আগরতলা, ৮ জুন: সুস্থ স্বচ্ছ প্রশাসনিক ব্যবস্থা রাজ্যের মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে কাজ করছে সরকার। রাজ্য সরকারের লক্ষ্য হচ্ছে রাজ্যের সমস্ত গ্রাম ও শহরের উন্নয়ন সাধন করা। সেই দিশায় কাজ করছে সরকার। জনজীবনের অগ্রাধিকারের বিষয়গুলিকে নজরে রেখে কাজ করা সরকারের অন্যতম লক্ষ্য।
এর পাশাপাশি ত্রিপুরায় এইমসের মতো স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রদান করার লক্ষ্যে কাজ করছে সরকার। আইএলএস হাসপাতাল সংলগ্ন এলাকায় ১০০ আসনের অত্যাধুনিক চক্ষু হাসপাতাল গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
আজ বামুটিয়া আর ডি ব্লকের অধীন তুফানিয়া লুঙ্গা টি এস্টেট জেবি স্কুলে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা। এই উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে জমির পাট্টা বিলি, প্রশাসনিক শিবির, নেশামুক্তি অভিযান সম্পর্কে সচেতনতামূলক র্যালি, চারা রোপণ, রক্তদান শিবির ও কৃষি সহায়ক সামগ্রী বিতরণ কর্মসূচি করা হয়।
অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির জন্মদিন উপলক্ষে ২০২২ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর রাজ্যে 'প্রতি ঘরে সুশাসন' কার্যক্রম শুরু করা হয়েছিল। এই অভিযানের মাধ্যমে প্রায় ২৩ লক্ষ মানুষের কাছে বিভিন্ন ধরণের প্রশাসনিক সুযোগ সুবিধা পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা হয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে বিভিন্ন কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারি প্রকল্পের সুবিধা প্রদান। একইভাবে ২০২৩ এর নভেম্বরে শুরু করা হয় 'প্রতি ঘরে সুশাসন.২' কার্যক্রম। এতে মানুষ বুঝতে পারছে এই সরকার মানুষের জন্য কতটা আন্তরিক। মানুষ আমাদের নির্বাচিত করে জনপ্রতিনিধি করেছে। সেজন্য মানুষের প্রতি আমরা দায়বদ্ধ। মানুষের মৌলিক সমস্যা নিরসন করা এই সরকারের অন্যতম লক্ষ্য। এই দুই পর্যায়ে বিভিন্ন ব্লক, পুরসভা, নগর পঞ্চায়েত, ভিলেজ কমিটি, মহকুমা মিলিয়ে প্রায় ৪,৬০০ এর অধিক শিবির অনুষ্ঠিত হয়েছে। সারা ভারতবর্ষে আমাদের এই কার্যক্রম প্রশংসিত হয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, শুধু বড় বড় বিল্ডিং তৈরি করা সরকারের লক্ষ্য নয়। আমাদের সরকার মানুষের আর্থ সামাজিক উন্নয়ন, রাস্তাঘাটের উন্নয়ন, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়ন সহ সব ক্ষেত্রে উন্নয়নের দিশায় কাজ করছে। ডাঃ সাহা বলেন, শুধু একটা শহর বা গ্রাম উন্নয়ন করে কাজের কাজ কিছুই হবে না। আমরা চাই রাজ্যের সমস্ত গ্রাম ও শহরের উন্নয়ন সাধন করতে। ২০৪৭ এর মধ্যে বিকশিত ভারত গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। আর আমরাও সেই দিশায় এগিয়ে যাচ্ছি। প্রতিটি রাজ্য উন্নত হলে দেশও উন্নত হবে। এতে প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্নও পূরণ হবে। বর্তমানে উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলির মধ্যে মাথাপিছু আয় এবং স্টেট জিএসটির ক্ষেত্রে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ স্থানে রয়েছে ত্রিপুরা। সবদিক দিয়েই এখন ভালো অবস্থানে রয়েছে ত্রিপুরা।
বক্তব্য রাখতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী আরো বলেন, কিছুদিন আগে দিল্লিতে উত্তর পূর্ব ইনভেস্ট সামিট অনুষ্ঠিত হয়। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির উপস্থিতিতে সামিটে দেশ ও বিদেশের বহু বিনিয়োগকারী অংশ নেন। এই সামিটে উত্তর পূর্বাঞ্চলের জন্য ৩০,০০০ কোটি টাকার মৌ স্বাক্ষরিত হয়েছে। আর শুধু ত্রিপুরার জন্য মৌ হয়েছে ১৫,৮০০ কোটি টাকার। বর্তমানে ত্রিপুরায় আইন শৃঙ্খলা ব্যবস্থা যথেষ্ট ভালো রয়েছে। দেশের ২৮টি রাজ্যের মধ্যে আইন শৃঙ্খলা দিক দিয়ে বেশ ভালো জায়গায় রয়েছে ত্রিপুরা। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আমাদের হিরা মডেল দিয়েছেন। এতে জাতীয় সড়ক, ইন্টারনেট, রেলওয়ে, এয়ারওয়ের যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে। এসবের সুফল পাচ্ছেন রাজ্যের মানুষ। বিনিয়োগকারীরা এখন আমাদের রাজ্যে আসতে চাইছেন। আমরা চাই মানুষের মৌলিক সমস্যা নিরসন করার। রাজ্যে মুখ্যমন্ত্রী জন আরোগ্য যোজনায় সমস্ত অংশের মানুষ সুবিধা পাচ্ছেন। প্রাণী সম্পদ, মৎস্য, নগর পরিকাঠামো ও দক্ষতা উন্নয়নের জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছে রাজ্য সরকার।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, গত ২৯ মে রাজ্যে বিকশিত কৃষি সংকল্প অভিযানের সূচনা হয়। আমাদের লক্ষ্য রয়েছে ১ লক্ষ ৭২ হাজারের অধিক কৃষককে এই প্রকল্পের সুবিধা দেওয়া। রাজ্যের মোট ৮৬৪টি গ্রাম পঞ্চায়েত ও ভিলেজ কমিটিতে একযোগে এই অভিযান করা হয়। এর পাশাপাশি এআই (আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স) এর মাধ্যমে কৃষি ক্ষেত্রের উন্নয়নে নয়া দিশা দেখিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। রাজ্যে ২০১৬ সালে কৃষকদের আয় ছিল মাত্র ৬,৫৮০ টাকা। আমাদের লক্ষ্য ছিল তাদের আয় দ্বিগুণ করা। বর্তমানে কৃষকদের আয় বেড়ে হয়েছে ১৩,৫৯০ টাকা। পঞ্চায়েতি রাজ ব্যবস্থায় আমাদের রাজ্য জাতীয় স্তরে ৭টি পুরস্কার পেয়েছে। ভালো কাজ করার নিরিখে গোমতী ও ধলাই জেলা জাতীয় পুরস্কার অর্জন করেছে। ত্রিপুরায় পঞ্চায়েতি রাজ ব্যবস্থার কাজকর্ম খতিয়ে দেখতে মহারাষ্ট্র ও আসাম থেকে প্রতিনিধি দল রাজ্যে এসে বিভিন্ন জায়গা পরিদর্শন করে কাজের প্রশংসা করেছেন।
মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা আরো বলেন, মানুষের কল্যাণে আমরা রাজ্যে ‘আমার সরকার’ পোর্টাল চালু করা হয়েছে। দিল্লিতে অনুষ্ঠিত মুখ্যমন্ত্রীদের কনক্লেভে এবিষয়ে আমাকে বক্তব্য রাখতে হয়েছে। আর প্রধানমন্ত্রী এই পোর্টালের ভুয়সী প্রশংসা করেছেন। সেই সঙ্গে রাজ্যে ই অফিস ব্যবস্থাপনা চালু হয়েছে। ত্রিপুরা এমন একটা রাজ্য যেখানে ক্যাবিনেট থেকে শুরু করে জেলা, মহকুমা ও ত্রিস্তর পঞ্চায়েতে পেপারলেস কাজকর্ম শুরু হয়েছে। জনগনের সুবিধার্থে সিএম হেল্পলাইন চালু করা হয়েছে। এছাড়াও মুখ্যমন্ত্রী সমীপেষু কার্যক্রমে সারা রাজ্যের মানুষ প্রতিনিয়ত তাদের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আসছেন। এতে মানুষ উপকৃত হচ্ছেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, চা শ্রমিকদের উন্নয়নে বিশেষ অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করছে রাজ্য সরকার। আমাদের সরকার আসার পর তাদের আর্থ সামাজিক অবস্থার উন্নয়নে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে। চা শ্রমিক কল্যাণ প্রকল্পে মোহনপুর মহকুমায় এখন পর্যন্ত ২৪১টি পাট্টা দেওয়া হয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী এদিন ফের একবার মাদক কারবারিদের বিরুদ্ধে হুশিয়ারি দেন। তিনি বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি নিয়ে কাজ করছে রাজ্য সরকার। মাদকের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের কোন অবস্থায় ছাড় দেওয়া হবে না। সমাজের সকল অংশের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে মাদকের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে। এর পাশাপাশি স্বেচ্ছা রক্তদানের গুরুত্ব নিয়েও আলোচনা করেন তিনি। রাজ্যে চিকিৎসা পরিষেবা সম্পর্কিত বিষয় নিয়েও বিস্তৃতভাবে আলোচনা করেন।
অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পশ্চিম ত্রিপুরা জেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাধিপতি বিশ্বজিত শীল, ত্রিপুরা চা উন্নয়ন নিগমের চেয়ারম্যান সমীর রঞ্জন ঘোষ, বামুটিয়া পঞ্চায়েত সমিতির চেয়ারম্যান দীপক কুমার সিংহ, অতিরিক্ত জেলাশাসক মেঘা জৈন, মোহনপুরের মহকুমা শাসক সুভাষ দত্ত সহ অন্যান্য অতিথিগণ।