আগরতলা: রাজ্য সরকারের মূল লক্ষ্য হচ্ছে বিভিন্ন জনমুখী প্রকল্পের সুফল অন্তিম ব্যক্তি পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়া। সকল অংশের মানুষের কল্যাণে স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজ করছে সরকার। জাতি জনজাতি সকল অংশের মানুষের উন্নয়ন করা এই সরকারের অন্যতম অগ্রাধিকার। কারণ সকল স্তরের মানুষের কল্যাণ ছাড়া রাজ্যের উন্নয়ন সম্ভব নয়।

শনিবার আগরতলার রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবনে আয়োজিত বর্তমান রাজ্য সরকারের দ্বিতীয় বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা।

অনুষ্ঠানে উদ্বোধক ও প্রধান অতিথির বক্তব্যে মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা বলেন, আমাদের সরকার মানুষের জন্য কাজ করছে। বর্তমান সরকার দ্বিতীয় বর্ষপূর্তি উদযাপন করছে এবং আমি এখানে উপস্থিত সমস্ত লোকজন, কার্যকর্তা এবং প্রশাসনের আধিকারিকদের ধন্যবাদ জানাই। সকলের সহযোগিতার কারণে আমরা সরকারের দুই বছর পূর্তি উদযাপন করছি। আমাদের উপর এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির উপর মানুষের বিশ্বাস ও আস্থার কারণে এটা সম্ভব হয়েছে। আর রাজ্যের বর্তমান সরকার উন্নয়নে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছে। এখন রাজ্যের সর্বত্র উন্নয়নের জোয়ার বইছে, যা আগে দেখা যায়নি। প্রধানমন্ত্রী সবসময় উন্নয়নের বিষয়ে কথা বলেন এবং আমাদের বর্তমান সরকারও এই লক্ষ্যে কাজ করছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সবসময় বলেন উত্তর -পূর্বের বিকাশ না করে ভারতের উন্নয়ন সম্ভব নয়। তিনি এই অঞ্চলের উন্নয়নে অ্যাক্ট ইস্ট পলিসি শুরু করেছেন। সেই সঙ্গে তিনি আমাদের হিরা মডেল দিয়েছেন। এজন্য আমাদের রাজ্যে ব্যাপক উন্নয়ন হচ্ছে।

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, জিডিপি হারের দিক থেকে ত্রিপুরা একটি ভালো স্থান অর্জন করেছে। এখানে পরিকাঠামোগত উন্নয়ন হচ্ছে, আইন শৃঙ্খলা ব্যবস্থার প্রভূত উন্নতি হয়েছে এবং মাথাপিছু আয় উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ত্রিপুরা দ্রুত উন্নয়নের দিকে এগিয়ে চলছে। ২০২৩-২৪ সালে জিএসডিপি বৃদ্ধি পেয়েছে। আমরা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নির্দেশনা অনুসরণ করে কাজ করছি। উন্নয়নের অর্থ শুধু বিল্ডিং নির্মাণ নয়, যোগাযোগ ব্যবস্থা, জনজীবন, অর্থনীতি, শিক্ষা এবং আইন শৃঙ্খলার উন্নতিও রয়েছে। তবেই আমরা বলতে পারি যে ত্রিপুরায় উন্নয়ন ঘটেছে। আমরা রাজ্যের প্রতিটি প্রান্তে উন্নয়ন দেখতে চাই এবং ত্রিপুরা সরকার এই দিশায় কাজ করছে, যাতে বিকশিত ভারত গড়ে তোলার স্বপ্ন পূরণ হয়।

অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, গত ৭ বছরে অনেকগুলি সমস্যা সমাধান করেছে সরকার এবং কেন্দ্রের বেশ কয়েকটি ফ্ল্যাগশিপ স্কিম বাস্তবায়ন করেছে। এ কারণেই কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে প্রশংসা পেয়েছে ত্রিপুরা। আমরা স্বচ্ছভাবে কাজ করছি এবং সে কারণেই আমরা মন্ত্রিসভা থেকে পঞ্চায়েত স্তর পর্যন্ত ই-অফিস শুরু করেছি। আমরা প্রতি ঘরে সুশাসন অভিযান চালু করেছি। এতে প্রায় ২৩ লক্ষ মানুষ বিভিন্নভাবে উপকৃত হয়েছেন। আমরা আমার সরকার নামে একটি ওয়েব পোর্টালও চালু করেছি এবং আমি এবিষয়টি মুখ্যমন্ত্রীদের কনক্লেভে উত্থাপন করলে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সহ অনেকে আমাদের প্রচেষ্টার প্রশংসা করেছেন। এর পাশাপাশি বর্তমান রাজ্য সরকার মহিলাদের কল্যাণে কাজ করছে। আমাদের সরকার সবসময় মহিলাদের কল্যাণকে অগ্রাধিকার দেয়। এই লক্ষ্যে আমরা পিঙ্ক টয়লেট চালু করেছি এবং সরকারি চাকরিতে মহিলাদের জন্য ৩৩% সংরক্ষণ রাখার ব্যবস্থা করেছি। আমরা মহিলাদের জন্য একাধিক গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ নিয়েছি। তাদের সুরক্ষার জন্য আমরা ৯টি মহিলা পরিচালিত মহিলা পুলিশ স্টেশন চালু করেছি এবং একটি হেল্পলাইন চালু করেছি।

বক্তব্য রাখতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা আরো বলেন, ভারতীয় জনতা পার্টি যখন সরকার গঠন করেছিল তখন সামাজিক ভাতা বাড়িয়ে ২,০০০ টাকা করেছিল। যেটা সিপিএমের শাসনে ছিল মাত্র ৭০০ টাকা। আমরা সরকারি চাকরি প্রদানের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতার সাথে যোগ্য ব্যক্তিদের চাকরির সুযোগ করে দিচ্ছি। ২০১৮-১৯ অর্থবর্ষ থেকে ২০২৪-২৫ পর্যন্ত বিভিন্ন দপ্তরে মোট ১৬,৪৫১জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে এবং আউটসোর্সিং ও অন্যান্যভাবে আরো ৫ হাজারের অধিক নিয়োগ করা হয়েছে। রাজ্যে বেকারত্বের হার উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। আমাদের মূল লক্ষ্য হচ্ছে সমস্ত সরকারি প্রকল্পগুলির সুবিধা জনগণের কাছে পৌঁছানো নিশ্চিত করা। জনজাতি অঞ্চলের উন্নয়নের জন্য রাজ্য সরকারকে ১,৪০০ কোটি টাকা দিয়েছে এডিবি। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, সমস্ত স্তরের মানুষের বিকাশ ছাড়া ত্রিপুরার বিকাশ সম্ভব নয়। আমরা জনগণের জন্য ২৪ ঘন্টা কাজ করছি এবং তাদের সমস্যাগুলি সমাধান করছি।

অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কৃষি ও কৃষক কল্যাণ মন্ত্রী রতন লাল নাথ, অর্থমন্ত্রী প্রণজিৎ সিংহ রায়, শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রী সান্তনা চাকমা, পর্যটন মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী, যুব বিষয়ক ও ক্রীড়া মন্ত্রী টিংকু রায়, জনজাতি কল্যাণ মন্ত্রী বিকাশ দেববর্মা, সমবায় মন্ত্রী শুক্লাচরণ নোয়াতিয়া, বন মন্ত্রী অনিমেষ দেববর্মা, শিল্প ও বাণিজ্য দপ্তরের প্রতিমন্ত্রী বৃষকেতু দেববর্মা, সাংসদ রাজীব ভট্টাচার্য, সাংসদ কৃতি দেবী দেববর্মন, আগরতলা পুর নিগমের মেয়র তথা বিধায়ক দীপক মজুমদার, মুখ্যসচিব জিতেন্দ্র কুমার সিনহা, পুলিশ মহানির্দেশক অমিতাভ রঞ্জন, তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের সচিব ড. পি. কে. চক্রবর্তী সহ অন্যান্য আধিকারিকগণ।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *