আগরতলা: রাজ্যে পর্যটন শিল্পের আরো উন্নয়নে অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করছে বর্তমান সরকার। পর্যটন শিল্পকে সামনে রেখে রাজ্যে আর্থ সামাজিক উন্নয়ন করা সম্ভব হবে। রাজ্যের সার্বিক উন্নয়ন এবং মানুষের সমস্যা সমাধানের জন্য কাজ করছে এই সরকার। পরিকাঠামো উন্নয়ন, আবাসন, স্বাস্থ্য সুরক্ষা, শিক্ষা, গ্রামীণ মানুষের আয় বৃদ্ধিতে গুরুত্ব দিয়েছে সরকার।

আজ মন্দিরনগরী উদয়পুরের বনদুয়ারস্থিত ‘৫১ শক্তিপীঠ’ পার্ক’ এর শিলান্যাস ও ভূমিপূজন অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা। উল্লেখ্য, ত্রিপুরা পর্যটন উন্নয়ন নিগম লিমিটেডের আর্থিক সহযোগিতায় ৯৭.৭০ কোটি টাকা ব্যয়ে এই প্রকল্পের কাজ রূপায়ণ করা হবে। অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা বলেন, আজ আমাদের জন্য সত্যিই একটা আনন্দের দিন। আমাদের যশস্বী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। দিল্লিতে অনুষ্ঠিত মুখ্যমন্ত্রীদের কনক্লেভে তিনি বলেছেন প্রত্যেক রাজ্যে অন্তত একটা করে বিশ্বমানের পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলা। যাতে এই পর্যটন স্থলকে কেন্দ্র করে সারা বিশ্বের মানুষ জড়ো হবে।

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আজ শিলান্যাস ও ভূমিপূজন হওয়া ৫১ শক্তিপীঠ পার্ক গড়তে যাতে কাজের গুণমান বজায় রাখা হয়। যারা এই প্রকল্পের কাজের দায়িত্ব পেয়েছেন তারা যাতে নজর রেখে কাজ করেন। ৫১ শক্তিপীঠ সম্পর্কে সারা বিশ্বের মানুষকে অবগত করতে হবে। ৫১ শক্তিপীঠ নিয়ে পর্যটন দপ্তরের পক্ষ থেকে যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে তাতে বৈদেশিক মুদ্রার আয় বৃদ্ধি পাবে। দেশ বিদেশ থেকে পর্যটকরা এখানে আসবেন। সেই সঙ্গে এই এলাকায় আর্থিক ক্ষেত্রে উন্নয়ন হবে। আগামীতে এই পার্ক চালু হলে ব্যবসা ক্ষেত্রেও সমৃদ্ধি ঘটবে।

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এই পার্ক গড়ে উঠলে আগামীতে রাজ্যের জনজাতি গোষ্ঠীর কৃষ্টি সংস্কৃতি সম্পর্কেও মানুষ আরো জানতে পারবেন। এতে রাজ্যের জিডিপি আরো শক্তিশালী হবে। বর্তমানে স্টেট জিএসডিপি ক্ষেত্রে উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলির মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ স্থানে রয়েছে ত্রিপুরা। আর পর্যটনকে সামনে রেখে রাজ্যে আর্থ সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন সম্ভব। পর্যটন ও অন্যান্য ক্ষেত্রে উন্নয়নের মাধ্যমে রাজ্যের মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগও বাড়বে। এতে ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি শিল্পের উন্নয়নও হবে। পর্যটন ক্ষেত্র সমৃদ্ধ হলে পরিবহন শিল্পের উন্নয়ন হবে এবং ট্যুর অপারেটরগণ উপকৃত হবেন। পর্যটনের মাধ্যমে একে অপরকে জানা যাবে। কৃষ্টি সংস্কৃতি সম্পর্কেও জানার মাধ্যমে আত্মিক সম্পর্ক গড়ে উঠবে। আজ এই ৫১ শক্তিপীঠ পার্ক গড়ে তোলার জন্য বিশেষ অবদান রয়েছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির। এজন্য রাজ্যবাসীর পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী আরো বলেন, এই পার্ক গড়ে তোলার মধ্য দিয়ে পরিকাঠামো উন্নয়ন যেমন হোটেল নির্মাণ, পরিবহন নেটওয়ার্ক আরো বিস্তৃত হবে। এছাড়াও আমাদের রাজ্য ও দেশের ব্র্যান্ডভ্যালু, ভাবমূর্তি সম্পর্কে সারা বিশ্বের মানুষ জানতে পারবেন। এই প্রকল্পে পার্কিং, কমার্শিয়াল শপ, আরবান প্লাজা ইত্যাদি ব্যবস্থা থাকবে। পর্যটন মন্ত্রী বলেছেন এই প্রকল্পের কাজ আগামী ১৫ মাসে সম্পন্ন হবে। প্রধানমন্ত্রীর মার্গ দর্শনে রাজ্য সরকারও উন্নয়নের দিশায় এগিয়ে যাচ্ছে। তিনি আমাদের জাতীয় সড়ক, ইন্টারনেট, রেলওয়ে, এয়ারওয়ে উন্নয়নে দিশা দেখিয়েছেন। ডাঃ সাহা বলেন, আজকের এই প্রকল্প বাদ দিয়ে শুধু চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন মাস পর্যন্ত রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে প্রায় ৬৭৪ কোটি টাকার বিভিন্ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছি। প্রতিদিনই উন্নয়ন হচ্ছে রাজ্যে। রাজ্য সরকারের অগ্রাধিকারের ক্ষেত্র শিক্ষা, স্বাস্থ্য, উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা ও জনজাতিদের উন্নয়ন। ২০১৮ সাল থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ১৯,০০০ সরকারি চাকরি প্রদান করেছে এই সরকার।

অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে রাজ্যের চশমা বাঁদরের প্রসঙ্গ তুলে ধরেন। এর প্রচার ও প্রসার করতেও বিশেষ গুরুত্ব তুলে ধরেন তিনি। সেই সঙ্গে রাজ্যের অন্যান্য পর্যটন কেন্দ্রগুলির প্রসারে মানুষকে আরো এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। ডাঃ সাহা বলেন, নারকেল কুঞ্জ, টেপানিয়া, সিপাহীজলা, ছবিমুড়ায় ইতিমধ্যে লগহাট নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়াও স্বদেশ দর্শন প্রকল্পে আরো ৫১টি লগহাট নির্মাণ করা হবে।

অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অর্থমন্ত্রী প্রণজিৎ সিংহ রায়, পর্যটন মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী, গোমতী জিলা পরিষদের সভাধিপতি দেবল দেবরায়, বিধায়ক রামপদ জমাতিয়া, বিধায়ক অভিষেক দেবরায়, বিধায়ক জিতেন্দ্র মজুমদার, মাতাবাড়ি পঞ্চায়েত সমিতির চেয়ারপার্সন শিল্পী দাস, গোমতী জেলাশাসক, পুলিশ সুপার সহ অন্যান্য পদস্থ আধিকারিকগণ। এই অনুষ্ঠানে রাজ্য পর্যটন উন্নয়ন নিগমের পক্ষ থেকে একটি লোগো উন্মোচন করেন মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *