আগরতলা: রাজ্যে পঞ্চায়েত ব্যবস্থাকে অধিক শক্তিশালী করতে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে রাজ্য সরকার। আগামীদিনে রাজ্যের প্রতিটি পঞ্চায়েতকে সাফল্যের সঙ্গে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে বর্তমান সরকার। পঞ্চায়েতীরাজ ব্যবস্থার পরিকাঠামো শক্তিশালী করার পাশাপাশি সুশাসন ও উন্নয়নকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
শুক্রবার আগরতলার রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবনে আয়োজিত ৪৭৫টি কম্পিউটার বিতরণ ও পঞ্চায়েত ব্যবস্থায় পুরস্কার প্রদানের রাজ্যভিত্তিক অনুষ্ঠানের আনুষ্ঠানিক সূচনা করে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা।
গ্রামোন্নয়ন ও পঞ্চায়েত দপ্তরের উদ্যোগে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা বলেন, সারা ভারতবর্ষের মধ্যে আমাদের যে সাফল্যের স্বীকৃতি সেটা আজ জাতীয় পঞ্চায়েত পুরস্কারের মাধ্যমে পেয়েছি। পঞ্চায়েত ডেভেলপমেন্ট ইনডেক্সের কথা বললে তিনটি ক্ষেত্রে ত্রিপুরা সর্বোচ্চ স্তরে উঠে এসেছে। এটা কোন ব্যক্তিগত সম্মান নয়, সবাই মিলে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার ফলে আমরা এই সম্মানের অধিকারী হয়েছি। আমি পঞ্চায়েত দপ্তর সহ গ্রামোন্নয়ন দপ্তর, জেলা প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি এবং এর সঙ্গে যুক্ত সকলকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও ধন্যবাদ জানাই। তবে শুধু কম্পিউটার বিতরণ ও পুরস্কার প্রদান করলেই হবেনা, আমাদের মূল লক্ষ্য হচ্ছে পঞ্চায়েত ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করা এবং আগামীদিনে তার সাফল্য ও অগ্রগতি যাতে সামনের দিকে অব্যাহত থাকে সেজন্য এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। মানুষের জন্য আমাদের কাজ করতে হবে এবং ডেলিভারি সিস্টেমকে আরো শক্তিশালী করতে হবে। পঞ্চায়েত ব্যবস্থায় পরিকাঠামো শক্তিশালী করতেই আজকের এই কর্মসূচি। এতে আমাদের উদ্ভাবনী চিন্তাভাবনার মাধ্যমে সুশাসন ও উন্নয়নের ধারাকে অব্যাহত রাখতে হবে।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে ২০১৮ থেকে পঞ্চায়েত ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন প্রত্যক্ষ হয়েছে। বিভিন্ন পরিকল্পনা, বিভিন্ন স্কিম বাস্তবায়ন করছেন তিনি। মানুষের জন্যই এসব করছেন তিনি। সেই সঙ্গে পঞ্চায়েত স্তরে জন আন্দোলনে গুরুত্ব দিয়েছেন। কারণ দেশের ৭০ থেকে ৭৫ শতাংশ গ্রাম। আর গ্রামীণ এলাকার উন্নয়ন হলে দেশও শক্তিশালী হবে। এই লক্ষ্য নিয়েই কাজ করছে রাজ্যের বর্তমান সরকারও। প্রধানমন্ত্রীর মার্গদর্শনে ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েতে আমূল পরিবর্তন হচ্ছে। লোক্যাল বডির পাশাপাশি গ্রাম স্তরেও উন্নয়ন প্রয়োজন। এজন্য নতুন নতুন উদ্যোগ ও পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে। এগুলির বাস্তবায়নও করা হচ্ছে। পঞ্চায়েতী রাজ ব্যবস্থায় আমরা ৭টি পুরস্কার পেয়েছি। সবার কৃতিত্বের কারণে এটা সম্ভব হয়েছে। নিষ্ঠা, সততা ও স্বচ্ছতা থাকলেই এটা সম্ভব। প্রশংসা বা পুরস্কার পাওয়া গুরুত্বপূর্ণ নয়, ভালো কাজের স্বীকৃতি পাওয়াটাই গুরুত্বপূর্ণ।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, সারা দেশের মধ্যে আড়াই লক্ষ পঞ্চায়েত রয়েছে। এরমধ্যে আমাদের রাজ্য থেকে যদি কোন পঞ্চায়েত জাতীয় স্তরে প্রথম হয় তবে বুঝতে হবে আমরা সঠিক পথে চলছি। আমরা ঠিকভাবে কাজ করছি বলেই পুরস্কৃত হয়েছি। এতে রাজ্যের মান উন্নয়নের পাশাপাশি দেশের অগ্রগতির শরিক হয়েছে আমাদের রাজ্য। পঞ্চায়েত ডেবোলুশন ইনডেক্স কেন্দ্রীয় সরকার প্রতি ৮ থেকে ১০ বছর করে থাকে। এই ক্ষেত্রে ২০১৫ সালের আগে আমাদের স্থান ছিল ১৩/১৪। আর এখন আমরা ১০ এর মধ্যে চলে এসেছি। আমরা এখন ৭ম স্থানে রয়েছি। আমি এখানে উপস্থিত জনপ্রতিনিধিদের অনুরোধ করবো যে আপনারা যার যার পঞ্চায়েতের উন্নতিতে আরো উদ্ভাবনী চিন্তাভাবনা নিয়ে কাজ করে যাবেন। মনে রাখতে হবে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ করে মানুষের কল্যাণ করতে হবে। গ্রামোন্নয়ন ও পঞ্চায়েত দপ্তরের যৌথভাবে যেসব পরিকল্পনা কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকার নিচ্ছে সেগুলি যাতে যথাযথভাবে বাস্তবায়ন হয় তার দিকে নজর রাখতে হবে জেলাশাসক ও গ্রামোন্নয়ন আধিকারিকদের। আর সময়ের কাজ যাতে সময়ে করা হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
ডাঃ সাহা বলেন, সৌর বিদ্যুৎ, স্মার্ট পঞ্চায়েত গঠন, মাটির নিচে জলস্তর বাড়ানো এবং কঠিন ও তরল বর্জ্য পদার্থ যথাযথভাবে নষ্ট করার ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে আদর্শ পঞ্চায়েত গড়ে তোলার উদ্যোগ নিতে হবে। জাতীয় স্তরে মহিলা বান্ধব ও শিশু বান্ধব পঞ্চায়েত হিসেবে আমরা পুরস্কারও পেয়েছি। তাই সমস্ত পঞ্চায়েতগুলিকে শিশু ও মহিলা বান্ধব পঞ্চায়েত হিসেবে গড়ে তোলার উদ্যোগ নিতে হবে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, প্রযুক্তি এখন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একে ছাড়া কিছুই চলবে না। আগের জমানায় বলা হতো, কম্পিউটার এনে লাভ কি? আর এখন তারাই কম্পিউটার ছাড়া চলতে পারে না। প্রযুক্তির যুগে আমরা কম্পিউটার সমস্ত পঞ্চায়েত পর্যন্ত পৌঁছে দিতে পারছি। আর ডিজিটাল যুগে সুশাসন, স্বচ্ছতা বজায় রাখাও সম্ভব হচ্ছে। আমি আশা করি এর মাধ্যমে কাজও দ্রুত হবে। প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে রাজ্য থেকে শুরু করে জেলা, মহকুমা ও ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত পর্যন্ত ডেলিভারি সিস্টেমের কাজ সহজ হবে। ডিজিটালি শক্তিশালী হলে পঞ্চায়েতও শক্তিশালী হবে।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ভারতবর্ষের মধ্যে ত্রিপুরা একমাত্র রাজ্য যেখানে ই গভর্নেন্স ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। এতে অর্থনৈতিক লেনদেন এবং রেকর্ড রাখা সহজ হবে। পঞ্চায়েতকে ই অফিস ব্যবস্থাপনার সঙ্গে যুক্ত করতে পারার মধ্য দিয়ে আমরা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ডিজিটাল ইন্ডিয়ার শ্লোগানকে শক্তিশালী করতে পেরেছি। আমরা বলতে পারি যে ত্রিপুরা ডিজিটাল ত্রিপুরা হয়েছে। এভাবে অন্যান্য রাজ্যও যদি ডিজিটাল রাজ্য হয় তবে ডিজিটাল ইন্ডিয়ার স্বপ্ন পূরণ হবে। পঞ্চায়েতে এখন ডিজিটালি লেনদেন হচ্ছে। অনলাইন পোর্টাল খুবই সহজভাবে রেজিস্ট্রি হচ্ছে। স্বচ্ছ পঞ্চায়েত হচ্ছে আমাদের মূল ভিত্তি এবং সেভাবেই সবাই কাজ করছেন। প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিনে ১৭ সেপ্টেম্বর ‘আমার সরকার’ ওয়েব পোর্টাল শুরু করা হয়েছিল। দিল্লিতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রীদের কনক্লেভে আমি এই বিষয়টি উত্থাপন করলে প্রধানমন্ত্রী এর ভুয়সী প্রশংসা করেছেন। এখন বিভিন্ন রাজ্যেও এধরণের পোর্টাল করার চেষ্টা হচ্ছে। এই পোর্টালের মাধ্যমে সাধারণ মানুষ তাদের নিজ নিজ এলাকার বিভিন্ন সমস্যার বিষয়টি জানাতে পারেন। আমি চাই আমার সরকার পোর্টাল সম্পর্কে যাতে প্রতিটি মানুষ অবগত হন। অনেকে এখনো জানেন না এই পোর্টালের মাধ্যমে কি লাভ হচ্ছে। ডাঃ সাহা বলেন, আমাদের রাজ্য থেকে মহিলা জনপ্রতিনিধি জাতিসংঘের মতো আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানে দেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেছেন। তিনি সিপাহীজলা জেলার সভাধিপতি সুপ্রিয়া দাস দত্ত। এটা আমাদের জন্য খুবই আনন্দের বিষয়। তিনি খুব সুন্দরভাবে সেখানে কথা বলেছেন। আর আমাদের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির খুবই ইচ্ছা মহিলা পরিচালিত পঞ্চায়েতের। এখন আমাদের রাজ্যে চারটি গ্রাম পঞ্চায়েত সমিতি সম্পূর্ণ মহিলা দ্বারা পরিচালিত। এই তথ্য আমি প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করেছি। সম্প্রতি অরুন্ধতীনগরের পঞ্চায়েত প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটি স্টেট পঞ্চায়েত রিসোর্স সেন্টারে উন্নীত হয়েছে। কিছুদিন আগে ৩৬১ জন পঞ্চায়েত এক্সিকিউটিভ অফিসার নিয়োগ করা হয়েছে এবং তাদের অফার লেটার দেওয়া হয়েছে।
অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উত্তর ত্রিপুরা জিলা সভাধিপতি অপর্ণা নাথ, উনকোটি জিলা সভাধিপতি অমলেন্দু দাস, ধলাই জিলা সভাধিপতি সুস্মিতা দাস, খোয়াই জিলা সভাধিপতি অপর্ণা সিংহ রায়, সিপাহীজলা জিলা সভাধিপতি সুপ্রিয়া দাস দত্ত, গোমতী জিলা সভাধিপতি দেবল দেবরায়, দক্ষিণ ত্রিপুরা জিলা সভাধিপতি দীপক দত্ত, পশ্চিম ত্রিপুরা জিলা সভাধিপতি (দায়িত্বপ্রাপ্ত) বিশ্বজিত শীল, গ্রামোন্নয়ন দপ্তরের সচিব অভিষেক সিং, পঞ্চায়েত দপ্তরের অধিকর্তা প্রসূন দে সহ বিভিন্ন স্তরের জনপ্রতিনিধি ও আধিকারিকগণ। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষের হাতে পুরস্কার তুলে দেন মুখ্যমন্ত্রী সহ অন্যান্য অতিথিগণ।