আগরতলা: রাজ্যের সমস্ত জায়গায় জনগণের কাছে সুশাসন পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে সরকার। জনজাতি অংশের মানুষের সবদিক দিয়ে কল্যাণের জন্য কাজ করছে বর্তমান সরকার। ভারতীয় জনতা পার্টি নেতৃত্বাধীন সরকারের অন্যতম লক্ষ্য পরিকাঠামো উন্নয়ন করা।
আজ দক্ষিণ ত্রিপুরা জেলায় মোট ৩২ কোটি টাকার ১৯টি প্রকল্পের উদ্বোধন করে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা। এদিন মুখ্যমন্ত্রীর হাত ধরে উদ্বোধন হয় সাব্রুম গার্লস হায়ার সেকেন্ডারি স্কুলের নবনির্মিত ১০০ শয্যার জনজাতি ছাত্রী নিবাসের। এছাড়া ভার্চুয়ালি উদ্বোধন করেন আরো একাধিক প্রকল্পের। অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বিকশিত ভারত গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছেন। সেই দিশায় অমৃতকাল শুরু হয়েছে। যার মূল লক্ষ্য হচ্ছে মানুষের উন্নতিসাধন করা। পরিকাঠামো উন্নয়ন থেকে শুরু করে আত্মমর্যাদা, আর্থ সামাজিক উন্নয়ন, সুরক্ষা নিশ্চিত করা সহ সবদিক দিয়েই বাস্তবিক উন্নয়ন চাইছেন তিনি। আর দেশের সব রাজ্য মিলিতভাবে চেষ্টা করলে সমৃদ্ধ ভারত গড়ে উঠবে। পরিকাঠামো উন্নয়ন আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকার ত্রিপুরায় পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য কাজ করছে। আমাদের মূল উদ্দেশ্য স্বচ্ছতার মাধ্যমে মানুষের কল্যাণে কাজ করা। দক্ষিণ জেলা বা উত্তর জেলা কিংবা উনকোটি জেলা রাজ্যের সব জায়গায় এখন উন্নয়ন হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী মোদি আমাদের মার্গদর্শন দেখান। তিনি যেভাবে বলেন আমরা সেভাবে কাজ করি।
বক্তব্য রাখতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ২০২৫ সালে এখন (জুন মাস) পর্যন্ত প্রায় ৬১২ কোটি টাকার অধিক বিভিন্ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন হয়েছে। শুধু আমার হাত ধরে এসব হয়েছে। এছাড়া অন্যান্য মন্ত্রীদের হাত ধরেও বিভিন্ন প্রকল্পের সূচনা হয়েছে। ডাঃ সাহা জানান, ২০২৪ সালে প্রায় ১৫৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ৪৪টি স্কুলে নতুন ভবন তৈরি হয়েছে। ২০২৪ – ২৫ সালে প্রায় ৩৪৬টি স্কুলে সংস্কার বাবদ প্রায় ৮১ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। ২০২৫ – ২৬ অর্থ বছরে আরো ৩০টি স্কুলে নতুন ভবন নির্মাণের জন্য ২৬৪ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। স্কুলগুলিতে পরিকাঠামো উন্নয়নে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে সরকার। আমরা চাই আমাদের ছেলেমেয়েরা ভালোভাবে ভালো পরিবেশে পড়াশুনা করুক। তবে স্কুলে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার বিষয়ে সবার বিশেষ নজর রাখতে হবে। কারণ একা সরকারের পক্ষে সবকিছু করা সম্ভব নয়।
মুখ্যমন্ত্রী আরো বলেন, জনজাতি এলাকায় রাস্তাঘাট, স্কুল ইত্যাদি ক্ষেত্রে উন্নয়নে গুরুত্ব দিয়েছে সরকার। স্টেট জিএসটি এবং মাথাপিছু আয়ের ক্ষেত্রে উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলির মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ স্থানে রয়েছে ত্রিপুরা। আরো কিভাবে জিডিপি বৃদ্ধি করা যায় সেই চেষ্টা করা হচ্ছে। স্বাস্থ্য পরিষেবা আমাদের একটি অন্যতম অগ্রাধিকারের ক্ষেত্র। এই কয়েক বছরে রাজ্যে স্বাস্থ্য পরিষেবায় প্রভূত উন্নতি হয়েছে। ৯টি সুপার স্পেশালিটি পরিষেবা চালু হয়েছে। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নেও বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তিনি আমাদের হিরা মডেল দিয়েছেন। এর মাধ্যমে রাজ্যে জাতীয় সড়ক, ইন্টারনেট, রেলওয়ে, এয়ারওয়ের প্রভূত উন্নতি হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী দায়িত্ব গ্রহণের পর জনজাতি অংশের মানুষের কল্যাণে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। রাজ্য সরকারও জনজাতিদের উন্নয়নে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। স্বনির্ভরতার উপরও গুরুত্ব দিয়েছে এই সরকার। ২০১৮ সালের আগে রাজ্যে স্বসহায়ক গোষ্ঠীর সংখ্যা ছিল মাত্র ৪ থেকে ৫ হাজার। সেই জায়গায় এখন ৫৬,০০০ এর অধিক হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, কর্মসংস্থানের দিকেও বিশেষ নজর দিয়েছে রাজ্য সরকার। এই সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর এখন পর্যন্ত প্রায় ১৯ হাজার সরকারি চাকরি দিয়েছে। এছাড়া আউটসোর্সিং ও চুক্তির ভিত্তিতে আরো চাকরি দেওয়া হয়েছে। কৃষি ক্ষেত্র ও পর্যটন ক্ষেত্রের উন্নয়নেও অগ্রাধিকার দিয়েছে সরকার। পরিকাঠামো উন্নয়নের পাশাপাশি জীবনের মানোন্নয়নও আমাদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আইন শৃঙ্খলা ব্যবস্থা ক্ষেত্রে দেশের ২৮টি রাজ্যের মধ্যে নিচের দিক থেকে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ত্রিপুরা। এখন প্রতি ১৪ দিন অন্তর ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আমি জেলাশাসক, পুলিশ সুপার ও মহকুমা শাসকদের সঙ্গে কথা বলি। যার মূল লক্ষ্য হচ্ছে মানুষকে সুশাসন দেওয়া। এর পাশাপাশি শিক্ষা ক্ষেত্রে উন্নয়নে রাজ্য সরকারের বিভিন্ন উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন মুখ্যমন্ত্রী।
অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সমবায় মন্ত্রী শুক্লাচরণ নোয়াতিয়া, দক্ষিণ জেলার সভাধিপতি দীপক দত্ত, ত্রিপুরা স্পোর্টস কাউন্সিলের সদস্য দীপায়ন চৌধুরী, প্রাক্তন বিধায়ক শঙ্কর রায়, এডিসি সদস্য কংজং মগ, দক্ষিণ জেলার জেলাশাসক মহম্মদ সাজ্জাদ পি, জেলা পুলিশ সুপার সহ অন্যান্য পদস্থ আধিকারিকগণ।