আগরতলা: রাজ্য সরকারের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে মহিলাদের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা দেওয়া। রাজ্যে বর্তমানে লাখপতি দিদি হয়েছেন ১,০৮,২৮১ জন। যা শতকরা অনুপাতে লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ৯৫%। আজ আগরতলার রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবনে টিআরএলএম (ত্রিপুরা গ্রামীণ জীবিকা মিশন) এর অধীনে স্বসহায়ক গোষ্ঠীর মহিলাদের স্বশক্তিকরণের লক্ষ্যে ‘সমৃদ্ধি’ কার্যক্রমের সূচনা করে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা।

অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা বলেন, ভারতবর্ষের মোট জনসংখ্যার ৫০% হচ্ছেন মহিলা। ত্রিপুরা রাজ্যেও প্রায় ৫০% মহিলা। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি মহিলাদের স্বশক্তিকরণের জন্য বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। আজ এই অনুষ্ঠানে কয়েকজন লাখপতি দিদির ইতিকথা শুনেছি। তাদের কথা শুনে আমরা অভিভূত। যে ভাবনা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী লাখপতি দিদি তৈরির লক্ষ্য নিয়েছেন আজ সেটা প্রতীয়মান হয়েছে। আমাদের দেশ তথা রাজ্যের প্রায় ৭৫% গ্রামীণ এলাকা। আর গ্রামীণ এলাকার মহিলাদের আর্থ সামাজিক অবস্থার উন্নতি না হলে রাজ্য বা দেশ উন্নত হবে না। সমাজের অন্তিম ব্যক্তি পর্যন্ত বিভিন্ন উন্নয়নমূলক স্কিম পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করছে সরকার। এই লক্ষ্যে প্রতি ঘরে সুশাসন কার্যক্রম করা হয়েছে। এর উদ্দেশ্যে হচ্ছে সকলের কাছে প্রশাসনের সুযোগ সুবিধাগুলি পৌঁছে দেওয়া।

আলোচনায় মুখ্যমন্ত্রী বলেন, পুরুষদের পাশাপাশি মহিলাদেরও এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। যেটার উপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। অন্যথায় দেশ সামনের দিকে এগিয়ে যাবে না। ভারতবর্ষের অর্থনীতি ১১তম স্থান থেকে এখন ৪র্থ স্থানে চলে এসেছে। আগামীতে ৩য় স্থানে চলে আসবে। প্রধানমন্ত্রী বলছেন ২০৪৭ এ ৩০ প্লাস ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছতে হবে আমাদের। আমি নিশ্চিত সেই লক্ষ্যে আমরা পৌঁছতে পারবো। আর ২০৫০ এর মধ্যে সারা পৃথিবীর মধ্যে অর্থনীতির দিক দিয়ে শ্রেষ্ঠ আসন নেবে ভারত। এজন্য পরিকল্পনার মাধ্যমে বিভিন্ন কাজ রূপায়িত হচ্ছে। লাখপতি দিদির স্বপ্ন বাস্তবায়িত হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী যে লক্ষ্যমাত্রা দিয়েছেন তার দুই তৃতীয়াংশ লক্ষ্য পূরণ হয়েছে। আমাদের টার্গেট ছিল প্রায় ১ লক্ষ ১৮ হাজার। এরমধ্যে ১ লক্ষ ৮ হাজার হয়ে গেছে। বিকশিত ভারত গড়ে তোলার লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী যে লক্ষ্যমাত্রা দিয়েছেন আমরাও বিকশিত ত্রিপুরা ২০৪৭ এর রূপরেখা ঘোষণা করেছি।

মুখ্যমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে আরো বলেন, বর্তমানে আমাদের রাজ্যে প্রায় ৫৪,১৭০টি স্বনির্ভর দল রয়েছে। গ্রামীণ সংগঠন রয়েছে প্রায় ২,৪৭১টি। ক্লাস্টার স্টোর রয়েছে প্রায় ১৭৪টি। সবমিলিয়ে রাজ্যে এখন স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলিতে প্রায় ৪,৮৬,০০০ জন মহিলা রয়েছেন। আমাদের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে মহিলাদের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা দেওয়া। এখন পুরুষদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মহিলারাও কাজ করছেন। টিআরএলএম এর অধীনে থাকা মহিলা স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলিকে এখন পর্যন্ত ১,৭৭৩ কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ দেওয়া হয়েছে। রাজ্যে ২,৭৯২টি প্রডিউসার গ্রুপ আছে। ১৯২টি নন ফার্ম কালেক্টিভ তৈরি করা হয়েছে। মাইক্রো এন্টারপ্রাইজ বর্তমানে ৩৮,৭৭৫টি আছে। ৬৬টি ইন্টিগ্রেটেড ফার্মিং ক্লাস্টার তৈরি করা হয়েছে। রাজ্যে লাখপতি দিদি ১,০৮,২৮১ জন হয়েছেন। শতকরা অনুপাতে লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ৯৫% লাখপতি দিদি তৈরি হয়েছেন। আগামীদিনে যেটা ১০০% বা তার বেশিও হতে পারে।

মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা বলেন, কিছুদিন আগে দেশের তৃতীয় পূর্ণ সাক্ষর রাজ্য হিসেবে ঘোষিত হয়েছে ত্রিপুরা রাজ্য। শিক্ষা, আর্থ সামাজিক অবস্থা সহ সবদিক দিয়ে উন্নয়ন হচ্ছে ত্রিপুরায়। ২০১৮ সাল থেকে গ্রামীণ জীবিকা মিশনে কার্যক্রমের ভিত্তিতে প্রায় ৮টি জাতীয় পুরস্কার পেয়েছে। এছাড়াও কাজের নিরিখে সেরা অবদান রাখার জন্য রাজ্যের বিভিন্ন জেলা জাতীয় পুরস্কার অর্জন করেছে। মুখ্যমন্ত্রী আরো জানান, দুঃস্থ মহিলাদের থাকার জন্য ৩টি বৃদ্ধাশ্রম নির্মাণের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। মহিলাদের সার্বিক কল্যাণের জন্য কাজ করছে বর্তমান সরকার।

অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গ্রামোন্নয়ন দপ্তরের সচিব অভিষেক সিং, অর্থ দপ্তরের সচিব অপূর্ব রায়, নাবার্ডের জিএম অনিল এস কোটমায়ার, ত্রিপুরা স্টেট কো অপারেটিভ লিমিটেড ব্যাংকের চেয়ারম্যান নাগাধিরাজ দত্ত, টিআরএলএম এর সিইও তড়িৎ কান্তি চাকমা সহ বিভিন্ন ব্যাংকের আধিকারিক ও অন্যান্য অতিথিগণ।

অনুষ্ঠানে কর্মক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রাখার জন্য পুরস্কৃত করা হয় বিভিন্ন ব্যাংক ও জেলাশাসকদের। উল্লেখ্য, এই কার্য্যক্রমে বিভিন্ন গ্রামীণ স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের জন্য ১৯৮.৬৩ কোটি টাকার ব্যাংক ঋণ অনুমোদন এবং ১০০ কোটি টাকার কমিউনিটি ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড প্রদান করা হয়েছে।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *