আগরতলা: রাজ্যে হারিয়ে যাওয়া পুজো পার্বন পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করছে রাজ্য সরকার। রাজ্যের জনজাতি অংশের মানুষের প্রতিটি ঐতিহ্যবাহী নৃত্যকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে এবং প্রসার ও প্রচার করতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে জনজাতি কল্যাণ দপ্তরকে।

আজ আগরতলার স্বামী বিবেকানন্দ ময়দানে আয়োজিত দুদিন ব্যাপী গড়িয়া ও বর্ষবরণ উৎসব ২০২৫ এর সূচনা করে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা। তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের উদ্যোগে জনজাতি কল্যাণ দপ্তর, পশ্চিম ত্রিপুরা জিলা পরিষদ ও পানতই স্পোর্টিং সোসাইটির সহযোগিতায় এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা বলেন, আজ রাজ্যবাসীর উদ্দেশ্যে একটা সুখবর জানাতে চাই। প্রশাসনিক কাজে উৎকর্ষতার স্বীকৃতি স্বরূপ আজ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির হাত থেকে প্রাইম মিনিস্টার অ্যাওয়ার্ড ফর এক্সেলেন্স পুরস্কার পেয়েছে রাজ্যের গোমতী জেলা ও গঙ্গানগর ব্লক। এটা আমাদের জন্য খুবই আনন্দের বিষয়। এজন্য আমি প্রধানমন্ত্রীকে রাজ্যবাসীর পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানাই। আজ এখানে গড়িয়া ও বর্ষবরণ উৎসবে জাতি জনজাতির একটা মেলবন্ধন তৈরি হয়েছে। আমাদের বাঙালিদের যেমন অন্যতম প্রধান উৎসব দুর্গাপুজো, ঠিক তেমনি ত্রিপুরী, রিয়াং ও ককবরক ভাষাভাষী জনজাতিদের প্রধান উৎসব এই গড়িয়া পুজো। গড়িয়া পুজোকে যাতে আরো বেশি করে উদযাপন করা যায় সেজন্য আমাদের সরকার দুদিনের সরকারি ছুটি ঘোষণা করেছে। যা আগে মাত্র একদিন ছিল। আমরা চাই সবাই যাতে আনন্দে থাকতে পারে।

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আমাদের পুজো পার্বন যেগুলি হারিয়ে যাচ্ছে সেগুলি পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করছে রাজ্য সরকার। চড়ক পুজা, উত্তর ভারতের দশেরা, আসামের বিহু, বিজু উৎসব, পশ্চিম ভারতের সমুদ্র পুজা, দক্ষিণ ভারতের উনম, নবান্ন উৎসব সহ ইত্যাদি উৎসব বর্ষবরণ ও বর্ষবিদায় উপলক্ষে বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন নামে আয়োজন করা হয়। এরমধ্যে জনজাতিদের হজাগিরি নৃত্য, মামিতা, বিজু নৃত্য, গড়িয়া, জুম নৃত্য, লেবাং বুমানি, ওয়াংগালা নৃত্য, মশক, গালা নৃত্য, চেরা নৃত্য, রননৃত্য, হৈহুক নৃত্য সহ প্রতিটি ঐতিহ্যবাহী নৃত্যকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে এবং প্রসার ও প্রচার করতে হবে। এজন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে জনজাতি কল্যাণ দপ্তরকে।এবারও আমি জনজাতিদের বিভিন্ন উৎসবে অংশগ্রহণ করেছি। বিভিন্ন বিষয়ে তাদের সঙ্গে অমিল থাকলেও আমরা সবাই এক ও ঐক্যবদ্ধ। আলোচনায় মুখ্যমন্ত্রী আরো বলেন, এবারের বাজেটেও জনজাতিদের কল্যাণে প্রচুর আর্থিক সংস্থান রাখা হয়েছে। জনজাতিদের বাদ্যযন্ত্রের উন্নয়নে তিন কোটি টাকা রাখা হয়েছে। এর পাশাপাশি আমাদের হারিয়ে যাওয়া পুতুল নাচ, খেলাধুলা, যাত্রাপালা, কীর্তন ইত্যাদি ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি সংরক্ষণের বিষয়ে রাজ্য সরকার খুবই আন্তরিক। ডাঃ সাহা জানান, তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের উদ্যোগে ৫০১টি বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মসুচি পালন করা হয়েছে। ১২২টি ইভেন্ট করা হয়েছে। ১০১টি সাংস্কৃতিক সংগঠনকে আর্থিকভাবে সহায়তা করা হয়েছে। ১০ হাজার শিল্পী বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেছেন। ৩৩০ জন শিল্পীকে রাজ্যের বাইরে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়াও রাজ্যভিত্তিক কীর্তন আয়োজন করার জন্য চিন্তাভাবনা করছে সরকার।

অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জনজাতি কল্যাণ মন্ত্রী বিকাশ দেববর্মা, সমবায় মন্ত্রী শুক্লাচরণ নোয়াতিয়া, আগরতলা পুর নিগমের মেয়র তথা বিধায়ক দীপক মজুমদার, পশ্চিম ত্রিপুরা জিলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাধিপতি বিশ্বজিত শীল, তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের বিশেষ সচিব দেবপ্রিয় বর্ধন, অতিরিক্ত জেলাশাসক মেঘা জৈন, রাজ্যভিত্তিক সাংস্কৃতিক উপদেষ্টা কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান সুব্রত চক্রবর্তী সহ অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিগণ।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *