আগরতলা, ১ আগস্ট।।

রাজ্যে চিকিৎসা পরিষেবার সামগ্রিক উন্নয়নে অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করছে বর্তমান সরকার। উত্তর পূর্বাঞ্চল সহ সারা দেশে একটা বিশেষ স্থান করে নিয়েছে আগরতলা সরকারি মেডিকেল কলেজ (এজিএমসি) হাসপাতাল। বর্তমানে এখানে সফলভাবে কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট করা হচ্ছে। আগামীতে এই হাসপাতালে লিভার ও হার্ট ট্রান্সপ্লান্ট করার জন্য উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এছাড়া আগরতলা সরকারি মেডিকেল কলেজে সুপার স্পেশালিটি কোর্স চালু করার উদ্যোগ নেওয়া হবে।

আজ আগরতলা সরকারি মেডিকেল কলেজ ও জিবিপি হাসপাতালের ২১তম প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষে কেএলএস অডিটরিয়ামে আয়োজিত অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা। অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা বলেন, আগরতলা সরকারি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের প্রতিষ্ঠা দিবসের দিনটা আমাদের সবার জন্য একটা আনন্দের দিন। তাই এই মেডিকেল কলেজের সঙ্গে যুক্ত সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানাই। আমাদের রাজ্যে প্রথমে দুটি মেডিকেল কলেজ শুরু হয়েছিল। এজন্য অনেকের অবদান অনস্বীকার্য। এই কলেজ এখন উত্তর পূর্বাঞ্চল সহ গোটা ভারতবর্ষে একটা বিশেষ স্থান করে নিয়েছে। আমরা চাই এই কলেজটির যা যা প্রয়োজন তাতে যাতে কোন ধরণের খামতি না থাকে। খামতি থাকলে সরকার অবশ্যই সেগুলি পূরণ করবে।

মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা জানান, বর্তমানে রাজ্যে প্রায় ৪০০টি এমবিবিএস এর আসন রয়েছে। ডেন্টাল কলেজে আসন রয়েছে ৬৩টি। ত্রিপুরা মেডিকেল কলেজে ১০০টি আসন রয়েছে। আরো ৫০টি আসনের জন্য আবেদন করেছে তারা। এজিএমসি তথা আগরতলা সরকারি মেডিকেল কলেজে এমবিবিএস এর আসন রয়েছে ১৫০টি। শুরুতে এর আসন সংখ্যা ছিল ১০০টি। ২০১৯ এ ২৫টি আসন বৃদ্ধি করা হয়। ২০২৪ – ২৫ এ আরো ২৫টি আসনের অনুমোদন দেওয়া হয়। পরিকাঠামো বৃদ্ধি করা সম্ভব হলে আসন সংখ্যা আরো বৃদ্ধি করা যাবে। ২০২৫ – ২৬ এ ১৫০টি আসনের মধ্যে ত্রিপুরার ছাত্রছাত্রীদের জন্য ১১৮টি আসন বরাদ্দ রাখা হয়। ২২টি কেন্দ্রের জন্য বরাদ্দ থাকে। আরো ১০টি আসন উত্তর পূর্বাঞ্চলের মিজোরাম, মেঘালয়, নাগাল্যান্ড ও অরুণাচল প্রদেশের জন্য সংরক্ষিত রাখা হয়েছে। বর্তমানে আগরতলা সরকারি মেডিকেল কলেজে বিভিন্ন বর্ষে ৫২৫ জন ছাত্রছাত্রী পড়াশুনা করছে। এই কলেজ থেকে এখন পর্যন্ত এমবিবিএস পাশ করেছে ১,৪৮৪ জন। এরমধ্যে ত্রিপুরার রয়েছেন ১,২৭০ জন।

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ডাক্তারি পাশ করা অধিকাংশকে রাজ্যের বিভিন্ন গ্রামীণ ও প্রত্যন্ত অঞ্চলের হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিযুক্ত করা হয়েছে। এতে চিকিৎসা পরিষেবায় অনেক গতি এসেছে। আগের মতো ম্যালেরিয়া, ডায়রিয়া ইত্যাদি রোগের প্রাদূর্ভাব অনেক কমেছে। ২০১১ সালে এজিএমসিতে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কোর্স চালু করা হয়েছিল। পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কোর্সে এখন ৮৯টি আসন রয়েছে। এরমধ্যে রাজ্য ও কেন্দ্রের আসন ৫০% করে বরাদ্দ করা হয়। গত ৯ বছরে ৩৯১ জন পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কোর্স সম্পন্ন করেছেন। এজিএমসিতে সুপার-স্পেশালিটি কোর্স চালু করার জন্য চিন্তাভাবনা নেওয়া হচ্ছে। রাজ্য সরকার হসপিটাল ম্যানেজমেন্ট এর উপর কোর্স চালু করার উদ্যোগ নিয়েছে। এজন্য দিল্লির এইমসের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। জিবি হাসপাতালে বর্তমানে ১৪১৩টি শয্যা রয়েছে। আরো ১০০টি শয্যা বৃদ্ধির জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী জানান, এজিএমসিতে এখন পর্যন্ত তিনটি কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট সফলভাবে সম্পন্ন করা হয়েছে। লিভার ট্রান্সপ্লান্ট এর জন্য মোহন ফাউন্ডেশনের সঙ্গে আলোচনা হচ্ছে। এছাড়াও হার্ট ট্রান্সপ্লান্ট এর চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। টেলিমেডিসিন পরিষেবা চালু করার জন্যও উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। সবমিলিয়ে রাজ্যেই যাতে সব ধরণের চিকিৎসা পরিষেবা প্রদান করা যায় এবং রোগীদের যাতে বাইরে যেতে না হয় সেই ব্যবস্থা করছে রাজ্য সরকার।

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা উন্নয়নের জন্য পঞ্চদশ অর্থ কমিশন ৪৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে। এছাড়াও, ১০০টি স্বাস্থ্যকেন্দ্র তৈরির জন্য আরো ৩০ কোটি বরাদ্দ করা হয়েছে।

অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রামকৃষ্ণ মিশনের সম্পাদক স্বামী শুভকারানন্দ মহারাজ, স্বাস্থ্য দপ্তরের সচিব কিরণ গিত্যে, স্বাস্থ্য দপ্তরের অধিকর্তা ডাঃ তপন মজুমদার, পরিবার কল্যাণ ও রোগ প্রতিরোধ দপ্তরের অধিকর্তা ডাঃ অঞ্জন দাস, মেডিকেল এডুকেশনের অধিকর্তা ডাঃ এইচ পি শর্মা, জিবি হাসপাতালের মেডিকেল সুপার ডাঃ শঙ্কর চক্রবর্তী, এজিএমসির অধ্যক্ষ প্রফেসর ডাঃ অনুপ কুমার সাহা সহ অন্যান্য বিশিষ্ট চিকিৎসকগণ। এই অনুষ্ঠানে ডাক্তারি পড়ুয়া ছাত্রছাত্রীদের বিভিন্ন বিভাগে পুরস্কার ও সম্মাননা প্রদান করেন মুখ্যমন্ত্রী সহ অন্যান্য বিশিষ্ট অতিথিগণ।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *