থা, জনজাতি হোম স্টে, অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র নির্মাণ, পানীয়জলের সুবিধা, জনজাতি ছাত্রাবাস নির্মাণ, টেলি যোগাযোগ ব্যবস্থা, ট্রাইবেল মাল্টিপারপাস মার্কেটিং সেন্টার, বনাধিকার আইনে পাট্টা প্রাপকদের অর্থনৈতিক উত্থানের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী জানান, আমরা ৯টি বনাধিকার সেল স্থাপন করতে যাচ্ছি। তাছাড়া ১১৯টি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের জন্য ১৪.২১ কোটি টাকা অনুমোদিত হয়েছে। আমাদের সরকার চায় অন্তিম ব্যক্তি ও অন্তিম পরিবার পর্যন্ত উন্নয়ন হোক। জনজাতি সমাজপতিদের সাম্মানিক ভাতা ৫ হাজার টাকা করা হয়েছে। এর পাশাপাশি জনজাতি উপ গোষ্ঠীর প্রধানদেরকেও চিহ্নিত করে তাদের সাম্মানিক ভাতা প্রদানের চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে।
অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জনজাতি কল্যাণ মন্ত্রী বিকাশ দেববর্মা, কেন্দ্রীয় জনজাতি কল্যাণ মন্ত্রকের যুগ্ম সচিব, জনজাতি কল্যাণ দপ্তরের সচিব ড. কে শশী কুমার, পশ্চিম জেলার জেলাশাসক ড. বিশাল কুমার, জনজাতি কল্যাণ দপ্তরের অধিকর্তা শুভাশিস দাস সহ অন্যান্য পদস্থ আধিকারিকগণ।