আগরতলা,১৬ জুন।।

কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকার মহিলা সশক্তিকরণ ও তাদের আত্মনির্ভর করার জন্য বহুমুখী প্রকল্প গ্রহণ করেছে। তবে মহিলাদের সশক্তিকরণের সাথে সাথে সমাজে বাল্যবিবাহ ও কুসংস্কার প্রতিরোধে ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েতের মহিলা প্রতিনিধিদের অগ্রণী ভূমিকা নিতে হবে। তবেই সমাজের এই অজ্ঞানতা ধীরে ধীরে দূর হবে।

সমাজকল্যাণ ও সমাজশিক্ষা দপ্তরের মন্ত্রী টিছু রায় আজ প্রজ্ঞাভবনের ১নং হলে আয়োজিত মহিলা সংক্রান্ত আইন এবং সমাজকল্যাণ ও সমাজশিক্ষা দপ্তরের বিভিন্ন প্রকল্পের বিষয়ে রাজ্যস্তরীয় একদিনের কর্মশালায় প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন। সমাজকল্যাণ ও সমাজশিক্ষা দপ্তর এই কর্মশালার আয়োজন করে। কর্মশালার উদ্বোধন করে সমাজকল্যাণ ও সমাজশিক্ষা মন্ত্রী টিছু রায় বলেন, আমাদের দেশে মহিলারা আজ অনেক ক্ষেত্রে সামনের সারিতে রয়েছে। আমাদের দেশের রাষ্ট্রপতি ও অর্থমন্ত্রী মহিলা। এদেশে মহিলারা পিছিয়ে নেই। দিন দিন সামনের দিকে এগিয়ে চলেছেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি মহিলা সশক্তিকরণে অগ্রাধিকার দিয়েছেন। তিনি বলেন, আমাদের রাজ্যেও অনেক গুণী ও প্রতিভাবান মহিলা রয়েছেন। রাজ্যের গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি ও জিলা পরিষদে সাড়ে তিন হাজারের বেশি মহিলা জনপ্রতিনিধি রয়েছেন। সিপাহীজলা জিলা পরিষদের সভাধিপতি সুপ্রিয়া দাস দত্ত রাষ্ট্রসংঘে ভাষণ দিয়েছেন। সরকারি চাকুরীতে মহিলাদের জন্য ৩৩ শতাংশ পদ সংরক্ষণ রাখা হয়েছে। এছাড়া সরকারি মার্কেট স্টলেও মহিলাদের জন্য অর্ধেক স্টল সংরক্ষণ রাখা হয়েছে। রাজ্যে মহিলা টিএসআর ব্যাটেলিয়ান গঠন করা হয়েছে। গত ২০১৮-১৯ অর্থবছর থেকে ২০২৪-২৫ অর্থবছর অর্থাৎ বিগত ৭ বছরে রাজ্যে মহিলাদের আর্থসামাজিক মান উন্নয়নে প্রায় ২০০০ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে। বর্তমানে রাজ্যে ৫৮ হাজার স্বসহায়ক দল রয়েছে। এতে ৫ লক্ষাধিক মহিলা সদস্যা রয়েছেন।

সমাজকল্যাণ ও সমাজশিক্ষা দপ্তরের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই দপ্তর বিভিন্ন প্রকল্প মিশন মুডে বাস্তবায়ণ করছে। তিনি বলেন, বর্তমানে রাজ্যে মহিলাদের জন্য ৮ জেলায় ৮টি ওয়ান স্টপ সেন্টার রয়েছে। ২০২৫-২৬ অর্থবছরে কৈলাসহর ও আগরতলায় আরও ২টি গড়ার জন্য অনুমোদন পাওয়া গেছে। বর্তমানে আগরতলায় ১টি সখী নিবাস রয়েছে। আরও ১০টির মঞ্জুরী পাওয়া গেছে। বর্তমানে রাজ্যে ১ লক্ষ ১৪ হাজার ৩০০ জন বয়স্ক মহিলাদের প্রতিমাসে ২০০০ টাকা করে ভাতা দেওয়া হচ্ছে। বর্তমানে নরসিংগড়ে ২৫ শয্যা বিশিষ্ট হাফ ওয়ে হোম (শান্তি নিড়) নির্মাণের কাজ চলছে। মহিলাদের কল্যাণে রাজ্যে ত্রিপুরা স্টেট পলিসি ফর এমপাওয়ারমেন্ট অফ ওমেন-২০২২ প্রণয়ন করা হয়েছে। প্রতিটি জেলায় ওমেন হেল্প লাইন চালু করা হয়েছে। জুভেনাইল জাস্টিস ফান্ডে প্রতিমাসে ৩০ থেকে ৪০ জন শিশুকে সহায়তা করা হচ্ছে। সরকার ও এনজিও পরিচালিত হোমকে সহায়তা করা হচ্ছে। নবম শ্রেণির সকল বালিকাকে প্রতিবছর বাইসাইকেল দেওয়া হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী মাত্র বন্দনা যোজনা, মুখ্যমন্ত্রী মাতৃ পুষ্টি উপহার যোজনা ও মুখ্যমন্ত্রী ট্যালেন্ট সার্চ প্রকল্পে সহায়তা করা হচ্ছে। দ্বাদশ পরীক্ষায় যারা টপার তাদের স্কুটি দেওয়া হচ্ছে। তিনি এই দপ্তরের বেটি বাঁচাও বেটি পড়াও, সুকন্যা সন্তান যোজনা প্রভৃতি প্রকল্প সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন। খেলাধুলার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের রাজ্যে বহু মহিলা প্রতিভাবান খেলোয়াড় রয়েছে। গতবছর ও এবছর বহু মেয়ে খেলাধুলায় সফলতা অর্জন করে রাজ্যের জন্য বহু জাতীয় মেডেল এনেছে। স্বাগত বক্তব্যে সমাজকল্যাণ ও সমাজশিক্ষা দপ্তরের অধিকর্তা তপন কুমার দাস বলেন, পিএম জনমন প্রকল্পে এবছর ৮৫টি এবং ধরতি আবা জনভাগীদারি অভিযান প্রকল্পে ১১৯টি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র নির্মাণের জন্য মঞ্জুরী পাওয়া গেছে। কর্মশালায় মিশন শক্তি প্রকল্প ও স্টেট পলিসি ফর এমপাওয়ারমেন্ট অফ ওমেন-২০২২ নিয়ে আলোচনা করেন সমাজকল্যাণ ও সমাজশিক্ষা দপ্তরের অতিরিক্ত অধিকর্তা এল রাফুল।

মহিলা উন্নয়ন ও সামাজিক ভাতা নিয়ে আলোচনা করেন এই দপ্তরের যুগ্ম অধিকর্তা জন সি দেববর্মা, আইসিডিএস ও পোষণ অভিযান নিয়ে আয়োচনা করেন দপ্তরের যুগ্ম অধিকর্তা ড. চন্দ্রানী বিশ্বাস ও শিশু কল্যাণের ক্ষেত্রীয় কার্যাবলী নিয়ে আলোচনা করেন দপ্তরের উপ অধিকর্তা টি কলই। সামাজিক ভাতার ব্যাস্তের নিয়মাবলী নিয়ে আলোচনা করেন স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়ার আধিকারিক নারায়ণ পাল এবং রেবতী রঞ্জন কুমানা। মহিলা সংক্রান্ত আইন নিয়ে আলোচনা করেন আইন দপ্তরের অবর সচিব দীপান্বিতা গাঙ্গুলী।

এই কর্মশালায় উত্তর ত্রিপুরা, ঊনকোটি, ধলাই, দক্ষিণ ত্রিপুরা ও পশ্চিম ত্রিপুরা জেলা থেকে এই দপ্তরের বিভিন্ন স্তরের আধিকারিক, জেলা সমাজকল্যাণ ও সমাজশিক্ষা পরিদর্শক, সিডিপিও, অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী প্রমুখ অংশ নেন। সকলকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন সমাজকল্যাণ ও সমাজশিক্ষা দপ্তরের যুগ্ম অধিকর্তা বিজন চক্রবর্তী।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *