আগরতলা: ছেলেমেয়েদের পড়াশুনার চাপ থেকে মুক্ত রাখতে সহর্ষ পাঠক্রম চালু করা হয়েছে। এনসিইআরটি ও এসসিইআরটি মিলিতভাবে রাজ্যে এই কার্যক্রম শুরু করেছে। উত্তর পূর্ব ভারতের মধ্যে ত্রিপুরাতেই প্রথম সহর্ষ পাঠক্রম শুরু হয়েছে। এর মূল লক্ষ্য হচ্ছে পাঠ্যপুস্তক নির্ভরতা ছাড়াও আনন্দঘন পরিবেশের মধ্যে ছেলেমেয়েদের গুণগত শিক্ষা প্রদান করা। আজ আগরতলার রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবনে আয়োজিত সহর্ষ উৎসব ২০২৫ এর উদ্বোধন করে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা।
অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা বলেন, সহর্ষ উৎসব মানে আনন্দের সাথে পড়াশুনা করা, আনন্দের মাঝে নিজেকে খুঁজে নেওয়া। স্কুলের প্রতি এবং পড়াশুনার প্রতি ছেলেমেয়েদের উৎসাহ বৃদ্ধি করা সহর্ষ কার্যক্রমের অন্যতম লক্ষ্য। এতে ব্যাপকভাবে উপকৃত হবে ছাত্রছাত্রীরা। আগে এধরণের পাঠক্রম আমরা কোনদিন শুনিনি। ছাত্রছাত্রীদের পড়াশুনা সংক্রান্ত বিভিন্ন চাপ থেকে মুক্ত রাখার লক্ষ্যে জাতীয় শিক্ষা নীতি (ন্যাশনাল এডুকেশন পলিসি) ২০২০ চালু করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। রাজ্যেও জাতীয় শিক্ষা নীতি চালু হয়েছে। জাতীয় শিক্ষানীতির সফল বাস্তবায়নের লক্ষ্যে রাজ্যের প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণির জন্য তৈরি করা সহর্ষ পাঠক্রম ইতিমধ্যেই ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে ব্যপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। সহর্ষ পাঠক্রম সাধারণ পাঠক্রমের বাইরে অন্য কার্যক্রম।
মুখ্যমন্ত্রী তথা শিক্ষামন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা বলেন, শুধুমাত্র পুঁথিনির্ভর শিক্ষাই নয়, আনন্দঘন পরিবেশে ভবিষ্যতের জন্য দেশাত্মবোধসম্পন্ন, নির্ভয়, মানবিক মূল্যবোধসম্পন্ন, সহানুভূতিশীল, সচেতন, বৌদ্ধিকভাবে সক্ষম ও সামাজিক দায়বদ্ধ সম্পন্ন মানুষ গড়ে তুলতে সহর্ষ পাঠক্রম খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে। ২০২৩ সালে রাজ্যে প্রথমবারের মতো এই কার্যক্রম শুরু হয়। উত্তর পূর্ব ভারতেও এধরণের কার্যক্রম প্রথম। জাতীয় শিক্ষা নীতিকে ভাবনায় রেখে শিক্ষক, ট্রেনার ও শিক্ষাবিদদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এই পাঠক্রম তৈরি করা হয়েছিল। ত্রিপুরা এখন সবদিক দিয়ে ফ্রন্ট রানার স্টেট হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
বক্তব্য রাখতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আগামীদিনের প্রজন্ম হিসেবে শিশু ও কিশোর বয়সীদের সুন্দর ভবিষ্যত গড়ে তোলার উপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। এক্ষেত্রে ছেলেমেয়েদের গড়ে তোলার জন্য শিক্ষকদের গুরুদায়িত্ব রয়েছে। আর গুণগত শিক্ষা প্রদানে সহর্ষ পাঠক্রম বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে। প্রধানমন্ত্রীও গুণগত শিক্ষা প্রদানে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, শিক্ষা ক্ষেত্রে ছেলেমেয়েদের ফাউন্ডেশন (ভিত) মজবুত করতে হবে। নাহলে পড়াশুনার প্রতি অনীহা দেখা দেবে। মনের আনন্দে শিক্ষাকে মস্তিষ্কে ধারণ করতে হবে, যাতে আগামীদিনে দেশের জন্য উদ্ভাবনী চিন্তাভাবনা করতে পারে তারা। শিশুদের ভেতরে থাকা সুপ্ত প্রতিভার বিকাশ সাধন করতে হবে। অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, শিশুদের মানসিক বিকাশে গুরুত্ব দিতে হবে শিক্ষক শিক্ষিকাদের। তাদেরকে মূল্যবোধ ও সামাজিক দায়বদ্ধতা সম্পর্কে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। ভারতবর্ষের পুরনো ইতিহাস সম্পর্কে অবগত করতে হবে তাদের। দেশপ্রেম, মূল্যবোধ, দায়বদ্ধতা ও পরিবেশ রক্ষার জন্য ছেলেমেয়েদের প্রকৃত শিক্ষা দিতে হবে। সহর্ষ পাঠক্রম তৈরির সঙ্গে যুক্ত শিক্ষক শিক্ষাবিদদের শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি জানান, নোবেল জয়ী অর্থনীতিবিদ অভিজিত বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে একটি টিম এই কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। এই কার্যক্রমে এই টিম ১০০টি স্কুল পরিদর্শন করে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করেছে। সহর্ষ পাঠক্রমের মাধ্যমে ছেলেমেয়েদের পড়াশুনা সম্পর্কিত ভয়ভীতি দূর করাও সহায়ক হবে।
অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষা দপ্তরের বিশেষ সচিব রাভেল হেমেন্দ্র কুমার, শিক্ষা অধিকর্তা এন সি শর্মা, এসসিইআরটি’র অধিকর্তা এল ডার্লং, ইউনাইটেড নেশনস ইয়ং লিডার হার্ভার্ড গ্র্যাজুয়েট স্কুল অফ এডুকেশনের রিচা গুপ্তা সহ শিক্ষা দপ্তরের অন্যান্য পদস্থ আধিকারিকগণ। এদিন এই অনুষ্ঠানে ভার্চুয়াল মাধ্যমে প্রায় ৪০০টি স্কুল অংশগ্রহণ করে।