আগরতলা, ১৪ আগস্ট: প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দেশের অখণ্ডতা রক্ষার জন্য কাজ করছেন। জাতিকে বিভাজন থেকে রক্ষা করতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। তবেই দেশ আরো শক্তিশালী হবে।

                          
আজ আগরতলার এমবিবি কলেজের রবীন্দ্র হলে আয়োজিত বিভাজন বিভীষিকা স্মৃতি দিবস পালনের রাজ্যভিত্তিক অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা। 
                                অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা বলেন, আজ এমবিবি কলেজের অডিটোরিয়ামে দেশ বিভাজন বিভীষিকা স্মৃতি দিবস পালন করছি। এটা সময়ের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে একটা গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচি। যারা আগামীদিনের ভবিষ্যত অর্থাৎ ছাত্রছাত্রীরা, তাদের অনেকেই এবিষয়ে অবগত নয়। তাই তাদের জন্য এই কার্যক্রম খুবই প্রয়োজন। আজকের আলোচনা থেকে আমরা নিজেরাও অনেকটা সমৃদ্ধ হয়েছি। আর এই আলোচনা থেকে ছাত্রছাত্রীরাও অনেক সমৃদ্ধ হবে। আমাদের দেশ আগামীদিন কোন দিশায় চলবে, আমরা আগামীদিন কোন পথে চলবো, যারা আগামীদিনে দেশ পরিচালনা করবেন, কারা দেশকে নিয়ে চিন্তাভাবনা করেন - সেবিষয়ে আজকের আলোচনার মাধ্যমে কিছুটা হলেও ধারনা আসবে। 

                        আলোচনায় মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা সবসময় নিজেদের নিয়ে চিন্তা করি। এর পাশাপাশি প্রত্যেককে অবশ্যই নিজের রাজ্য এবং দেশ সম্পর্কেও চিন্তাভাবনা করতে হবে। আজ, আমরা সোশ্যাল মিডিয়া ও ইন্টারনেটের দৌলতে গোটা বিশ্ব সম্পর্কে জানতে পারি। তবে আমি জানি না আজকের প্রজন্ম ইতিহাস সম্পর্কে কতটা সচেতন রয়েছে। প্রযুক্তির যুগে একে ব্যবহার করে আমরা অনেক অজানা তথ্য জানতে পারি। ইতিহাসের পৃষ্ঠা কখনো মলিন হয় না। আমরা যদি ইতিহাস পড়ি তবে বর্তমান এবং ভবিষ্যত সম্পর্কে অনেক কিছু শেখায়। এই লক্ষ্যে ২০২১ সালে যশস্বী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দেশ বিভাজন বিভীষিকা স্মৃতি দিবস পালন করার আহ্বান করেছিলেন। 

                             মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা আরো বলেন, আগামীকাল আমরা স্বাধীনতা দিবস উৎসাহ উদ্দীপনার সঙ্গে পালন করবো। কিন্তু এই উল্লাস ও আনন্দের পেছনে আমাদের যে বিষন্ন অবস্থা ছিল, কত মানুষ খুন হয়েছে, কত মা বোন ধর্ষিতা হয়েছে, কত শিশু নিখোঁজ হয়েছে, এবং কত মানুষকে নিজ বাড়িঘর ছেড়ে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় চলে যেতে হয়েছে - সেসব ঘটনাবলীকে আজ স্মরণ করার দিন। 
                       
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, দেশ কীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল সে সম্পর্কে আমাদের অবশ্যই জানতে হবে। আমাদের অবশ্যই সমস্ত কিছু মনে রাখতে হবে, যাতে ইতিহাস এর পুনরাবৃত্তি না করে। তাই বিভাজন বিভীষিকা স্মৃতি দিবস খুব গুরুত্বপূর্ণ। যে কারণে প্রতি বছর ১৪ আগস্ট আমরা এই দিন পালন করি। প্রতি বছর যদি আমরা বিভিন্ন জায়গায় এই কার্যক্রম পালন করতে পারি, তবে মানুষ দেশ বিভাজনের বিভীষিকা সম্পর্কে আরও জানতে পারবে। আর এখনো কিছু মানুষ বিভাজনের প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে। আমাদের অবশ্য দেশ বিভাজন থেকে শিক্ষা নিতে হবে, যাতে এধরণের ঘটনা আর কখনো না হয়। 

                         মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ১৮৮১ সালে শুরু হওয়া দাঙ্গা বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়েছিল এবং এটা হিন্দু ও মুসলিমদের মধ্যে বিভাজন তৈরি করেছিল। আর ব্রিটিশরা তাদের বিভাজন নীতির অধীনে এই জঘন্য কাজ করেছিল। এই ধরনের দাঙ্গা কিন্তু ধর্মীয় উদ্দেশ্যে নয়। বরং রাজনৈতিক লাভালাভের জন্য এবং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব প্রধানমন্ত্রী হওয়ার লক্ষ্যে এটা ঘটানো হয়। কাশ্মীরে, হিন্দু পণ্ডিতরা সন্ত্রাসবাদিদের দ্বারা বিভিন্ন সমস্যার মুখে পড়েছিলেন। ড. শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জির আদর্শ ও চিন্তাভাবনার কারণে হিন্দু বাঙালিরা একটা জায়গা পেয়েছেন। অনেক মানুষ তাদের সহায় সম্বল ছেড়ে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তান থেকে এখানে এসেছেন এবং ভারত থেকেও অনেক মুসলিম সেখানে গিয়েছেন। বিভাজনের কারণে অনেক মানুষ সমস্যায় পড়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দেশের অখন্ডতা রক্ষার জন্য নিরলসভাবে কাজ করছেন এবং আমাদের অবশ্যই ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। যদি সেটা না হয়, তবে অনেক সমস্যা হবে। 

                           অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন খাদ্য ও পরিবহণ মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী, উচ্চশিক্ষা মন্ত্রী কিশোর বর্মন, এমবিবি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. বিভাস দেব, শিক্ষা দপ্তরের বিশেষ সচিব রাভেল হেমেন্দ্র কুমার, এমবিবি কলেজের অধ্যক্ষ নির্মল ভদ্র সহ অন্যান্য বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, প্রফেসর, শিক্ষা কর্মী ও গুণীজনেরা।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *