আগরতলা।।শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ক্ষেত্রের উন্নয়ন নিয়ে কোন আপোষ করবে না সরকার। এই দুই ক্ষেত্রের সার্বিক উন্নয়নে অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করছে বর্তমান সরকার। ত্রিপুরার চাকরি প্রত্যাশী ছেলেমেয়েদের কথা ভেবে রাজ্যের ৩টি জায়গায় ত্রিপুরা কম্পিটিটিভ এক্সাম সেন্টার খোলা হবে। উদয়পুর, আগরতলা ও আমবাসায় এই সেন্টার স্থাপনের জন্য বাজেটে আর্থিক সংস্থান রাখা হয়েছে।

আজ মোহনপুর মহকুমাধীন পশ্চিম তারানগরে চিন্ময় হরিহর বিদ্যালয়ের উদ্বোধন ও চিন্ময় সুন্দরায়ী মন্দিরের ভূমি পূজন অনুষ্ঠানে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা।অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা বলেন, সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য শিক্ষা খুবই প্রয়োজন। পড়াশুনার মাধ্যমেই জ্ঞান বাড়বে। আমাদের যশস্বী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বারবার বলছেন আগামীদিনে এই পৃথিবী তাদের হাতে থাকবে যাদের শিক্ষা থাকবে। শিক্ষার মাধ্যমেই মানুষের ব্যক্তিত্ব ও আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দেয়। আজ এখানে শুরু হওয়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য আমার শুভকামনা জানাই। মোহনপুর মহকুমার মানুষের জন্যও আজকের দিনটি স্মরণীয় হয়ে থাকবে। এই শিক্ষা মিশন তাদের জন্য আশীর্বাদ স্বরুপ হয়ে উঠবে। এই মিশন এক মহৎ উদ্দেশ্য নিয়ে তাদের কাজ শুরু করেছে।

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বৃত্তিমূলক শিক্ষা ও গুণগত শিক্ষার উপর বিশেষ জোর দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। আমরাও সেই দিশায় রাজ্যের শিক্ষা ক্ষেত্রকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজ করছি। ছেলেমেয়েদের শৈশব কাল থেকে সামাজিক কাজে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। মানুষকে সাহায্য করার মানসিকতা সম্পন্ন করে তুলতে হবে। জীবনে জ্ঞান থাকলে সমস্ত বাধা বিপত্তিকে দূরে সরিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়া যায়। এখন এআই এবং ডিজিটালের যুগ। সবক্ষেত্রেই এখন এআই এর ব্যবহার হচ্ছে। এখন জ্ঞান অর্জনের অনেক রাস্তাও খুলে গেছে। ছাত্রছাত্রীদের সুবিধার্থে ইংরেজি ও বিজ্ঞান বিষয়গুলির জন্য স্পেশাল কোচিং সেন্টার খোলার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। যতটুকু সম্ভব তাদের গুণগত শিক্ষা প্রদান করতে হবে। শিক্ষার মাধ্যমে জ্ঞান অর্জন করতে হবে এবং জ্ঞানী ব্যক্তির কথা সমাজ গ্রহণ করে।

মুখ্যমন্ত্রী তথা শিক্ষামন্ত্রী আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় দেশে জাতীয় শিক্ষা নীতি ২০২০ চালু হয়েছে। আমাদের রাজ্যেও স্কুল কলেজগুলিতে জাতীয় শিক্ষা নীতি চালু করা হয়েছে। বাস্তবের সাথে মিল রেখেই এটা প্রণয়ন করা হয়েছে। গত ২৩ জুন সাক্ষরতার ক্ষেত্রে দেশের তৃতীয় রাজ্য হিসেবে পূর্ণতা লাভ করেছে ত্রিপুরা। সাক্ষরতার হার ৯৫.৬%। মিজোরাম এবং গোয়ার পরেই আমাদের রাজ্য পূর্ণ সাক্ষর রাজ্যের স্বীকৃতি অর্জন করেছে। যা আমাদের জন্য অত্যন্ত গর্বের। ডাঃ সাহা বলেন, শিক্ষা ক্ষেত্রে মেয়েদের আরো উৎসাহিত করতে নবম শ্রেণীর ছাত্রীদের বিনামূল্যে বাই সাইকেল প্রদান করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত প্রায় ১ লক্ষ ২২ হাজারের অধিক বাই সাইকেল দেওয়া হয়েছে। উচ্চ মাধ্যমিক উত্তীর্ণ কৃতি ১৪০ জন ছাত্রীকে বিনামূল্যে স্কুটি দেওয়া হয়েছে। সিএম সাথ প্রকল্প চালু করা হয়েছে। আমবাসা, কাকড়াবন ও করবুকে নতুন আরো ৩টি সাধারণ ডিগ্রি কলেজ খোলা হবে।

মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা জানান, এবার ত্রিপুরা মধ্যশিক্ষা পর্ষদ পরিচালিত পরীক্ষায় মাধ্যমিকে পাশের হার ৮৬.৫৩% এবং উচ্চ মাধ্যমিকে পাশের হার ৭৯.২৯%। গত বছরের তুলনায় বিদ্যাজ্যোতি পরিচালিত স্কুলগুলিতে ফলাফল অনেক ভালো হয়েছে। আগে পড়াশুনার জন্য আমাদের ছেলেমেয়েদের বাইরে যেতে হতো। এখন ত্রিপুরা শিক্ষা ক্ষেত্রে এগিয়ে যাচ্ছে। এমবিবিএস এ ৪০০টি আসন হয়েছে। ডেন্টাল কলেজে ৬৩টি আসন হয়েছে। রাজ্যে বর্তমানে ন্যাশনাল ল ইউনিভার্সিটি, ন্যাশনাল ফরেনসিক সায়েন্স ইউনিভার্সিটি, ন্যাশনাল সংস্কৃত ইউনিভার্সিটি, সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি, ট্রিপল আইটি, ফিসারি কলেজ, কৃষি কলেজ, ভেটেরিনারি কলেজ, টিআইটি সহ ইত্যাদি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হয়েছে। এছাড়া বেসরকারিভাবেও বিভিন্ন জায়গায় আরো অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হচ্ছে।

অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় বিধায়ক তথা বিদ্যুৎ মন্ত্রী রতন লাল নাথ, রামকৃষ্ণ মিশনের সেক্রেটারি স্বামী শুভকরানন্দ মহারাজ, বিশিষ্ট সমাজসেবী জি আর রবীন্দ্র রাজু, অমিত রক্ষিত সহ অন্যান্য বিদ্বজনগণ।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *