আগরতলা: রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নিয়েছে বর্তমান সরকার। ত্রিপুরা রাজ্যে একটা মেডিকেল হাব তৈরি করার লক্ষ্যে কাজ করছে সরকার।
চিকিৎসার জন্য কাউকে যাতে বাইরে যেতে না হয় সেই ব্যবস্থা করছে সরকার। কারণ ভারতীয় জনতা পার্টি নেতৃত্বাধীন সরকার একটা দায়বদ্ধতার সরকার। তিনি বলেন, পূর্বতন সরকার সমাজতন্ত্র বলতে বলতে নিজেরাই সমাজের শত্রু হয়ে গেছে। আজ হাঁপানিয়াস্থিত ত্রিপুরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বিবেকানন্দ অডিটরিয়ামে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা। এই উপলক্ষে রক্তদান শিবির, বনমহোৎসব, হিপ ও হাঁটু প্রতিস্থাপন রোগীদের বিনামূল্যে সামগ্রী বিতরণ ও ১৪ বছরের কম ছেলেমেয়েদের চশমা বিতরণ করা হয়।
রোটারি ইন্টারন্যাশনাল ক্লাব, ত্রিপুরা মেডিকেল কলেজ ও ত্রিপুরা মেডিকেল কলেজ কর্মচারী সংগঠনের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা বলেন, আমার জীবনের একটা গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় আমি ত্রিপুরা মেডিকেল কলেজে কাটিয়েছি। এখানে আসলে মনে হয় যে নিজের ঘরে এসেছি। অনেক ঘাত প্রতিঘাত পেরিয়ে আজকে একটা জায়গায় আসতে পেরেছে ত্রিপুরা মেডিকেল কলেজ। আগামীদিনে এই প্রতিষ্ঠানটির নিশ্চয় আরো উন্নয়ন হবে। উত্তর পূর্বাঞ্চলের মধ্যে নিজের কৃতিত্বের কারণে বর্তমানে একটা বিশেষ স্থানে চলে এসেছে ত্রিপুরা মেডিকেল কলেজ।
পরিকাঠামোগত দিক দিয়ে এখন নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছে এই মেডিকেল কলেজ। যদিও শুরুর দিকে ফ্যাকাল্টি সমস্যায় পড়তে হয়েছে। রিমস ও আসাম থেকেও ফ্যাকাল্টি নিয়ে আসতে হয়েছিল। তবে এখন আমাদের নিজেদের ফ্যাকাল্টি হয়েছে। আমাদের ছেলেমেয়েরাও অভিজ্ঞতা অর্জন করছে। বর্তমানে এটি একটি পূর্ণাঙ্গ মেডিকেল কলেজ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছে।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, আজ এখানে রক্তদানেরও ব্যবস্থা করা হয়েছে। কারণ রক্তের কোন ধর্ম নেই। আমরা সবাই এক, আমরা সবাই মানুষ। আর সেটা রক্তদানের মাধ্যমে ভালোভাবে প্রতিষ্ঠিত করা যায়। জনসংখ্যার অনুপাতে প্রায় ১৫% মানুষের নেগেটিভ রক্ত থাকে। সাধারণত পুরুষরা ৩ মাস অন্তর এবং মহিলারা ৪ মাস অন্তর রক্ত দিতে পারেন। রক্ত দিলে নতুন রক্ত তৈরি হয় এবং শরীরও ভালো থাকে। অপারেশনের সময় চিকিৎসকদের অন্তত ২ ইউনিট রক্তের প্রয়োজন হয়। রাজ্যে বর্তমানে ১৪টি ব্লাড ব্যাংক রয়েছে। এরমধ্যে ১২টি সরকারি ও ২টি বেসরকারি। রাজ্যে এখন রক্তের পৃথকীকরণ করা যায়। তিনি আরো বলেন, ২০১৮ সালে রাজ্যে বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকার তৈরির পর স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
বর্তমানে আগরতলা সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৯টি সুপার স্পেশালিটি চালু করা হয়েছে। প্রায় ২৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে কর্পোরেট ধাঁচে সুপার স্পেশালিটি করা হয়েছে। যদিও বিগত কয়েক দশকে স্বাস্থ্যের উন্নয়নে নজর দেওয়া হয় নি। তিনি বলেন, রাজ্য সরকার বৃক্ষ রোপণের উপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে। পরিবেশের জন্য বৃক্ষ রোপণের প্রয়োজন রয়েছে। একটা পরিণত গাছ প্রতি বছরে অক্সিজেন দেয় প্রায় ২৬০ পাউন্ড। আর কার্বন ডাই অক্সাইড চুষে নেয় প্রায় ৪৮ পাউন্ড। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এক পেড় মা কি নাম শুরু করেছেন। প্রকৃতি আমাদের বেঁচে থাকার রসদ দেয়। ডাঃ সাহা বলেন, আগে বিভেদের রাজনীতি হয়েছে রাজ্যে। কর্মচারী সংগঠনগুলিকে দিয়ে জিন্দাবাদ জিন্দাবাদ বলানো হতো। কিন্তু আমাদের সরকার কর্মচারীদের ডিএ বৃদ্ধি করেছে এবং তাদের স্বার্থ সুরক্ষায় গুরুত্ব দিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, আজকাল প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অনেক কথা বলছেন। যদিও তারা কি করেছেন আমরা সবাই জানি। তাদের কাজই হচ্ছে কিভাবে পেছন থেকে টেনে রাখা যায় সেটা নিয়ে চিন্তা করা। তাদের সময়ে অনিয়ম করে ১০,৩২৩ চাকরি দেওয়া হয়েছে।
কিন্তু আমাদের বর্তমান সরকার স্বচ্ছতার সঙ্গে চাকরি প্রদান করছে। অথচ তাদের আমলে পার্টি অফিস থেকে অফার বিতরণ করা হত। ডেকে ডেকে বাড়িতে অফার দেওয়া হত। বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকার দায়বদ্ধতা নিয়ে মানুষের জন্য কাজ করছে। আর সমাজতন্ত্র বলতে বলতে ওরা নিজেরাই এখন সমাজের শত্রু হয়ে গেছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যে মেডিকেল হাব হচ্ছে। ৭ মাসের মধ্যে ডেন্টাল কলেজ স্থাপন করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নিজে ডেন্টাল কলেজের উদ্বোধন করেছেন। বর্তমানে এই কলেজে ৬৩টি আসন রয়েছে। কোন রোগীকে চিকিৎসার জন্য যাতে আর বাইরে যেতে না হয় সেই ব্যবস্থা করছে রাজ্য সরকার। এর পাশাপাশি ড্রাগসের বিরুদ্ধে সকলকে আরো সচেতন হওয়ার আহ্বান রাখেন মুখ্যমন্ত্রী। একইভাবে এইচআইভি এইডস সম্পর্কেও সচেতনতার উপর গুরুত্ব তুলে ধরেন।
অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সোসাইটি ফর ত্রিপুরা মেডিকেল কলেজের চেয়ারম্যান ডাঃ প্রমথেশ রায়, চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার স্বপন সাহা, ত্রিপুরা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডাঃ অরিন্দম দত্ত, রোটারি ক্লাব ত্রিপুরা চ্যাপ্টারের সভাপতি ডাঃ দামোদর চ্যাটার্জি, ত্রিপুরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সুপার ডাঃ জয়ন্ত কুমার পোদ্দার সহ অন্যান্য বিশিষ্ট চিকিৎসকগণ।