আগরতলা, ১৩ এপ্রিল: জনজাতি অংশের মানুষের উন্নয়নে এবারের বাজেটে ৭,১৪৯ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। যা গতবারের তুলনায় ৪০% বেশি। জনজাতি অধ্যুষিত এলাকায় পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে রাজ্য সরকার। এই সরকারের অন্যতম লক্ষ্য হচ্ছে জাতি জনজাতি একসাথে মিলে এক ত্রিপুরা শ্রেষ্ঠ ত্রিপুরা গড়ে তোলা। আজ সন্ধ্যায় ধলাই জেলার লংতরাইভ্যালি মহকুমার ছামনুর লক্ষীন্দর পাড়ায় চাকমা জনজাতি গোষ্ঠীর ঐতিহ্যবাহী ৫১তম রাজ্যভিত্তিক বিজু মেলার উদ্বোধন করে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা। ৫১তম বিজু মেলা উপলক্ষে শুভেচ্ছা বার্তা পাঠিয়েছেন দেশের যশস্বী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে নিজের বক্তব্যের শুরুতেই চাকমা ভাষায় সকলকে নমস্কার ও শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করেন মুখ্যমন্ত্রী। আলোচনা করতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা বলেন, চাকমা জনজাতি সম্প্রদায়ের অন্যতম প্রধান উৎসব বিজু। আজ এখানে ৫১তম রাজ্যভিত্তিক বিজু মেলার আয়োজন করা হচ্ছে। বিজু সাধারণত তিনদিন হয়ে থাকে – ফুল বিজু, মূল বিজু এবং গচ্ছেপচ্ছে বিজু। এরসঙ্গে এবার ২দিন যুক্ত হয়ে মোট ৫ দিনের বিজু মেলার আয়োজন করা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আমি এখানে আসতে পেরে অত্যন্ত খুশি। দেশের যশস্বী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি চাকমা জনগোষ্ঠীর জন্য যে শুভেচ্ছা বার্তা পাঠিয়েছেন এরজন্য ত্রিপুরার জনগণের পক্ষ থেকে আমি প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই। এই সময়টা পুরনো বছরকে বিদায় দেওয়া এবং নতুন বছরকে বরণ করে নেওয়ার পালা। পুরনো বছরের ব্যর্থতা ও সাফল্যগুলি আলোচনার মাধ্যমে আগামীদিন আরো নতুনভাবে ভুল শুধরে কিভাবে আরো সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যাবে সেই কাজগুলি আমরা করবো।

অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, চাকমাদের বিজু, অহমিয়াদের বিহু, ত্রিপুরীদের বুইসু, জমাতিয়াদের গড়িয়া, মগদের সাংগ্রাই, হিন্দুদের গাজন ও নববর্ষ বরণ আবহমান কাল থেকে চলে আসছে। আমাদের ১৯টি জনজাতি গোষ্ঠী রয়েছে ত্রিপুরায়। রাজ্যসভার সাংসদ হিসেবে শপথ নেওয়ার দ্বিতীয় দিনে ডার্লং সম্প্রদায়কে জনজাতি গোষ্ঠীতে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য আমাকে বক্তব্য রাখতে হয়েছে। আমি খুবই খুশি হয়েছি যে রাজ্যের জনজাতিদের নিয়ে সাংসদ হিসেবে আমাকে বলতে হয়েছে। ত্রিপুরা সরকারের অন্যতম লক্ষ্য হচ্ছে সমস্ত জনজাতি গোষ্ঠীর কৃষ্টি সংস্কৃতি ও পরম্পরাকে অটুট রাখা। এরমধ্যে চাকমা জনগোষ্ঠীর তাদের নিজস্ব লিপি রয়েছে। যা খুবই বড় বিষয়। চাকমা ভাষাকে যাতে আরো প্রসার করা যায় সেটা অবশ্য চেষ্টা করা হবে। সেই সঙ্গে তাদের আরো যেসব দাবিদাওয়া রয়েছে সেগুলিও নিশ্চয় গুরুত্ব দিয়ে দেখা হবে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি রাজ্যের জনজাতিদের থেকে ৭জন বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বকে পদ্মশ্রী সম্মানে ভূষিত করেছেন। এরমধ্যে চাকমা জনগোষ্ঠীর থেকে স্মৃতি রেখা চাকমাও রয়েছেন। যাকে ২০২৪ এ পদ্মশ্রী সম্মানে সম্মানিত করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী সবসময় জনজাতিদের জন্য চিন্তা করেন। ডাঃ সাহা আরো বলেন, রাজ্যে দীর্ঘ ২৩ বছর ধরে রিয়াং শরণার্থীরা দুর্বিষহ অবস্থার মধ্যে দিন কাটালেও তাদের জন্য কিছুই করেনি রাজ্যের পূর্বতন সরকার। কিন্তু আমাদের সরকার আসার পর প্রধানমন্ত্রী এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর আন্তরিক প্রচেষ্টায় তাদের সমস্যা সমাধান হয়েছে। তাদের সার্বিক বিকাশে প্রথমে ৫০০ কোটির প্যাকেজ দেওয়া হয়। যা পরবর্তীতে বৃদ্ধি পেয়ে ৮০০ কোটি হয়। আর এটা সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রী এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কারণে। আমাদের সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর আগরতলা এয়ারপোর্টের নাম মহারাজা বীর বিক্রম কিশোর মানিক্য বাহাদুরের নামে নামকরণ করেছে। যা খোদ প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করেছেন। আমাদের সরকার মহারাজার জন্মদিন ১৯ আগস্ট তারিখে সরকারি ছুটির ঘোষণা করেছে। কামান চৌমুহনী সংলগ্ন আইল্যান্ডে মহারাজার মর্মর মূর্তি স্থাপন করা হয়েছে। এডিসির নাম তিপ্রা টেরিটোরিয়াল কাউন্সিল করার জন্য দিল্লির কাছে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। এডিসিতে যাতে সকল জনজাতি সম্প্রদায় থেকে প্রতিনিধিত্ব করতে পারেন তারজন্য ২৮টি আসন থেকে ৫০টি আসন করার জন্য প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। ধলাই জেলা রাজ্যের একটি এসপিরেশন্যাল জেলা। এর উন্নয়নে ১০% বেশি অর্থ দেওয়া হয়। আমাদের সরকার আসার পর এই জেলা এখন উন্নয়নের মুখ দেখতে শুরু করেছে। রাজ্যের রিসা, মাতাবাড়ির প্রসাদ, পাছড়া, আনারস আন্তর্জাতিক স্তরে জি আই ট্যাগ পেয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আজ এখানে আপনারা যেভাবে আমাকে সম্বর্ধনা দিয়েছেন তাতে আমি খুবই আপ্লুত। জীবনভর এটা মনে থাকবে। জনজাতিদের কথা মাথায় রেখে আমাদের সরকার কাজ করছে। আগে ঐতিহ্যবাহী গড়িয়া পুজোতে মাত্র ১দিন ছুটি ছিল। আর আমরা সেটা দুদিন করেছি। শান্তি সম্প্রীতি না থাকলে কোন দেশ বা রাজ্য উন্নতি করতে পারবে না। প্রধানমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কারণে রাজ্যের এটিটিএফ ও এনএলএফটি দুই বৈরী গোষ্ঠীর সঙ্গে চুক্তি হয়েছে। আর এখন ত্রিপুরা উগ্রপন্থা মুক্ত রাজ্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এডিসি এলাকায় উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার জন্য বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সরকার। জনজাতিদের সমস্ত দিক দিয়ে উন্নয়নের জন্য এই সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রী সান্তনা চাকমা, বিধায়ক শম্ভুলাল চাকমা, ধলাই জেলার জেলা সভাধিপতি সুস্মিতা দাস, জেলাশাসক সাজু ওয়াহিদ এ, তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের অধিকর্তা বিম্বিসার ভট্টাচার্য, জেলা পুলিশ সুপার মিহির লাল দাস, মহকুমা শাসক উত্তম কুমার ভৌমিক, ত্রিপুরা রাজ্য চাকমা সামাজিক পরিষদের কার্বারি (প্রধান) দেবযান চাকমা, রাজ্য সাংস্কৃতিক উপদেষ্টা কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান সুব্রত চক্রবর্তী সহ অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিগণ। উল্লেখ্য, ৫ দিন ব্যাপী রাজ্যভিত্তিক এই বিজু মেলা চলবে আগামী ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *