আগরতলা : ত্রিপুরার রাজনীতিতে ককবরক ভাষা শুধুই একটি ভাষা নয়—এটি আত্মপরিচয়, ইতিহাস ও অস্তিত্বের প্রশ্ন। অথচ সেই অস্তিত্বের প্রশ্নেই বারবার রাজনৈতিক টালবাহানা ও সিদ্ধান্তহীনতার শিকার হচ্ছেন রাজ্যের বৃহত্তর জনজাতি সমাজ। এই প্রেক্ষাপটে ককবরক ভাষাকে রোমান স্ক্রিপ্টে লেখার জোরালো দাবিতে সরব হলেন তিপ্রা মথা সুপ্রিমো প্রদ্যুৎ কিশোর দেববর্মন।

রবিবার সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি সরাসরি আঙুল তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রীর সাম্প্রতিক ঘোষণার দিকে—যেখানে ককবরকের জন্য “নিজস্ব স্ক্রিপ্ট” তৈরির কথা বলা হয়েছে। প্রদ্যুৎ দেববর্মনের স্পষ্ট বক্তব্য, নিজস্ব স্ক্রিপ্ট তৈরি না হওয়া পর্যন্ত ককবরক ভাষাকে রোমান স্ক্রিপ্টে লেখার অনুমতি দিতে হবে। প্রশ্ন উঠছে—এই ‘নিজস্ব স্ক্রিপ্ট’ তৈরির প্রক্রিয়া কত বছর চলবে? ততদিন কি ককবরক ভাষা প্রশাসনিক ও শিক্ষাক্ষেত্রে অনিশ্চয়তার মধ্যেই থাকবে? এই দাবি নতুন নয়।

কিন্তু বারবার তা উপেক্ষিত। ফলে স্বাভাবিকভাবেই ক্ষোভ জমেছে পাহাড়-সমতলের জনজাতি সমাজে। প্রদ্যুৎ দেববর্মনের ভাষায়, ভাষার প্রশ্নে আর পরীক্ষানিরীক্ষা নয়, অবিলম্বে বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্ত চাই। তিনি রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন—ককবরক নিয়ে আর দ্বিচারিতা চলবে না। শুধু ভাষা নয়, এদিন তিনি আন্তর্জাতিক ও জাতীয় প্রেক্ষিতেও কড়া অবস্থান নেন।

বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি এবং সেখানকার কিছু জেহাদি ও ভারতবিরোধী বক্তব্যকে ঘিরে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিপ্রা মথা সুপ্রিমো। তিনি অভিযোগ করেন, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের উপর অমানবিক আক্রমণের বিরুদ্ধে আঞ্চলিক দল হিসেবে তিপ্রা মথা যখন প্রতিবাদ জানাচ্ছে, তখন জাতীয় স্তরে সেই প্রতিবাদের প্রতিধ্বনি আশ্চর্যজনকভাবে দুর্বল। এর পাশাপাশি আইপিএল নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। উত্তর-পূর্ব ভারতের প্রতিভাবান খেলোয়াড়দের উপেক্ষা করে কোটি কোটি টাকায় বাংলাদেশের খেলোয়াড় কেনা হচ্ছে—এই প্রবণতা নিয়েও তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেন প্রদ্যুৎ দেববর্মন।

তাঁর বক্তব্য, জাতীয় স্বার্থ ও সীমান্তবর্তী অঞ্চলের সংবেদনশীলতা উপেক্ষা করে ক্রীড়াক্ষেত্রেও যদি এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, তাহলে তা উদ্বেগজনক। তিনি কেন্দ্রীয় সরকারকে এই বিষয়ে আরও সজাগ ও দায়িত্বশীল ভূমিকা নেওয়ার আহ্বান জানান। সব মিলিয়ে এই সাংবাদিক সম্মেলন ছিল কেবল বক্তব্য রাখার মঞ্চ নয়, বরং একটি স্পষ্ট রাজনৈতিক বার্তা—ভাষা, সংস্কৃতি, নিরাপত্তা ও আত্মসম্মান নিয়ে আপসের সময় শেষ।

ককবরক প্রশ্নে এবার বল মাঠে রাজ্য ও কেন্দ্রের। সিদ্ধান্তহীনতা চললে তার রাজনৈতিক মূল্য যে বড়সড় হতে পারে, সে ইঙ্গিতও দিয়ে রাখলেন তিপ্রা মথা সুপ্রিমো।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *