আগরতলা : শৈশব থেকেই আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সামাজিক মূল্যবোধে বিকশিত হওয়ার শিক্ষা দিতে হবে। তবেই তারা বড় হয়ে সুন্দর সুস্থ সমাজ গঠনে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারবে। এর পাশাপাশি সেবামূলক মনোভাব নিয়ে সমাজের সব অংশের মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে।

আজ ইন্ডিয়ান রেডক্রস সোসাইটি ত্রিপুরা রাজ্য শাখা কার্যালয়ে ওয়ার্ল্ড রেডক্রস ডে উদযাপন উপলক্ষে ২ দিনব্যাপী কর্মসূচির সমাপ্তি অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা একথা বলেন। রাজ্যের আরও ৭টি জেলায় রেডক্রস সোসাইটি আয়োজিত রক্তদান শিবিরের তিনি ভার্চুয়ালি উদ্বোধন করেন।

তিনি রেডক্রস সোসাইটির প্রতিনিধি এবং রক্তদাতাদের সাথে কথা বলেন ও তাদের উৎসাহিত করেন।অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, মানবতাবোধ শৈশব থেকেই সৃষ্টি হয়। তাই শিশুদের ছোটবেলা থেকেই সামাজিক মূল্যবোধ, সেবামূলক কাজে আগ্রহ সৃষ্টির লক্ষ্যে রাজ্যের স্কুলগুলিতে সহর্ষ পাঠ্যক্রম চালু করা হয়েছে। শিশুদের মধ্যে মানবতাবোধ সৃষ্টি করা এবং তাদের অন্তর্নিহিত সত্ত্বার বিকাশ ঘটানোর লক্ষ্যেই এই পাঠ্যক্রম চালু করা হয়েছে। পড়াশোনার চাপের ফলে শিশুদের মধ্যে মানসিক চাপ লক্ষ্য করা যায়। তাই ১০ দিন ব্যাগ বিহীন ক্লাশের ব্যবস্থাও করা হয়েছে।

তিনি বলেন, আজকের শিশুরা দেশের ভবিষ্যৎ। তাই শিশুদের ছোট বেলা থেকেই চিরাচরিত পাঠ্যক্রমের পাশাপাশি তাদের অন্যের দুঃখ, অনুভূতি বোঝা এবং সবাইকে নিয়ে একসাথে চলার মানসিকতা তৈরী করতে হবে। সহর্ষ পাঠ্যক্রমও এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। বর্তমানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আমাদের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা ব্যবস্থা পুনরুদ্ধারে কাজ করছেন। সেই লক্ষ্যে রাজ্য সরকারও শিক্ষাব্যবস্থায় উদ্ভাবনী উদ্যোগ নিয়ে বিভিন্ন পরিকল্পনা বাস্তবায়ণ করছে। তিনি বলেন, রেডক্রস সোসাইটির সদস্যরা মানবিক মূল্যবোধ নিয়ে নি:স্বার্থভাবে যুদ্ধ ক্ষেত্রে, বিপর্যয়ের সময় আর্তদের সেবায় নিয়োজিত থাকেন। তাদের সারা বিশ্বে সেবামূলক কাজে খ্যাতি রয়েছে। এক্ষেত্রে বিপর্যয় মোকাবিলায় তিনি রাজ্যের রেডক্রস সোসাইটির শাখার সদস্যদের একটি টিম গঠন করার পরামর্শ দেন।

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, মানুষ হচ্ছে শ্রেষ্ঠ জীব। মানবসেবায় সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। রাজ্যের হাসপাতালগুলিতে স্বাস্থ্য কর্মীরা নিরলসভাবে চিকিৎসা পরিষেবা দিয়ে যাচ্ছেন। সেখান থেকে প্রতিদিন বহু রোগী সুস্থ হয়ে ঘরে ফিরছেন। কিন্তু সেগুলি প্রশংসিত হয়না। ভালো কাজ প্রশংসা করা উচিত বলে মুখ্যমন্ত্রী অভিমত ব্যক্ত করেন। সমালোচনা করার ক্ষেত্রেও মানবিকতাবোধ থাকা প্রয়োজন। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর মার্গ দর্শনে রাজ্য সরকার স্বচ্ছতার সাথে কাজ করছে। রাজ্যে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কৃষি, পর্যটন, খেলাধুলা প্রভৃতি ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়ন হচ্ছে। সেক্ষেত্রে জনপ্রতিনিধিগণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রক্তের চাহিদা ও যোগানের মধ্যে সামঞ্জস্য থাকতে হবে। যাতে পর্যাপ্ত রক্ত মজুত থাকে। অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী রেডক্রস সোসাইটির সেবামূলক কাজের বিভিন্ন দিক উল্লেখ করেন। প্রসঙ্গক্রমে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা সম্পর্কে বলতে গিয়ে তিনি জানান, ভারত মানবতাবাদ লঙ্ঘনের জন্য পাকিস্তানকে যোগ্য জবাব দিয়েছে।

মুখ্যমন্ত্রী ইন্ডিয়ান রেডক্রস সোসাইটির ত্রিপুরা শাখার এধরণের উদ্যোগ আগামীদিনেও জারি থাকবে বলে আশা প্রকাশ করেন। এই ধরণের উদ্যোগ সমাজে ইতিবাচক প্রভাব বিস্তার করবে বলে তিনি মনে করেন। অনুষ্ঠানে এছাড়াও বক্তব্য রাখেন ইন্ডিয়ান রেডক্রস সোসাইটির রাজ্য শাখার চেয়ারম্যান বিমল কান্তি রায়। স্বাগত বক্তব্য রাখেন শাখার সাধারণ সম্পাদক চন্দন দেবনাথ। মঞ্চে এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন পশ্চিম ত্রিপুরা জেলার জেলাশাসক ডা. বিশাল কুমার। অনুষ্ঠানে ধন্যবাদসূচক বক্তব্য রাখেন রাজ্য শাখার সহ সভাপতি পরমানন্দ সরকার ব্যানার্জী। উল্লেখ্য, ওয়ার্ল্ড রেডক্রস ডে উদযাপন উপলক্ষ্যে ত্রিপুরা রাজ্য শাখা কার্যালয়ে গতকাল ৩৪ জন স্বেচ্ছায় রক্তদান করেন। ওয়াল্ড রেডক্রস সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা হেনরী ডুনান্ট-এর জন্মদিন উদযাপন উপলক্ষে এই দিবসটি পালন করা হয়।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *