আগরতলা।।এবছরের শারদীয় উৎসব মানুষের সহযোগিতার মধ্য দিয়ে সুন্দর ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়েছে। শারদীয় উৎসবে মানুষের সুন্দর চিন্তা ও মননের উচ্ছাস পরিলক্ষিত হয়। আগরতলা শহরের পাশাপাশি রাজ্যের বিভিন্ন জেলার জনজাতি এলাকাগুলিতেও উৎসাহের সাথে দুর্গাপূজা সম্পন্ন হয়েছে।

আজ রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবনে তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের উদ্যোগে শারদ সম্মান-২০২৫ অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা) মানিক সাহা একথা বলেন। তিনি বলেন, ত্রিপুরাতে এখন দুর্গাপূজা শুধু বাঙালীদের নয়। রাজ্যে এখন দুর্গাপূজা জাতি জনজাতির এক মহান উৎসবে পরিণত হয়েছে। তিনি বলেন, রাজ্যে এবার শারদীয় উৎসবের দিনগুলিতে একটা উল্লেখযোগ্য দিক হল বিভিন্ন রাজ্যের শিল্পীদের আগমনের মাধ্যমে রাজ্যের সংস্কৃতির সাথে বিভিন্ন রাজ্যের সুন্দর সংস্কৃতির মেলবন্ধন হয়েছে। তাই বলা যায় শারদীয় উৎসবে বৈচিত্রের মধ্যে এক ঐক্যের মেলবন্ধন ঘটেছে।

তিনি বলেন, বর্তমানে ক্লাব ও সামাজিক সংস্থাগুলি বিভিন্ন সামাজিক কাজে অংশগ্রহণে উৎসাহিত হচ্ছে। ক্লাব ও সামাজিক সংস্থাগুলিকে সমাজের জন্য ১০০ ভাগ ভাল কাজের জন্য নিজেদের নিয়োজিত করতে হবে এবং সামাজিক দায়বদ্ধতা নিয়ে প্রতিটি এলাকায় নেশামুক্ত সমাজ ও নানা অসামাজিক কাজ প্রতিরোধ করে একটা সুন্দর সমাজ গঠনে আরও বেশি করে এগিয়ে আসতে হবে। তিনি বলেন, সমাজ ও সরকার আলাদা নয়। সরকারের একার পক্ষে সবকিছু করা সম্ভব নয়। সবার সহায়তার মধ্য দিয়ে একটা সুন্দর ও সুষ্ঠ সমাজ গড়তে হবে।

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির লক্ষ্য ভোকাল ফর লোকাল। সেটাকে লক্ষ্য রেখেই ক্লাব ও সামাজিক সংস্থাগুলি এগিয়ে আসায় রাজ্যের অনেক শিল্পীদের কাজের সুবিধা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী সংশ্লিষ্ট দপ্তরের মাধ্যমে বিভিন্ন মন্ডপসজ্জা, মূর্তি নির্মাণ, আলোকসজ্জা ইত্যাদি ক্ষেত্রে রাজ্যের শিল্পীদের নিয়ে কর্মশালা করার উপর গুরুত্ব আরোপ করেন। তিনি বলেন, এবার মায়ের গমন অনুষ্ঠানে সরাসরি ১ লক্ষ ৫০ হাজার মানুষ উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া বিভিন্ন মিডিয়াতেও ১ লক্ষ ৬০ হাজার মানুষ মায়ের গমন অনুষ্ঠান সম্প্রচার উপভোগ করেন।

তিনি বলেন, প্রতিটি ক্ষেত্রে ভাল কাজের জন্য রাজ্য ফ্রন্ট রানার রাজ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির ভাষণে জনজাতি কল্যাণমন্ত্রী বিকাশ দেববর্মা বলেন, শারদীয় উৎসবে জাতি ও জনজাতি সম্প্রীতির এক দৃঢ় বন্ধনের বাতাবরণ সৃষ্টি হয়। রাজ্যে সুষ্ঠ শান্তি, শৃঙ্খলা বজায় রাখতে প্রতিটি মানুষের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। ক্লাব ও সামাজিক সংস্থাগুলিকে সবসময় সমাজের জন্য ভাল কাজ করার জন্য নিজেদের তৈরী রাখতে হবে।

স্বাগত ভাষণ রাখেন তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের সচিব ড. প্রদীপ কুমার চক্রবর্তী। তিনি শারদ উৎসব ও মায়ের গমন অনুষ্ঠান শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হওয়ায় সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। অনুষ্ঠানে অন্যান্য অতিখিদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন আগরতলা পুরনিগমের মেয়র তথা বিধায়ক দীপক মজুমদার, ত্রিপুরা সাংস্কৃতিক উপদেষ্টা কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান সুব্রত চক্রবর্তী, তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের অধিকর্তা বিম্বিসার ভট্টাচার্য প্রমুখ। অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী সহ অন্যান্য অতিথিরা পশ্চিম জেলা সহ অন্যান্য ৭টি জেলার বিভিন্ন ক্লাব সংস্থার সদস্যদের হাতে আনুষ্ঠানিকভাবে পুরস্কার তুলে দেন।

পুরস্কৃত ক্লাবগুলি হল- পশ্চিম ত্রিপুরা জেলায় শ্রেষ্ঠ থিম সম্বলিত পূজা ক্যাটাগরিতে প্রথম হয়েছে আগরতলার কসমোপলিটন ক্লাব। দ্বিতীয় হয়েছে উজান অভয়নগরের নিউ স্টার ক্লাব। তৃতীয় হয়েছে যোগেন্দ্রনগরের অগ্রদূত ক্লাব। শ্রেষ্ঠ মন্ডপসজ্জার জন্য প্রথম হয়েছে জয় নগরের জেপিসি ক্লাব। দ্বিতীয় হয়েছে আগরতলার চলমান সংঘ এবং তৃতীয় হয়েছে ভিআইপি রোডের দেশবন্ধু ক্লাব। শ্রেষ্ঠ প্রতিমার জন্য প্রথম হয়েছে আগরতলার সূর্য তরুণ ক্লাব। দ্বিতীয় হয়েছে আগরতলার স্মৃতি ক্লাব এবং তৃতীয় হয়েছে পুরাতন এয়ারপোর্টের বিশ্বমিলন ক্লাব। শ্রেষ্ঠ পরিবেশবান্ধব পূজার নিরিখে প্রথম হয়েছে সূর্যমনিনগরের ইন্ডিয়া ক্লাব। দ্বিতীয় হয়েছে জিরানীয়ার রেডিয়াম ক্লাব এবং তৃতীয় হয়েছে মোহনপুরের ছাত্রবৃন্দ জনতা সংঘ। বড় বাজেটের শ্রেষ্ঠ পূজায় প্রথম হয়েছে আগরতলার কুঞ্জবন স্পোর্টিং ইউনিয়ন। দ্বিতীয় হয়েছে জয়নগরের যুব সমাজ এবং তৃতীয় স্থান অধিকার করেছে আগরতলার ছাত্রবন্ধু ক্লাব।

দক্ষিণ ত্রিপুরা জেলায় শ্রেষ্ঠ থিম সম্বলিত পুজার জন্য বিলোনীয়ার ইউনিটি ব্যায়ামাগার, শ্রেষ্ঠ প্রতিমার জন্য সাবুমের ভারত সংঘ, শ্রেষ্ঠ মন্ডপসজ্জার জন্য বিলোনীয়ার ওরিয়েন্টাল ক্লাব এবং শ্রেষ্ঠ পরিবেশবান্ধব পূজার জন্য শান্তিরবাজারের পূর্বপাড়া পুরস্কৃত হয়েছে। গোমতী জেলায় শ্রেষ্ঠ থিম সম্বলিত পূজার জন্য অমরপুরের ব্রাইট ডায়মন্ড ক্লাব, শ্রেষ্ঠ প্রতিমার জন্য উদয়পুরের হুজনগরের কলেজটিলা ওয়েলফেয়ার সোসাইটি, শ্রেষ্ঠ মন্ডপসজ্জার জন্য উদয়পুরের ছনবনস্থিত ইয়থ ক্লাব এবং শ্রেষ্ঠ পরিবেশবান্ধব পূজার জন্য উদয়পুরের নবশক্তি ক্লাব পুরস্কার পেয়েছে।

সিপাহীজলা জেলায় শ্রেষ্ঠ থিম সম্বলিত পূজার জন্য সোনামুড়ার ব্লাডড্রপস ক্লাব, শ্রেষ্ঠ প্রতিমার জন্য বিশালগড়ের রাউথখলা যুব সংঘ, শ্রেষ্ঠ মন্ডপসজ্জার জন্য বিশালগড়ের জাঙ্গালিয়াস্থিত বিশ্বপ্রিয় ক্লাব এবং শ্রেষ্ঠ পরিবেশবান্ধব পূজার জন্য জম্পুইজলাস্থিত টিএসআর ৭ম ব্যাটেলিয়ন পুরস্কার পেয়েছে। খোয়াই জেলার শ্রেষ্ঠ থিম সম্বলিত পূজার জন্য খোয়াইর বনকরস্থিত কিশোর সংঘ, শ্রেষ্ঠ প্রতিমার জন্য কল্যাণপুরের একত্র সংঘ, শ্রেষ্ঠ মন্ডপসজ্জার জন্য তেলিয়ামুড়ার কড়ুইলংস্থিত প্রোগ্রেসিভ ইয়খ ক্লাব এবং শ্রেষ্ঠ পরিবেশবান্ধব পূজার জন্য তেলিয়ামুড়ার অম্লিরোডস্থিত বুলেট ক্লাব পুরস্কার পেয়েছে।

ধলাই জেলার শ্রেষ্ঠ থিম সম্বলিত পূজার জন্য কমলপুরের ডিয়ার ক্লাব, শ্রেষ্ঠ প্রতিমার জন্য মনুঘাটের ক্ষুদিরাম সংঘ, শ্রেষ্ঠ মন্ডপসজ্জার জন্য আমবাসার সুকান্ত সামাজিক সংস্থা এবং শ্রেষ্ঠ পরিবেশবান্ধব পূজার জন্য গন্ডাতুইসার বিদ্যাসাগর ক্লাব পুরস্কৃত হয়েছে। ঊনকোটি জেলার শ্রেষ্ঠ থিম সম্বলিত পূজার জন্য কৈলাসহরের প্রত্যয়, শ্রেষ্ঠ প্রতিমার জন্য কুমারঘাটের সুভাষ সংঘ, শ্রেষ্ঠ মন্ডপসজ্জার জন্য সংহতি ক্লাব এবং শ্রেষ্ঠ পরিবেশবান্ধব পূজার জন্য ফটিকরায়ের আমি হিন্দু পুরস্কৃত হয়েছে।

উত্তর ত্রিপুরা জেলার শ্রেষ্ঠ থিম সম্বলিত পূজার জন্য পানিসাগরের দিনদয়াল সামাজিক সংস্থা, শ্রেষ্ঠ প্রতিমার জন্য কাঞ্চনপুরের ম্যাঞ্চেস্টার ক্লাব, শ্রেষ্ঠ মন্ডপসজ্জার জন্য ধর্মনগরের নয়াপাড়া ক্লাব এবং শ্রেষ্ঠ পরিবেশবান্ধব পূজার জন্য ধর্মনগরের পদ্মপুর ক্লাব পুরস্কৃত হয়েছে।

২০২৫ সালের মায়ের গমন অনুষ্ঠানে প্রথম স্থান অধিকার করেছে আগরতলার শতদল সংঘ। দ্বিতীয়স্থান পেয়েছে আগরতলার সংহতি ক্লাব এবং তৃতীয়স্থান অধিকার করেছে আগরতলার ব্লাড মাউথ ক্লাব। তাদেরও আজ পুরস্কৃত করা হয়।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *