আগরতলা : ছাত্রছাত্রীদের মূল্যবোধের শিক্ষা প্রদানের জন্য চেষ্টা করছে রাজ্য সরকার। এর পাশাপাশি গুণগত শিক্ষা প্রদানে অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করছে সরকার। শিক্ষা ক্ষেত্রে পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য গুরুত্ব সহকারে কাজ করছে সরকার। রাজ্যে একটা এডুকেশন হাব তৈরি করার লক্ষ্যে কাজ করছে বর্তমান সরকার। আজ আগরতলার বড়দোয়ালি উচ্চতর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্ল্যাটিনাম জুবিলি উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা।
অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা বলেন, এই স্কুলের ৭৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে প্ল্যাটিনাম জুবিলি একটা আনন্দের বিষয়। একটা মাইল ফলক তথা স্মরণীয় দিন হয়ে থাকবে। যেকোন প্রতিষ্ঠানের ইতিহাস খুঁজলে দেখা যায় অনেক কষ্ট ত্যাগের পর বর্তমান অবস্থানে চলে আসে। এখন এই স্কুলে একটা সুন্দর প্রেক্ষাগৃহ হয়েছে। স্কুলে এধরণের অডিটোরিয়াম হওয়া খুবই প্রয়োজন। বিদ্যালয়, স্কুল, কলেজ আমাদের কাছে মন্দিরের মতো। আগরতলার বনেদি স্কুলের মধ্যে বড়দোয়ালি স্কুল একটা অন্যতম নাম। প্রায় ১৭০০ এর মতো ছাত্রছাত্রী এই স্কুলে পড়াশুনা করছে। এই স্কুলের ফলাফলও বেশ ভালো হয়। মেধা তালিকায় স্থান করে নেয় এই স্কুল। স্কুলের শিক্ষক শিক্ষিকারা ভালো করে পাঠদান করেন বলেই ভালো ফলাফল করতে পারে ছেলেমেয়েরা। ১৯৫০ সালে এই স্কুল শুরু হয়েছিল। এবার এই স্কুল থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষায় ১০০% ছাত্রছাত্রী পাশ করেছে। এটা একটা খুবই আনন্দের বিষয়।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যে একটা এডুকেশন হাব তৈরি করার লক্ষ্যে কাজ করছে সরকার। শিক্ষার কোন বিকল্প হয় না। শিক্ষা অন্তহীন। পুঁথিগত শিক্ষার পাশাপাশি অন্যান্য কর্মকাণ্ডেও যুক্ত থাকতে হবে। সামাজিক কাজকর্ম, মানুষের জন্য কাজ করা এবং দেশের জন্য চিন্তাভাবনা করতে হবে। ছোট থেকেই দেশপ্রেমের ভাবনা জাগ্রত করতে হবে। মূল্যবোধ ও মানসিক বিকাশ একমাত্র শিক্ষার মাধ্যমেই সম্ভব হবে। ডাঃ সাহা বলেন, দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নের লক্ষ্যে জাতীয় শিক্ষা নীতি চালু করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশিত দিশায় রাজ্যেও জাতীয় শিক্ষা নীতি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
মুখ্যমন্ত্রী আরো বলেন, এখন রাজ্য বিভিন্ন দিক দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। কিছুদিন আগে দেশের মধ্যে তৃতীয় রাজ্য হিসেবে পূর্ণ সাক্ষর রাজ্যের স্বীকৃতি অর্জন করেছে ত্রিপুরা। গোয়া ও মিজোরামের পরে এই গৌরব অর্জন করেছে আমাদের রাজ্য। বিদ্যাজ্যোতি স্কুলগুলির ফলাফল গতবারের তুলনায় অনেক ভালো হয়েছে। শিক্ষা হচ্ছে একটা সেতু। জ্ঞান আর অজ্ঞানতা এবং আলো আর অন্ধকারের মধ্যে সেতু হিসেবে কাজ করে শিক্ষা।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ২০১৮ সালে রাজ্যে বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকার গঠনের পর এখন পর্যন্ত প্রায় ১৯ হাজারের অধিক সরকারি চাকরি প্রদান করা হয়েছে। আরো বিভিন্ন ক্ষেত্রে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ত্রিপুরায় ড্রাগসের ব্যবহার নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। ড্রাগসের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি নিয়ে কাজ করছে সরকার। একই সঙ্গে এইচআইভি/ এইডস সম্পর্কে আরও সচেতন হতে হবে।
মুখ্যমন্ত্রী আরো বলেন, বিভিন্ন স্কুলে শিক্ষকের সমস্যা রয়েছে। বিশেষ করে সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত স্কুলগুলিতে শিক্ষক শিক্ষিকার একটা ঘাটতি রয়েছে। রাজ্য সরকার চেষ্টা করছে এই সমস্যা সমাধান করার। শিক্ষা ক্ষেত্রে উন্নয়নে বিভিন্ন নীতি গ্রহণ করেছে রাজ্য সরকার। অবহেলিত, দুর্বল শ্রেণী, সংখ্যালঘু, জনজাতি, মহিলাদের উন্নয়নে কাজ করা হচ্ছে। যোগ্য ছাত্রছাত্রীদের আর্থিকভাবে ঋণ দিয়ে তাদের পড়াশুনা অব্যাহত রাখার চেষ্টা করছে সরকার। শিক্ষা ক্ষেত্রে পরিকাঠামো উন্নয়নে বিশেষ জোর দিয়েছে সরকার। বিভিন্ন স্কুলে নতুন ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। বিভিন্ন স্কুল সংস্কারের জন্য আর্থিক ব্যয় করা হচ্ছে। আরো নতুন স্কুল ভবন নির্মাণের জন্য আর্থিক সংস্থান রাখা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ত্রিপুরা বিধানসভার উপাধ্যক্ষ রামপ্রসাদ পাল, পুর নিগমের কর্পোরেটর শম্পা সরকার চৌধুরী, স্কুল ম্যানেজিং কমিটির চেয়ারম্যান মানিক দত্ত, স্কুল ম্যানেজমেন্ট কমিটির সেক্রেটারি জয়ন্ত চৌধুরী, স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা সহ অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিগণ।