আগরতলা।।শুধুমাত্র একদিন রক্তদান দিবস পালন করলেই মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করা যাবেনা। এরজন্য সারা বছর ধরে এই বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।

রক্তদান একটি সামাজিক দায়িত্ব এবং এর প্রয়োজনীয়তা কেবল একটি নির্দিষ্ট দিনে সীমাবদ্ধ নয়। শনিবার আগরতলার প্রজ্ঞাভবনে বিশ্ব রক্তদাতা দিবসের উদ্বোধন করে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা) মানিক সাহা একথা বলেন। আজকের অনুষ্ঠানের শুরুতে মুখ্যমন্ত্রী সহ উপস্থিত অতিথিগণ রক্তের গ্রুপ আবিস্কারক ডা. কার্ল ল্যান্ডস্ট্রেইনারের প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ অর্পণ করেন। এই অনুষ্ঠানে ত্রিপুরা স্টেট ব্লাড ট্রান্সফিউশন কাউন্সিলের ওয়েবপেজ ‘ত্রিপুরা রক্তকোষ’ এর আনুষ্ঠানিক সূচনাও হয়। এছাড়াও ২০২৫-২৬ সালের জন্য স্বেচ্ছা রক্তদানের ক্যালেন্ডার প্রকাশ, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ দপ্তরের বার্ষিক মুখ্যপত্র ‘স্বাস্থ্য সংবাদের’ প্রকাশ এবং ২০২৪-২৫ সালে স্বেচ্ছা রক্তদান শিবির আয়োজনকারী শ্রেষ্ঠ বিভিন্ন সংগঠনকে সংবর্ধনা জ্ঞাপন করা হয়।

অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রক্তের কোন বিকল্প নেই। এর থেকে মহৎ কাজ আর নেই। রক্তদান একটি মানবিক কাজ এবং এটি সমাজের সকলের জন্য উপকারী। একজন ব্যক্তি রক্তদানের মাধ্যমে তিনজনের জীবন বাঁচাতে সক্ষম হন। পাশাপাশি রক্ত গ্রহীতার হৃদয়েও তিনি স্থান করে নিতে পারেন। রক্তদান করলে বিনা পয়সায় অনেক পরীক্ষাও রক্তদাতার সম্পন্ন হয়ে যায়। শল্য চিকিৎসা, দুর্ঘটনা, প্রসবকালীন সময়, ক্যান্সার, থ্যালাসেমিয়া ইত্যাদি বিভিন্ন রোগের চিকিৎসার সময় রক্তের প্রয়োজনীয়তা লক্ষ্য করা যায়। রক্তদান দিবসের প্রধান উদ্দেশ্যই হচ্ছে স্বেচ্ছা রক্তদানের গুরুত্ব সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করা। সেই সঙ্গে মুমূর্ষ রোগীর জীবন বাঁচাতে স্বেচ্ছা রক্তদাতাদের মানবিক আবেদনকে স্বীকৃতি দেওয়া। এবছরের এই দিবসের ভাবনা হচ্ছে ‘রক্ত দিন আশা জাগান চলুন সবাই মিলে জীবন বাঁচাই’।মুখ্যমন্ত্রী বলেন, সুস্থ পুরুষ এবং মহিলা উভয়ই বছরে যথাক্রমে ৪ বার এবং ৩ বার রক্ত দিতে পারেন। তবে রক্তদান এবং মজুতের মধ্যে সমতা বজায় থাকা দরকার। রাজ্যের মোট জনসংখ্যার ১ শতাংশ রক্ত ব্লাড ব্যাঙ্কে থাকা প্রয়োজন। সরকারের রক্ত সঞ্চালন পর্ষদ এই কাজটি দক্ষতার সাথে করে আসছে।

বর্তমান রাজ্য সরকার মানুষের স্বাস্থ্য সমস্যার সমাধানে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করে চলছে। তিনি বলেন, বর্তমানে রাজ্যে ব্লাড ব্যাঙ্ক রয়েছে ১৪টি, ব্লাড কম্পোনেন্ট সেপারেশন ইউনিট রয়েছে ৬টি, ব্লাড স্টোরেজ সেন্টার রয়েছে ৭টি, ৬টি জেলা হাসপাতালে ব্লাড ব্যাঙ্ক চালু রয়েছে। সিপাহীজলা জেলার বিশালগড় মহকুমা হাসপাতালে ব্লাড ব্যাঙ্ক চালু রয়েছে। পশ্চিম ত্রিপুরা জেলায় ৪টি ব্লাড ব্যাঙ্ক রয়েছে। রাজ্য ও জেলাস্তরে ৪টি ব্লাড কম্পোনেন্ট সেপারেশন ইউনিট রয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যে রক্তের চাহিদা রক্তদানের মাধ্যমেই পূরণ করা সম্ভব। তাই এই কর্তব্য পালনে সমাজের সবাইকে স্বেচ্ছায় ও নিয়মিত রক্তদানে এগিয়ে আসতে হবে।অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য দপ্তরের সচিব কিরণ গিত্যে বলেন, রক্তদান মানুষের একটি মহান কর্তব্য। এই দিবসের উদ্দেশ্য একটাই রক্তের প্রয়োজনীয়তা মেটানো।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন স্বাস্থ্য দপ্তরের অধিকর্তা ডা. তপন মজুমদার। ধন্যবাদসূচক বক্তব্য রাখেন ত্রিপুরা স্টেট এইডস কন্ট্রোল সোসাইটির প্রোজেক্ট ডিরেক্টর ডা. সমর্পিতা দত্ত। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন পরিবার কল্যাণ ও রোগ প্রতিরোধমূলক দপ্তরের অধিকর্তা ডা. অঞ্জন দাস, হেলথ এডুকেশন দপ্তরের অধিকর্তা ডা. এইচ পি শর্মা, জাতীয় স্বাস্থ্য মিশন ত্রিপুরার মিশন ডিরেক্টর প্রশান্ত বাদল নেগী, ডা. বিশ্বজিৎ দেববর্মা প্রমুখ।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *