আগরতলা ।।রাজ্যের কৃষিক্ষেত্রের ইতিহাসে যুক্ত হল এক নতুন গৌরব। দেশের অন্যতম মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার ‘সেরা জোনাল কেভিকে পুরস্কার ২০২৫’ পেল রাজ্যের ধলাই জেলার কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্র (কেভিকে ধলাই)।

এই বিরল সম্মান প্রদান করেছে ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অফ অ্যাগ্রিকালচারাল সায়েন্সেস (NAAS), যা দেশের কৃষি গবেষণা ও প্রযুক্তির সর্বোচ্চ মঞ্চগুলির একটি। এই সাফল্য রাজ্যের জন্য যেমন গর্বের, তেমনি এটি সম্ভব হয়েছে রাজ্যের কৃষি ও কৃষক কল্যাণ দপ্তরের মন্ত্রী রতন লাল নাথ-এর ঐকান্তিক প্রচেষ্টা, বিজ্ঞানভিত্তিক কৃষির প্রতি নিরবিচার অনুপ্রেরণা এবং প্রাতিষ্ঠানিক সহযোগিতার ফলে। উত্তর-পূর্ব ভারতের অন্যতম অনগ্রসর জেলা ধলাই।

যেখানে একসময় কৃষি ছিল শুধুই জীবিকানির্ভর, আজ তা বিজ্ঞাননির্ভর ও উদ্যোগভিত্তিক হয়ে উঠেছে। এই রূপান্তরের মূল চালিকাশক্তি হয়ে উঠেছে কেভিকে ধলাই, যা ৫ জুন, ২০২৫ তারিখে, নতুন দিল্লিতে NAAS-এর প্রতিষ্ঠা দিবসে ভারতের সেরা জোনাল কেভিকেদের মধ্যে নির্বাচিত হয়ে সম্মানিত হয়। পুরস্কারটি গ্রহণ করেন কেভিকে ধলাই-এর সিনিয়র সায়েন্টিস্ট ও প্রধান, ড. অভিজিৎ দেবনাথ। সর্বভারতীয় এই পুরস্কার অর্জনের জন্য কমপক্ষে ১০ বছরের কার্যকরী অভিজ্ঞতা আবশ্যক। পূর্বে পুরস্কার পেলে ৫ বছরের বিরতির নিয়মও রয়েছে। NAAS প্রেসিডেন্ট-এর নেতৃত্বে গঠিত বিশেষজ্ঞ বিচারকমণ্ডলী বিগত ৫ বছরের কাজ বিশ্লেষণ করে নির্বাচিত করে ধলাই-এর এই প্রতিষ্ঠানকে।মূল্যায়ন করা হয়েছে —- কৃষকদের আয় ও জীবনমান বৃদ্ধির উদ্যোগ, প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তি সম্প্রসারণ, যুব ও নারীদের ক্ষমতায়ন, গবেষণালব্ধ জ্ঞানের বাস্তব প্রয়োগ, বহিরাগত অর্থায়ন ও ফান্ডের দক্ষ ব্যবহার এবং স্বনির্ভর গোষ্ঠী, FPO ও এনজিও-র সঙ্গে সমন্বয় ত্রিপুরা সরকারের কৃষি ও কৃষক কল্যাণ দপ্তরের মন্ত্রী রতন লাল নাথ এই সাফল্যের মূল অনুপ্রেরণা হিসেবে উঠে এসেছেন। তাঁর নেতৃত্বে রাজ্যের কৃষি নীতি বিজ্ঞানভিত্তিক, কৃষক-কেন্দ্রিক ও প্রযুক্তি নির্ভর হয়ে উঠেছে।

তিনি বারবারই বলে এসেছেন— কৃষিকে শুধু জীবিকা নয়, উন্নয়নের স্তম্ভ হিসেবে ভাবতে হবে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সঙ্গে কৃষকের সরাসরি সংযোগ হল ত্রিপুরার কৃষির ভবিষ্যৎ। মন্ত্রী হিসেবে তিনি কেভিকে ধলাই-এর মতো সংস্থাগুলির প্রতি দৃঢ় প্রশাসনিক ও নীতিগত সহায়তা প্রদান করেছেন। পরিকাঠামো উন্নয়ন, দক্ষ মানবসম্পদ নিয়োগ এবং সময়োপযোগী প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তিনি সংস্থাটিকে একটি কেন্দ্রীয় উদাহরণে রূপান্তর করেছেন।কেভিকে ধলাই-র উল্লেখযোগ্য কাজগুলির মধ্যে রয়েছে— উপজাতি ও প্রান্তিক কৃষকদের জন্য বাস্তবভিত্তিক প্রশিক্ষণ l উচ্চ ফলনশীল ফসল ও আধুনিক কৃষি প্রযুক্তির বাস্তব প্রয়োগ পশুপালন, মৎস্যচাষ, মৌচাষে বহুমুখী উদ্যোক্তা গড়ে তোলা l নারীদের কৃষিতে অন্তর্ভুক্ত করা ও গোষ্ঠীভিত্তিক উদ্যোগ l ডিজিটাল কৃষি ও মোবাইল অ্যাপে কৃষি-পরামর্শ ছড়িয়ে দেওয়া এবং Revolving Fund ও বাইরের সংস্থার অর্থায়নে প্রজেক্ট বাস্তবায়ন l NAAS-এর এই পুরস্কারের আগে কেভিকে ধলাই সম্মান পেয়েছে— NITI Aayog, ICAR – IARI, নতুন দিল্লি, IIHR, বেঙ্গালুরু l এগুলি প্রমাণ করে যে সংস্থাটি শুধু স্থানীয় পর্যায়ে নয়, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিসরেও স্বীকৃত। কেভিকে ধলাই শুধু কৃষি চর্চা নয়, গড়ে তুলেছে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক মডেল, যেখানে স্থানীয় SHG, FPO, পঞ্চায়েত, যুব সংঘ ও NGO-এর সঙ্গে মিলিতভাবে পরিকল্পনা এবং বাস্তবায়ন করা হয়। মন্ত্রী রতন লাল নাথ এই মডেলকে উৎসাহ দিয়েছেন, যাতে কৃষির প্রতিটি স্তরে একজোট হয়ে কাজ করার সংস্কৃতি তৈরি হয়। ৫ জুন, ২০২৫—এই দিনটি কেবল কেভিকে ধলাই-এর জন্য নয়, সমগ্র ত্রিপুরার জন্য এক ঐতিহাসিক দিন। এটি প্রমাণ করে, সীমিত অবকাঠামো সত্ত্বেও যদি নেতৃত্বে থাকে দূরদৃষ্টি, নীতিতে থাকে বিজ্ঞানমনস্কতা এবং প্রয়োগে থাকে আন্তরিকতা, তবে যেকোনো পিছিয়ে থাকা জেলা হতে পারে দেশের কৃষি-আলোকস্তম্ভ।

আর এই আলোকবর্তিকা জ্বালাতে যিনি মুখ্য ভূমিকা পালন করেছেন, তিনি মন্ত্রী রতন লাল নাথ—যাঁর দিকনির্দেশনায় রাজ্যের কৃষি আজ জাতীয় মানচিত্রে উদ্ভাসিত।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *