আগরতলা।।রাজ্য ও দেশের উন্নয়নে রাজনীতিবিদরা শুধুমাত্র সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারেন। কিন্তু সেই সকল সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের মূল দায়িত্ব সরকারি কর্মচারিদের। তাই রাজ্যের উন্নয়নকে সচল রাখতে সরকার নিয়োগ প্রক্রিয়া জারি রেখেছে।
আজ মুক্তধারা অডিটরিয়ামে পূর্ত দপ্তরের অধীন সিভিল, মেকানিক্যাল এবং ইলেকট্রিক্যাল বিভাগে জুনিয়র ইঞ্জিনিয়ার (ডিপ্লোমা) পদে চাকরি প্রাপকদের নিয়োগপত্র প্রদান অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা) মানিক সাহা। আজ এই অনুষ্ঠানে ১৮৪ জন জুনিয়র ইঞ্জিনিয়ার (ডিপ্লোমা) পদে চাকরি প্রাপকদের অফার বিতরণ করা হয়। মুখ্যমন্ত্রী সহ অন্যান্য অতিথিগণ অনুষ্ঠানে প্রতীকী হিসাবে কয়েকজনের হাতে নিয়োগপত্র তুলে দেন।
অনুষ্ঠানে আলোচনায় মুখামন্ত্রী প্রফেসর (ডা) মানিক সাহা বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ আজ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে উন্নয়নের উদাহরণস্বরূপ ত্রিপুরা রাজ্যের নাম উল্লেখ করে থাকেন। একজন রাজ্যবাসী হিসাবে এই ধরনের সম্মান খুবই গর্বের। আর তা সম্ভব হয়েছে এই রাজ্যের সকল স্তরের মানুষের আন্তরিক প্রচেষ্টায়। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, সরকার নিজের প্রয়োজনেই নিয়োগ করে থাকে। কিন্তু এক্ষেত্রে যেকোনও দপ্তরে নিয়োগ প্রাপকদের প্রযুক্তির সাথে তাল মিলিয়ে উদ্ভাবনী চিন্তাধারায় দেশ ও মানুষের কল্যাণে কাজ করতে হবে। নিজস্ব ভাবমূর্তিকে বিবেকের কাছে স্বচ্ছ রেখে কাজ করাই সকলের লক্ষ্য হওয়া উচিত।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, মাথাপিছু আয়ের দিক দিয়ে বর্তমানে রাজ্য উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মধ্যে সিকিমের পরে, জি.এস.ডি.পি-তে আসামের পরে ত্রিপুরা রাজ্যের স্থান। চলতি অর্থবছরে বাজেট গত বছরের থেকে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা বৃদ্ধি করা হয়েছে। রাজ্যে স্বচ্ছতা, নিরপেক্ষতার মধ্য দিয়ে কাজ হয় বলেই বাজেট বৃদ্ধি সম্ভব হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সর্বস্তরের মানুষের কল্যাণে কাজ করছেন। সাধারণ মানুষের উন্নয়নে গৃহীত পরিকল্পনাগুলি বাস্তবায়নের বিষয়েও সময় সময় পর্যালোচনা করেন তিনি।
মুখ্যমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে আরও বলেন, রাজ্যে ২৭ জুন পর্যন্ত ডাই-ইন-হারনেস সহ মোট ১৯,৪৮৪ জনকে সরকারি চাকরিতে নিয়োগ করা হয়েছে। গত ১ জুলাই ৭৪ জনকে ডাই-ইন-হারনেসে এবং আজ ১৮৪ জনকে জুনিয়র ইঞ্জিনিয়ার পদে নিয়োগপত্র দেওয়ার ফলে এখন পর্যন্ত মোট ১৯,৭৪২ জনকে সরকারি চাকরিতে সরাসরি নিয়োগ করা হয়েছে।মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যে এনআইটি-তে ১৮২টি, পলিটেকনিকে ১৯০টি, টেকনো কলেজ ও ইউনিভার্সিটিতে ১০৯৩টি ইঞ্জিনিয়ারিং-এর আসন রয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, আগরতলা ওয়েস্টার্ন ও ইস্টার্ন বাইপাস, রাধানগর থেকে আইজিএম, চৌমুহনি পর্যন্ত উড়ালপুল, মোটরস্ট্যান্ডে মাল্টিস্টোরেড পার্কিং ব্যবস্থা, উদয়পুরে উড়ালপুল চালু হলে এই রাজ্যের যোগাযোগ পরিকাঠামোয় আমূল পরিবর্তন আসবে। উদয়পুরের বনদুয়ারে নির্মীয়মান ৫১ শক্তিপীঠ আগামীদিনে ভারতবর্ষের পর্যটনস্থলগুলির মধ্যে এক বিশেষ স্থান অর্জন করবে বলে মুখ্যমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন। এছাড়াও পিএম ডিভাইন প্রকল্পে ২০২ কোটি টাকা ব্যয়ে ডেন্টাল কলেজ, আগরতলার এ.জি.এম.সি ও জি.বি.পি হাসপাতালে ২০০ শয্যা বিশিষ্ট মা ও শিশু স্বাস্থ্য বিভাগ, বিশ্রামগঞ্জে নেশামুক্তি কেন্দ্র স্থাপন সহ অন্যান্য পরিকাঠামো উন্নয়নের বিষয় মুখ্যমন্ত্রী তার বক্তব্যে তুলে ধরেন। অনুষ্ঠানে আলোচনায় বিদ্যুৎমন্ত্রী রতনলাল নাথ বলেন, বর্তমান সরকার স্বচ্ছতার ভিত্তিতে চাকরি প্রদান করছে। দক্ষত্যকে ভিত্তি করে গুণগত মান সম্পন্ন কর্মচারি নিয়োগ করাকেই এই সরকার সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে।
তিনি বলেন, গত ৭ বছরে সাধারণ মানুষের জীবনযাপনের মৌলিক পরিকাঠামোগুলির সর্বাঙ্গীণ বিকাশে কাজ করছে এই সরকার। বক্তব্য রাখতে গিয়ে অর্থমন্ত্রী প্রণজিৎ সিংহরায় বলেন, এবারের বাজেটে শুধুমাত্র রাজ্যের পরিকাঠামো উন্নয়নে ৭ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এই সরকার দক্ষতা, স্বচ্ছতা, যোগ্যতা এবং নিরপেক্ষতাকে বিচার করে চাকরি প্রদান করছে। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন পূর্ত দপ্তরের সচিব কিরণ গিত্যে। অনুষ্ঠানে এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন মুখ্যমন্ত্রীর সচিব ড. পি কে চক্রবর্তী সহ রাজ্যের বিভিন্ন দপ্তরের কর্মরত ইঞ্জিনিয়ারগণ।