আগরতলা: ড্রাগসের বিরুদ্ধে মোকাবিলায় ছেলেমেয়েদের প্রতি বিশেষ নজর দিতে হবে অভিভাবকদের। সেই সঙ্গে ড্রাগসকে প্রতিহত করতে ছাত্রছাত্রীদেরও নিজেদের আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি করতে হবে। এইচআইভি/ এইডস মোকাবিলায় স্কুল কলেজে রেড রিবন ক্লাব আরো বৃদ্ধি করতে হবে। সবাই একসাথে মিলে লড়াই করলে ত্রিপুরাকে এইচআইভি মুক্ত রাজ্য হিসেবে গড়ে তোলা যাবে।

আজ আগরতলার প্রজ্ঞাভবনে আন্তর্জাতিক যুব দিবস উপলক্ষে ত্রিপুরা রাজ্য এইডস কন্ট্রোল সোসাইটির উদ্যোগে আয়োজিত রাজ্যভিত্তিক সচেতনতা ঘণ্টা বাজানো কার্যক্রমে উপস্থিত থেকে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা।অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা বলেন, আমার এই অনুষ্ঠানে খুব ভালো লাগলো যে একটা ঘণ্টা বাজানোর সঙ্গে সঙ্গে আজ প্রায় ৬ হাজার ছাত্রছাত্রী এইডসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধমূলক সচেতনতা কার্যক্রমে যুক্ত হলো। আমরা সত্যিই খুবই চিন্তিত যেভাবে এইচআইভি ত্রিপুরা সহ উত্তর পূর্বাঞ্চলে বিস্তৃত হচ্ছে।

এখন ত্রিপুরার স্থান উত্তর পূর্বাঞ্চলের ৮টি রাজ্যের মধ্যে চতুর্থ স্থানে রয়েছে। এই জায়গায় দাঁড়িয়ে খুবই চিন্তার বিষয় হয়ে পড়েছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, যারা ড্রাগস নেয় তারা প্রথমে অভ্যাস করে এবং পরবর্তী সময়ে ধীরে ধীরে সেটা আসক্তিতে পরিণত হয়। তাই আগে থেকেই এই ড্রাগস সম্পর্কে সতর্ক হতে হবে। এক্ষেত্রে অভিভাবকদের খুবই সতর্ক থাকতে হবে। কারণ ছাত্র জীবনে খারাপের দিকে ঝোঁকার প্রবনতা বেশি থাকে। ভালো ছাত্রের পাশাপাশি কিছু বখাটে শিক্ষার্থীও থাকে। অনেক সময় সেই ভালো শিক্ষার্থীরাও খারাপের দিকে ধাবিত হয়। যারা প্রথমে ড্রাগসের সঙ্গে যুক্ত হয় তারা নিজে কিন্তু বুঝতে পারে যে ড্রাগস সেবন করাটা ঠিক নয় বা ইনজেকশন নেওয়া ঠিক নয়। যদিও আসক্তির পর্যায়ে চলে যাওয়ার পর সেই বোধশক্তি চলে যায় তাদের।

আলোচনায় মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ড্রাগসের বিরুদ্ধে মোকাবিলায় অভিভাবকদের নিজ নিজ ছেলেমেয়ের প্রতি বিশেষ নজর দিতে হবে। ছেলেমেয়েরা কোথায় যায়, কি করছে ইত্যাদি বিষয়ে নজরদারি রাখা প্রয়োজন। এর পাশাপাশি ড্রাগসকে প্রতিহত করতে ছাত্রছাত্রীদেরও নিজেদের আত্মবিশ্বাস বা মনোবল বৃদ্ধি করতে হবে। খারাপ সঙ্গে মেলামেশা না করার জন্য সংকল্পবদ্ধ হতে হবে। যারা উশৃঙ্খল জীবনযাপন করে তাদের থেকে দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। প্রয়োজনে শিক্ষকদের এবিষয়ে অবগত করতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বারবার বলছেন নেশামুক্ত ভারত গড়ে তোলার কথা। সেই দিশায় আমরাও নেশামুক্ত ত্রিপুরা ও নেশামুক্ত ভারত গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়েছি। সেই লক্ষ্যে আমরা ড্রাগসের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছি। আর এসবের মধ্যে অনেক ধরণের ব্যক্তি জড়িয়ে রয়েছে। আমি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন এজেন্সিগুলির সঙ্গে বৈঠক করি। পুলিশ প্রধানকেও বলেছি যাতে ড্রাগসের সঙ্গে যুক্ত কাউকে ছাড়া না হয়।

শুধু একা এজেন্সি কিংবা সরকারের পক্ষে ড্রাগসের বিরুদ্ধে লড়াই করা সম্ভব না। এজন্য সকল অংশের মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে। ড্রাগস বাজেয়াপ্ত করা এবং ধ্বংস করার পরিমাণ অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ড্রাগস নিলে কি সমস্যা বা অসুবিধা হতে পারে সেবিষয়ে সচেতন করতে হবে। এইচআইভি নিয়েও আরো সচেতন হতে হবে। সেইফ সেক্সের বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে। এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে হবে। এমনকি অভিভাবক, ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষকদের এনিয়ে আলোচনা করা প্রয়োজন। অনেকসময় এনিয়ে আলোচনা করতে লজ্জাবোধ হয়। কিন্তু এতে কাজ হবে না।

আজ ঘণ্টা বাজানোর সঙ্গে সঙ্গে প্রায় ৬ হাজার ছাত্রছাত্রী যুক্ত হয়ে গেলো। আমার মনে হয় না এধরণের কার্যক্রম ভারতবর্ষের আর কোথাও হয়েছে। এটা একটা ইতিহাস হয়ে থাকবে। ত্রিপুরা রাজ্য এইডস কন্ট্রোল সোসাইটি এই কার্যক্রম করেছে। এথেকে দেশের অন্যান্য রাজ্যগুলিও অনুপ্রাণিত হবে। ডাঃ সাহা বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে ত্রিপুরা বেশ ভালোভাবে প্রতিরোধ করতে সমর্থ হয়েছে। সেইভাবে এইচআইভি প্রতিরোধে সবাইকে একসাথে মিলে লড়াই করতে হবে। তবেই ত্রিপুরাকে এইচআইভি মুক্ত রাজ্য হিসেবে গড়ে তোলা যাবে। এইচআইভি আগে থেকে সনাক্ত করা না গেলে পরবর্তী সময়ে সেটা এইডস হিসেবে ধরা পড়ে। তথ্য দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী জানান, এইডস কন্ট্রোল সোসাইটি প্রায় ১,১৮৭টি সরকারি ও সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলে অষ্টম থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত প্রায় ২,৩১,০০০ ছাত্রছাত্রীকে সচেতনতা করার কাজ হাতে নিয়েছে।

এইডস থেকে দূরে থাকতে সচেতনতামূলক আলোচনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আর এইচআইভি রোগীরা যাতে হীনমন্যতায় না ভুগে এবং একজন স্বাভাবিক মানুষ হিসেবে তাদের গণ্য করতে হবে। এটাও একটা সামাজিক দায়বদ্ধতা। এইচআইভি আক্রান্ত মা ও শিশুদের জন্য আগরতলা সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে একটা সেন্টার রয়েছে। রাজ্য সরকার চেষ্টা করছে সবদিক থেকে যাতে এই অপ্রত্যাশিত সংক্রমণ থেকে মুক্ত থাকা যায়। স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা জানান, এখন পর্যন্ত ত্রিপুরায় প্রায় ৩,৪৩৩ জন এইচআইভি/ এইডস আক্রান্তকে ২,০০০ টাকা করে মাসিক ভাতা প্রদান করার ব্যবস্থা হয়েছে। রাজ্যের সমস্ত স্কুল কলেজে রেড রিবন ক্লাব করার জন্যও গুরুত্ব তুলে ধরেন মুখ্যমন্ত্রী।

অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য দপ্তরের সচিব কিরণ গিত্যে, শিক্ষা দপ্তরের বিশেষ সচিব রাভেল হেমেন্দ্র কুমার, শিক্ষা অধিকর্তা এন সি শর্মা, মিশন ডিরেক্টর সাজু ওয়াহিদ এ, স্বাস্থ্য অধিকর্তা ডাঃ তপন মজুমদার, পরিবার কল্যাণ ও রোগ প্রতিরোধ দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত অধিকর্তা ডাঃ নির্মল সরকার, ত্রিপুরা এইডস কন্ট্রোল সোসাইটির প্রকল্প অধিকর্তা ডাঃ বিনীতা চাকমা সহ অন্যান্য বিশিষ্ট চিকিৎসক ও আধিকারিকগণ।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *