আগরতলা: গুণগত শিক্ষা প্রদান করা সম্ভব না হলে শিক্ষার কোন মূল্য থাকে না। ত্রিপুরা সরকারের অন্যতম অগ্রাধিকারের ক্ষেত্র হচ্ছে শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়ন সাধন। গুণগত শিক্ষা ছাড়া কোন জাতির অগ্রগতি সম্ভব নয়। গুণগত শিক্ষা ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার উপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। রাণী লক্ষীবাঈ আত্মরক্ষা প্রশিক্ষণের আওতায় রাজ্যের ২,০৫৮টি স্কুলে ১,৪২,০০০ এর অধিক ছাত্রীকে আত্মরক্ষার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মচারীদের শূন্য পদ পূরণ করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।

                          
আজ আমতলি উচ্চতর মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে পশ্চিম জেলার ৬টি বিদ্যালয়ের নতুন পাকা ভবনের উদ্বোধন করে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা। এদিন একইসঙ্গে আমতলি উচ্চতর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবনির্মিত ভবন সহ ভার্চুয়াল মাধ্যমে হেনরি ডিরোজিও একাডেমি, গান্ধীগ্রাম উচ্চতর মাধ্যমিক বিদ্যালয়, তালতলা উচ্চতর মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ইন্দ্রনগর উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং নন্দননগর উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নতুন পাকা ভবনের উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী। 
                              অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী তথা শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ সাহা বলেন, ধরিত্রী দিবস উপলক্ষে আজ কিউ আর কোডের উন্মোচন করা হয়েছে। প্রকৃতিকে কিভাবে স্বাভাবিক রাখা যায় সেজন্য চেষ্টা করছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। কারণ বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য ঠিক না থাকলে আমাদের নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে। কেন্দ্রীয় সরকারের শিক্ষা মন্ত্রক থেকে ২২ থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত এই কিউ আর কোড কর্মসুচি করা হচ্ছে। প্রযুক্তির ব্যবহারের জন্যও বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ছাত্রছাত্রীদের পাঠদানের ক্ষেত্রে সময়ের সাথে সাথে শিক্ষক শিক্ষিকাদের আপডেট হতে পরমার্শ দেন মুখ্যমন্ত্রী। 
                               অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নে অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করছে রাজ্য সরকার। শিক্ষার সামগ্রিক উন্নয়নে কোন জায়গায় খামতি রাখবে না সরকার। রাজ্য সরকার ও শিক্ষা দপ্তর যেখানে যা দরকার সেটা করে যাচ্ছে। শিক্ষার সামগ্রিক উন্নয়ন না হলে কোন রাজ্য বা দেশ সামনের দিকে এগিয়ে যাবে না। স্বাধীনতার ৩৪ বছর পরে জাতীয় শিক্ষা নীতি কার্যকর করা হয়েছে। দেশের স্বনামধন্য শিক্ষাবিদ ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মতামতের উপর ভিত্তি করেই এই শিক্ষানীতি কার্যকর করা হয়েছে। ত্রিপুরায় শুধু স্কুল স্তরে নয়, কলেজ স্তরেও জাতীয় শিক্ষানীতি চালু করেছে সরকার। এতে আগামী প্রজন্ম গুণগত শিক্ষা অর্জন করতে সক্ষম হবে। রাজ্য সরকারের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে বিভিন্ন নীতি গ্রহণ করে সেগুলি বাস্তবায়ন করা এবং ছাত্রছাত্রীদের গুণগত শিক্ষা প্রদান করা। 
                             মুখ্যমন্ত্রী তথা শিক্ষামন্ত্রী জানান, বর্তমানে ১৪০.২০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৩০টি নতুন বিদ্যালয় ভবনের নির্মাণ কাজ চলছে। এছাড়া, "সমগ্রশিক্ষা, ত্রিপুরা" র অধীনে পশ্চিম ত্রিপুরা জেলায় মোট ৭৩টি প্রকল্পে ৩০ কোটি ৫৬ লক্ষ টাকার নির্মান কাজ চলছে। অন্যদিকে, বর্তমান ২০২৫-২৬ অর্থবছরে আরও ১৬টি বিদ্যালয়ের নতুন ভবন নির্মাণের কাজ অবিলম্বে শুরু হবে, যার জন্য সম্ভাব্য ব্যয় হবে ১১৭.৯৬ কোটি টাকা। আর সমগ্র শিক্ষা থেকে ২০২৫-২৬ সালের জন্য পরিকাঠামো উন্নয়নখাতে ১৩ কোটি টাকা ব্যয় করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। নির্মীয়মাণ বিদ্যালয় ভবনগুলোর মধ্যে পশ্চিম ত্রিপুরা জেলায় ১১টির কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে। 
                            মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্য সরকার ৪৫৫টি বিদ্যালয়ে ১ কোটি ৩১ লক্ষ টাকার অধিক ব্যয়ে স্যানিটারি ন্যাপকিন ভেন্ডিং মেশিন স্থাপন করেছে। রাণী লক্ষীবাঈ আত্মরক্ষা প্রশিক্ষণের অধীনে রাজ্যের ২,০৫৮টি স্কুলে ১ লক্ষ ৪২ হাজারের অধিক ছাত্রীকে আত্মরক্ষার প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ২০২৫ - ২৬ অর্থ বছরে বিজ্ঞান বিভাগ ও ইংরেজি বিষয়ের উপর বিশেষ কোচিং সেন্টার চালু করার প্রস্তাব রাখা হয়েছে। এর পাশাপাশি রাজ্য সরকার ডিজিটাল শিক্ষার উপর গুরুত্ব দিয়েছে। বন্দে ভারত ও ৫টি ই বিদ্যালয় ই বিদ্যা চ্যানেল খোলা হয়েছে। ৮৫৪টির মতো স্মার্ট ক্লাশ চালু করা হয়েছে। 

                                 উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাজ্য বিধানসভার উপাধ্যক্ষ রামপ্রসাদ পাল, শিক্ষা দপ্তরের বিশেষ সচিব রাভেল হেমেন্দ্র কুমার, বিদ্যালয় শিক্ষা দপ্তরের অধিকর্তা এন সি শর্মা, ডুকলি পঞ্চায়েত সমিতির চেয়ারম্যান ভুলন সাহা সহ অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তি ও আধিকারিকগণ। 
                        
উল্লেখ্য, স্পেশাল এসিট্যান্স ফর ক্যাপিটাল ইনভেস্টমেন্ট, রুরাল ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট ফান্ড ও সমগ্র শিক্ষা -র সম্মিলিত তহবিলের মাধ্যমে আমতলি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নির্মাণকাজে ব্যয় হয়েছে ৩ কোটি ৮০ লক্ষ টাকা। হেনরি ডিরোজিও একাডেমির দ্বিতল ভবন নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ২ কোটি ৯৯ লক্ষ টাকা। ১ কোটি ৩৯ লক্ষ  টাকা ব্যয়ে ইন্দ্রনগর ইংলিশ মিডিয়াম উচ্চবিদ্যালয় এবং ১ কোটি ৮৬ লক্ষ টাকা ব্যয়ে নন্দননগর উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নতুন ভবন নির্মিত হয়েছে। এছাড়া গান্ধীগ্রাম উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং তালতলা উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নতুন ভবন নির্মাণে প্রতিটির জন্য ব্যয় হয়েছে ৮ কোটি ৬৭ লক্ষ টাকা।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *