আগরতলা।। সমাজের অনেক ভব্যসভ্য ও বিশিষ্ট ব্যক্তিও পয়সার লোভে ড্রাগস ব্যবসায় যুক্ত রয়েছে। কিন্তু আইনের বেড়াজালে পড়লে কেউ বাঁচাতে পারবে না।

ড্রাগস ব্যবসায় জড়িত ব্যক্তিদের কোন অবস্থায় ছাড় দেওয়া হবে না। এর পাশাপাশি বাল্য বিবাহ প্রতিরোধ করতে সকল অংশের মানুষকে আরো সচেতন হতে হবে। বাল্য বিবাহ রোধে সামাজিকভাবে বিয়ের আগে রেজিস্ট্রি বিয়ে করানোর চিন্তাভাবনা করছে সরকার। আজ বামুটিয়া ব্লকের গান্ধীগ্রাম উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে নেশামুক্ত ভারত অভিযান এবং বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ সম্পর্কে আয়োজিত সচেতনতামূলক অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডা. মানিক সাহা।

অনুষ্ঠানে আলোচনা করতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা বলেন, নেশামুক্ত দেশ ও বাল্যবিবাহ রোধ করা সম্পর্কে সচেতনতামূলক কার্যক্রম আজকের দিনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অথচ রাজ্যে আগে নেশার এমন পরিবেশ ছিল না। কিন্তু বিগত প্রায় ৪০ বছর ধরে সারা রাজ্যে নেশার ছায়া বিরাজ করেছে। যা আজকের দিনে ভুগতে হচ্ছে আমাদের। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় সরকার এবং রাজ্যে ভারতীয় জনতা পার্টি নেতৃত্বাধীন সরকার গঠনের পর ড্রাগসের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি নেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহও এবিষয়ে বারবার গুরুত্ব দিয়েছেন এবং প্রতিনিয়ত রিপোর্ট নিচ্ছেন। আর রাজ্য সরকারও কেন্দ্রের নির্দেশিত দিশায় মাদক প্রতিরোধের বিরুদ্ধে কাজ করছে। পুলিশ সহ বিভিন্ন এজেন্সিগুলি প্রতিনিয়ত মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান জারি রেখেছে। প্রচুর পরিমাণে ড্রাগস বাজেয়াপ্ত করা হচ্ছে। এই বাজেয়াপ্তের পরিমাণ কয়েক গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এনডিপিএস আইনের আওতায় ড্রাগসের সঙ্গে যুক্ত প্রচুর ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং তাদের সাজা হচ্ছে। আলোচনায় মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ছাত্রছাত্রীদের জন্য ড্রাগস সম্পর্কিত বিষয়ে আলোচনা খুবই প্রয়োজন। বিশেষ করে শিক্ষক শিক্ষিকা ও অভিভাবকদের এনিয়ে আরো সতর্ক ও সচেতন হতে হবে। প্রয়োজনে ক্লাশে অন্তত ১০ মিনিট ড্রাগসের ভয়াবহতা সম্পর্কে কথা বলতে হবে। আর অভিভাবকদের নিজেদের ছেলেমেয়েদের চালচলন সম্পর্কে তীক্ষ্ম নজর রাখতে হবে। এই মাদকের কারণে আমাদের কয়েক প্রজন্মের ভবিষ্যত নষ্ট হয়েছে। এতে মানব সম্পদের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। তাই সব জায়গায় মাদক সম্পর্কে আরও সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। এছাড়াও রাজ্যে থ্যালাসেমিয়া, টিউবারকোলসিস, এইচআইভি/ এইডস সম্পর্কিত বিষয়ে আরো সচেতন হওয়ার আহ্বান রাখেন মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা আরো বলেন, আমি পুলিশ সহ বিভিন্ন এজেন্সিকে বলেছি যে এই ড্রাগস ব্যবসায় কারা কারা জড়িত তাদের যাতে কোন অবস্থায় ছাড় দেওয়া না হয়। কারণ এরা নিজেকে ধ্বংস করছে, সমাজকে ধ্বংস করছে এবং রাজ্যকে ধ্বংস করছে। আর সমাজের অনেক ভব্যসভ্য, বিশিষ্ট ব্যক্তি যাদের বিভিন্ন জায়গায় অবাধ বিচরণ রয়েছে এরাও কিন্তু এসবে যুক্ত রয়েছে। কিন্তু একবার আইনের বেড়াজালে জড়িয়ে পড়লে তখন কেউ বাঁচাতে পারবে না এদের। কারণ প্রধানমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশনায় জিরো টলারেন্স নীতি নিয়ে ড্রাগসের বিরুদ্ধে লড়াই চলছে।

এর পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বাল্যবিবাহ আমাদের জন্য আরো একটা উদ্বেগের বিষয়। তাই বাল্যবিবাহ রোধ করতে সকলকে এগিয়ে আসতে হবে এবং এর বিরুদ্ধে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। বাল্যবিবাহ রোধ করতে প্রতিবাদ করে এগিয়ে আসায় আমাদের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের একটা মেয়ে দেশের রাষ্ট্রপতির হাত থেকে পুরস্কার পেয়েছে। কাজেই তার থেকে অন্যান্যদেরও অনুপ্রাণিত হতে হবে। এছাড়া বাল্যবিবাহ রোধে সরকার চিন্তাভাবনা করছে যাতে সামাজিক বিয়ের আগে রেজিস্ট্রি বিয়ে করানো যায়। এতে বিয়ের জন্য মেয়েদের বয়স ১৮ এবং ছেলেদের বয়স ২১ পূর্ণ হতে হবে। এরজন্য বার্থ সার্টিফিকেট অবশ্যই আবশ্যিক করা হবে।

অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পশ্চিম ত্রিপুরা জেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাধিপতি বিশ্বজিত শীল, আগরতলা পুরনিগমের মেয়র তথা বিধায়ক দীপক মজুমদার, ত্রিপুরা মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন ঝর্ণা দেববর্মা, ত্রিপুরা কমিশন ফর প্রোটেকশন অব চাইল্ড রাইটসের চেয়ারপার্সন জয়ন্তী দেববর্মা, বামুটিয়া পঞ্চায়েত সমিতির চেয়ারম্যান দীপক কুমার সিংহ, প্রাক্তন বিধায়ক কৃষ্ণধন দাস। এছাড়া বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পশ্চিম ত্রিপুরা জেলার জেলাশাসক ড. বিশাল কুমার, পুলিশ সুপার ড. কিরণ কুমার কে সহ অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিগণ।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *