আগরতলা।। ত্রিপুরায় স্বাস্থ্য পরিষেবার মান সার্বিক উন্নয়নে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এখন পর্যন্ত রাজ্যে ৩টি কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। ত্রিপুরায় একটি স্বাস্থ্য হাব গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে বর্তমান সরকার। হাসপাতালগুলিতে আরো চিকিৎসক নিয়োগের জন্য নীতিগত প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আজ আগরতলার প্রজ্ঞাভবনে জাতীয় চিকিৎসক দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা।
অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা জাতীয় চিকিৎসক দিবস উপলক্ষে সমস্ত চিকিৎসকদের শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করেন। তিনি বলেন, চিকিৎসকদের খুব চাপের মধ্য দিয়ে এবং মানবিক স্পর্শ নিয়ে কাজ করতে হয়। তাই তাদের অবশ্য সম্মান করা প্রয়োজন। রোগী ও ডাক্তারদের আনুপাতিক হারের নিরিখে একটা মানসিক চাপ বোধ থাকে। আর এবিষয়টি বুঝতে হবে সাধারণ মানুষকেও।আজ জাতীয় চিকিৎসক দিবসে আমরা প্রখ্যাত চিকিৎসক ডাঃ বিধান চন্দ্র রায়কে স্মরণ করছি। তিনি ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের দ্বিতীয় মুখ্যমন্ত্রী। ১৮৮২ সালে আজকের দিনে তাঁর জন্ম এবং ১৯৬২ সালে আজকের দিনেই তাঁর মৃত্যু। তাই তাঁর জন্মদিন ও মৃত্যুদিনকে সারা দেশে জাতীয় চিকিৎসক দিবস হিসেবে পালন করা হয়। মাত্র ২৬ বছর বয়সে এমডি ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি। ১৯১১ সালে তিনি লন্ডন থেকে এমআরসিপি এবং এফআরসিএস উপাধি অর্জনের পর কলকাতার ক্যাম্পবেল মেডিক্যাল স্কুলে (বর্তমানে নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ) শিক্ষকতা ও চিকিৎসা পেশা শুরু করেন।
মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের ব্যাপক উন্নতি সাধন করেছেন তিনি। যে কারণে ডাঃ বিধান চন্দ্র রায়কে আধুনিক পশ্চিমবঙ্গের রূপকার বলা হয়। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যেও প্রতিবছর যথাযোগ্য মর্যাদায় জাতীয় চিকিৎসক দিবস পালন করা হয়। তিনি বলেন, স্বাস্থ্য পরিষেবার মান উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করছে এই সরকার। রোগীদের কল্যাণে নানা সুযোগ সুবিধা সম্প্রসারণ করা হচ্ছে। প্রায় ২৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৯টি সুপার স্পেশালিটি পরিষেবা চালু করা হয়েছে। পিএম ডিভাইন প্রকল্পের প্রায় ২০২ কোটি টাকা বরাদ্দে আগরতলা সরকারি ডেন্টাল কলেজে কাজ করা হচ্ছে। গতকালই মন কি বাত কার্যক্রমে জাতীয় চিকিৎসক দিবস উপলক্ষে শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা বলেন, এবারের বাজেটে আইএলএস সংলগ্ন স্থানে ১০০ শয্যার একটি অত্যাধুনিক চক্ষু হাসপাতাল খোলার জন্য আর্থিক সংস্থান রাখা হয়েছে। বর্তমানে রাজ্যের বাইরে থাকা ডাক্তার ছেলেমেয়েরাও রাজ্যে আসতে চাইছেন। তাই তাদের সম্মানের সঙ্গে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, নেশামুক্ত ত্রিপুরা গড়ে তোলার জন্য এই সরকার বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে। ডোনার মন্ত্রক থেকে প্রায় ১২২ কোটি টাকা বরাদ্দে বিশ্রামগঞ্জে একটি আধুনিক নেশা মুক্তি কেন্দ্র স্থাপন করা হচ্ছে। এছাড়াও প্রত্যেকটি জেলায় ২০ কোটি টাকা করে ব্যয়ে একটি করে নেশা মুক্তি কেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী জন আরোগ্য যোজনায় মানুষকে স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রদানে এখন পর্যন্ত প্রায় ১৭ কোটি টাকার দাবি নিষ্পত্তি করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী জন আরোগ্য যোজনায় প্রায় ২৩৯ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। রাজ্যের প্রত্যেকটি জেলায় একটি করে ট্রমা কেয়ার সেন্টার গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আমবাসায় কার্ডিও কেয়ার সেন্টার খোলা হয়েছে। জিবি ও আইজিএমে চাপ কমাতে জেলা হাসপাতাল এবং স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলিকে শক্তিশালী করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ডাক্তারদের আরো পদোন্নতি দেওয়ার জন্য প্রক্রিয়া চলছে। সেই সঙ্গে নতুন ডাক্তার নিয়োগের জন্য টিপিএসসি এর কাছে পাঠানো হয়েছে। খুব সহসাই নিয়োগ করা হবে।
মুখ্যমন্ত্রী আরো বলেন, রাজ্যের মেডিকেল কলেজগুলিতে বর্তমানে ৪০০টি এমবিবিএস আসন রয়েছে। ডেন্টাল কলেজে ৬৩টি এবং বিএসসি নার্সিংয়ে ৫০টি আসন রয়েছে। এছাড়া আরো বিভিন্ন কলেজ ও প্রতিষ্ঠান রয়েছে। রাজ্য সরকার চেষ্টা করছে ত্রিপুরায় একটি স্বাস্থ্য হাব গড়ে তোলার। ইতিমধ্যে জিবি হাসপাতালে রোগীর আত্মীয়দের জন্য মাত্র ১০টাকা মূল্যে খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ভারত মাতা ক্যান্টিন ও নাইট শেল্টার শুরু করা হচ্ছে। গতকাল এজিএমসিতে তৃতীয়বারের মতো সফলভাবে কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট করা হয়েছে। লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট করার জন্য মোহন ফাউন্ডেশনের সঙ্গে আলোচনা হচ্ছে। এছাড়া বোনমেরু ট্রান্সপ্ল্যান্টের জন্যও কথা হচ্ছে।
অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য দপ্তরের অতিরিক্ত সচিব রাজীব দত্ত, স্বাস্থ্য অধিকর্তা ডাঃ তপন মজুমদার, পরিবার কল্যাণ ও রোগ প্রতিরোধ দপ্তরের অধিকর্তা ডাঃ অঞ্জন দাস, মেডিকেল এডুকেশনের অধিকর্তা ডাঃ এইচ পি শর্মা, এজিএমসির অধ্যক্ষ ডাঃ অনুপ সাহা, ত্রিপুরা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডাঃ অরিন্দম দত্ত, ডেন্টাল কলেজের অধ্যক্ষ ডাঃ শালু রায় সহ অন্যান্য বিশিষ্ট চিকিৎসকগণ।