আগরতলা, ১৯ আগস্ট: প্রজাদের কল্যাণে এবং রাজ্যের উন্নয়নের জন্য সর্বদা সচেষ্ট ছিলেন মহারাজা বীরবিক্রম কিশোর মাণিক্য বাহাদুর। মাণিক্য রাজ বংশের শেষ রাজা হিসেবে তিনি ছিলেন একজন সত্যিকারের স্বপ্নদ্রষ্টা। রাজ্যের উচ্চশিক্ষা ক্ষেত্রে পরিকাঠামোর উন্নয়নে তাঁর ভূমিকা ছিল অনস্বীকার্য।

আজ আগরতলার রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবনে মহারাজা বীর বিক্রম কিশোর মানিক্য বাহাদুরের ১১৭তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা।

তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের উদ্যোগে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানের শুরুতে মুখ্যমন্ত্রী সহ অন্যান্য অতিথিগণ মহারাজা বীরবিক্রম কিশোর মাণিক্যের প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করেন। সেই সঙ্গে অনুষ্ঠানে মহারাজার জীবন ও কর্মকান্ড নিয়ে একটি তথ্যচিত্রও প্রদর্শিত হয়।

আলোচনায় অংশ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা বলেন, মাত্র ৩৯ বছর বয়সে প্রয়াত হয়েছিলেন মহারাজা বীরবিক্রম কিশোর মাণিক্য। তাঁর স্বল্প আয়ুষ্কালে রাজ্য ও রাজ্যবাসীর কল্যাণে নানা পরিকল্পনা নিয়েছিলেন তিনি। তাঁর দূরদর্শী চিন্তাভাবনায় রাজ্যে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ ব্যবস্থা, বাজার, ব্যাঙ্কিং পরিষেবা চালু হওয়ার পাশাপাশি অভূতপূর্ব উন্নতিও ঘটেছিল। তাঁর সামগ্রিক চিন্তাধারা রাজ্য ও প্রজা সাধারনের কল্যাণে নিবিষ্ট ছিল। বিদেশ ভ্রমণের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে রাজ্যের উন্নয়নে এক বিশাল কর্মযজ্ঞ শুরু করেছিলেন তিনি। হিন্দু ধর্মের অনুসারী হলেও সর্বধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিলেন তিনি। মহারাজার চিন্তাধারা ও আদর্শকে পাথেয় করে রাজ্যের সার্বিক উন্নয়নে ব্রতী হয়েছে বর্তমান সরকারও।

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বিগত রাজ্য সরকারগুলির সময়ে ত্রিপুরার রাজাদের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করা হয়নি। বর্তমান সরকারের আমলেই রাজ্যের একমাত্র বিমানবন্দরের নাম মহারাজা বীরবিক্রমের নামে নামাঙ্কিত করা হয়েছে। তাঁর জন্মদিন ১৯ আগস্টকে সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। তাই জন্মদিনে শুধুমাত্র মহারাজার প্রতিকৃতিতে মাল্যদান করে শ্রদ্ধা নিবেদন করলেই হবে না, তাঁর আদর্শ ও চিন্তাধারা সম্পর্কে বর্তমান প্রজন্মকে অবহিত করতে হবে। দেশভাগের সময় পূর্ব বাংলা থেকে আসা অগণিত মানুষকে তিনি উদারহস্তে খাদ্য ও আশ্রয়ের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। যার মাধ্যমে মহারাজার মানবিক মূল্যবোধের চরিত্র ফুটে উঠে। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে মাণিক্য রাজবংশের শেষ চার জন রাজার এক বিশেষ সম্পর্ক ছিল। মহারাজা বীর বিক্রমই কবিগুরুকে ভারত ভাস্কর উপাধিতে ভূষিত করেছিলেন।
মুখ্যমন্ত্রী আরো বলেন, বর্তমান সরকার রাজ্যের পুরোনো কৃষ্টি ও সংস্কৃতিকে ধারক ও বাহক করে রাজ্যের উন্নয়নকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চায়। সবকা সাথ, সবকা বিকাশ, সবকা প্রয়াস ও সবকা বিশ্বাস এটি শুধু স্লোগানই নয়, সাধারণ মানুষের প্রতি কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের দায়িত্ববোধকে প্রকাশিত করে। ভারতবর্ষ বহুবার বিদেশি শক্তির আক্রমণের শিকার হয়েছে। তারপরেও এদেশের কৃষ্টি, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য আজও বিদ্যমান। যা ভারতীয় হিসেবে আমাদের গর্বের।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি হর ঘর তিরঙ্গা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দেশমাতৃকার স্বাধীনতা লাভে এবং বর্তমানে দেশ রক্ষার কাজে যেসকল মহান ব্যক্তিগণ প্রাণ দিয়েছেন তাঁদের জীবন ও দর্শন সম্পর্কে বর্তমান প্রজন্মকে অবগত করার লক্ষ্যে এক অভূতপূর্ব কর্মসূচি গ্রহণ করেছেন। কারণ বীর শহীদদের বলিদানকে উপেক্ষা করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া কখনোই সম্ভব নয়। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ধর্ম, বর্ণ, জাতি, জনজাতি সকলেই এ দেশের সন্তান। সবার সার্বিক প্রচেষ্টার মধ্য দিয়েই মহান দেশ গড়ে তোলা সম্ভব।

অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সমবায় মন্ত্রী শুক্লাচরণ নোয়াতিয়া, সাংসদ কৃতি দেববর্মা, আগরতলা পুর নিগমের মেয়র তথা বিধায়ক দীপক মজুমদার, শান্তিকালী আশ্রমের সভাপতি পদ্মশ্রী চিত্তরঞ্জন মহারাজ, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ জগদীশ গণ চৌধুরী, রাজ্যভিত্তিক সাংস্কৃতিক উপদেষ্টা কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান সুব্রত চক্রবর্তী, তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের সচিব ড. পি. কে. চক্রবর্তী, অধিকর্তা বিম্বিসার ভট্টাচার্য সহ অন্যান্য জনপ্রতিনিধি এবং বিশিষ্ট ব্যক্তিগণ। এদিন অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী এবং সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব শচীন কলইকে এবছরের মহারাজা বীরবিক্রম স্মৃতি পুরস্কারে ভূষিত করা হয়। পুরস্কার হিসেবে তাকে স্মারক, মানপত্র এবং ১ লক্ষ টাকার চেক দেওয়া হয়।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *