আগরতলা: মাদকের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য একটা গণআন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। রাজ্যের বর্তমান সরকার মানুষের জন্য, মানুষের কল্যাণে কাজ করছে। আর রক্তদানের মাধ্যমে জীবন রক্ষার পাশাপাশি সমাজে পারস্পরিক সহযোগিতা, দায়িত্ববোধ এবং ঐক্যের বার্তাও পৌঁছে দেওয়া যায়।
আজ আগরতলায় পৃথক দুটি গণেশ পূজা ও স্বেচ্ছা রক্তদান কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা।
এদিন প্রথমে আইজিএম চৌমুহনী এলাকায় বিঘ্নহর্তা সামাজিক সংস্থার উদ্যোগে আয়োজিত কার্যক্রমে অংশ নেন মুখ্যমন্ত্রী। এই কার্যক্রমে উপস্থিত ছিলেন আগরতলা পুর নিগমের মেয়র তথা বিধায়ক দীপক মজুমদার, ভারতীয় জনতা পার্টির প্রদেশ সহ সভাপতি পাপিয়া দত্ত, ৮ বড়দোয়ালি মন্ডলের সভাপতি শ্যামল কুমার দেব, পুর নিগমের সেন্ট্রাল জোনের চেয়ারম্যান রত্না দত্ত, সাউথ জোনের চেয়ারম্যান অভিজিত মল্লিক সহ অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিগণ।
অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা গণেশ পূজা উপলক্ষে সমস্ত ত্রিপুরাবাসীকে হার্দিক অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করেন। তিনি বলেন, গণেশ পূজা ত্রিপুরায় প্রথমে এক দুটো শুরু হয়েছিল। সেখান থেকে আজ সারা রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় যথাযোগ্য মর্যাদায় গণেশ পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। মানুষের সেবার মাধ্যমেই ভগবানকে পাওয়া যায়। আমরা যারা সনাতন ধর্মে বিশ্বাস করি, সবাই জানি যে যেকোন অনুষ্ঠান হোক কিংবা পূজা প্রথমে গণেশ পূজা না করে সেটা সম্ভব হয় না। কোন কিছুর যাত্রা করতে হলেও গণেশ ঠাকুরের পূজা করতে হয়। এর ইতিহাস আমরা সবাই জানি। গণেশ ঠাকুর শিব ও পার্বতীর সন্তান। সনাতনী চিন্তাধারায় আমাদের যে পূজা হয় সেই পূজায় মন ও আত্মার মাধ্যমে ভগবানের সঙ্গে সংযোগ স্থাপিত হয়। অতি শ্রদ্ধার সঙ্গে আমরা ভগবানের আরাধনা করি। এতে মনের মধ্যে জমে থাকা দূষিত ভাবনাগুলি দূর হয়ে যায়।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ত্রিপুরায় ভারতীয় জনতা পার্টি নেতৃত্বাধীন সরকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে সারা রাজ্যে আস্তিকের পরিবেশ তৈরি হয়েছে। এতে পুজোকে কেন্দ্র করে আমরা সবাই একসঙ্গে মিলিত হচ্ছি। এখন পুজো অনেক বেড়েছে রাজ্যে। যেটা আগে আমরা দেখতে পায় নি। পুজোকে সামনে রেখে আজ এখানে রক্তদানের আয়োজন করা হয়েছে। রক্তদানের চাইতে মহৎ দান কিছু হয় না। জনসংখ্যার শতকরা অনুপাতে প্রায় ১৫ শতাংশ মানুষের শরীরে নেগেটিভ রক্ত থাকে। রোগীর অপারেশন, সিজারিয়ান ডেলিভারি, সড়ক দুর্ঘটনা এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে রক্তের প্রয়োজন হয়। এক্ষেত্রে ব্লাড ব্যাংকগুলিতে রক্তের পর্যাপ্ত মজুত থাকলে চিকিৎসকদের সুবিধা হয়। তাই রক্তদানের ক্ষেত্রে গণআন্দোলন গড়ে তোলার প্রয়োজন রয়েছে। ডাঃ সাহা বলেন, মানব সেবার চাইতে বড় পুজো কিছু হয় না। আমাদের সরকারও মানুষের জন্য, মানুষের কল্যাণে কাজ করছে। রাজনীতি একটা জায়গায় থাকবে। রাজনীতির মাধ্যমে সংখ্যাধিক্যের কারণে সরকারে বসলে মুখ্য উদ্দেশ্য হতে হবে মানুষের সেবা করা। জনপ্রতিনিধির কাজ হচ্ছে এলাকার কাজ করা, মানুষের জন্য কাজ করা।
মুখ্যমন্ত্রী আরো বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে লড়াই করছে বর্তমান সরকার। যুবক যুবতীরা মাদকের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে। তাই মাদকের বিরুদ্ধে একটা গণআন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। সিরিঞ্জের মাধ্যমে মাদক বা ড্রাগস নিলে অনেক সময় এইচআইভি সংক্রমণ হয়। সেখান থেকে এইডসও হতে পারে। এবিষয়ে সব মানুষকে আরো সচেতন ও সতর্ক হতে হবে। প্রয়োজনে যার যার এলাকায় আলোচনা সভা করা এবং নজরদারি রাখতে হবে। বক্তব্যে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, সামাজিক সংস্থাগুলিকে মানুষের জন্য কাজ করতে হবে। এর মাধ্যমেই সামাজিক সংস্থা নামের যথার্থতা বজায় থাকবে। মানুষকে তার জীবদ্দশায় সমাজের জন্য কিছু করে যেতে হবে। তবেই মানুষ তাকে মনে রাখবে।
এদিকে জ্যাকসন গেইটস্থিত একদন্ত সামাজিক সংস্থার উদ্যোগে আয়োজিত গণেশ পূজা ও স্বেচ্ছা রক্তদান কর্মসূচিতে মুখ্যমন্ত্রী ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন রাজ্যসভার সদস্য রাজীব ভট্টাচার্য, পুর কর্পোরেটর রত্না দত্ত সহ ক্লাব কর্মকর্তা ও বিশিষ্ট ব্যক্তিগণ। এই সামাজিক কর্মসূচি থেকে মুখ্যমন্ত্রীর ত্রান তহবিলের জন্য মুখ্যমন্ত্রীর হাতে ১ (এক) লক্ষ টাকার চেক তুলে দেন একদন্ত সামাজিক সংস্থার কর্মকর্তাগণ।