আগরতলা: ছাত্রছাত্রীদের গুণগত মানের শিক্ষা প্রদান করাই হচ্ছে রাজ্যের বর্তমান সরকারের মূল লক্ষ্য। ডিজিটাল শিক্ষা ব্যবস্থার উপরও বিশেষ গুরুত্ব দেওয়ার চেষ্টা করছে সরকার। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও বৃত্তিমূলক শিক্ষার উপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। আর প্রযুক্তির সঙ্গে সাযুজ্য রেখে ছাত্রছাত্রীদের পাঠদানে আপডেট হতে হবে শিক্ষক শিক্ষিকাদের।

আজ আগরতলার রামনগর উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় (ইংলিশ মিডিয়াম) থেকে পশ্চিম জেলার নবনির্মিত একাধিক স্কুল ভবনের উদ্বোধন করে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী তথা শিক্ষামন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা। রামনগর উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবনির্মিত ভবনের উদ্বোধন করার পাশাপাশি এদিন মুখ্যমন্ত্রী ভার্চুয়ালি উদ্বোধন করেন হেজামারা আরডি ব্লকের অধীনে বড়কাঁঠাল উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, দারোগামুড়া উচ্চ বিদ্যালয় (ইংলিশ মিডিয়াম), আগরতলা পুর নিগমের অধীন ক্ষুদিরাম বসু ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল এবং সুকান্ত একাডেমি ইংলিশ মিডিয়াম উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবনির্মিত ভবন।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা রাজ্যে ৭০ দশকের জমানায় শিক্ষা ব্যবস্থার প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন। তিনি বলেন, সেসময় শিক্ষাঙ্গনগুলিতে দুর্বিষহ অবস্থা কায়েম করে রাখা হয়েছিল। একটা অরাজক পরিস্থিতি ছিল তখন। অনেক ছেলেমেয়ের ভবিষ্যত নষ্ট করে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এখন শিক্ষা ব্যবস্থায় দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলছেন আগামীদিনে দেশ ও রাজ্যের ভবিষ্যত নির্ভর করছে ছাত্র ও যুবদের উপর। তাদের যদি শিক্ষিত করে তোলা না যায় এবং গুণগত শিক্ষা দেওয়া না যায় তবে মানব সম্পদ উন্নয়ন হবে না। আগের ট্র্যাডিশনাল শিক্ষা ব্যবস্থা এবং এখনকার শিক্ষা ব্যবস্থার মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে। আর সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদেরও এখন শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়ন করতে হবে। শিক্ষা ব্যবস্থায় পরিবর্তনের ফলে এখন ড্রপ আউটের সংখ্যাও কমে গেছে।

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, শিক্ষা ক্ষেত্রে পরিকাঠামো উন্নয়নের সাথে সাথে টেট এর মাধ্যমে গুণমান সম্পন্ন শিক্ষক নেওয়া হচ্ছে। ধাপে ধাপে টেট এর মাধ্যমে আগামীতে আরো শিক্ষক নেওয়া হবে। সাধারণত ছাত্রছাত্রীদের ফলাফল ভালো বা খারাপ যেটাই হোক না কেন তার দায়ভার বর্তায় শিক্ষকদের উপর। আমরা ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলগুলিতে ইংলিশ ব্যাকগ্রাউন্ড যুক্ত শিক্ষক নিয়োগের চেষ্টা করছি। তাতে ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে শিক্ষকদের সংযোগ স্থাপন আরো মসৃণ হবে। আজ রামনগর উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, বড়কাঁঠাল উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, দারোগামুড়া উচ্চ বিদ্যালয় (ইংলিশ মিডিয়াম), ক্ষুদিরাম বসু ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল এবং সুকান্ত একাডেমি ইংলিশ মিডিয়াম উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবনির্মিত ভবন নির্মাণে ৮ কোটি ৭০ লক্ষ টাকার অধিক ব্যয় হয়েছে। গত ২২ এপ্রিল আমতলি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ৬টি স্কুলের নবনির্মিত ভবনের উদ্বোধন করি। যেখানে মোট ব্যয় হয়েছে ২৭ কোটি টাকার অধিক।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী আরো বলেন, আমাদের রাজ্য সরকারের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে ছাত্রছাত্রীদের গুণগত শিক্ষা প্রদান করা। সরকার যে নীতিগুলি তৈরি করে সেগুলি যাতে প্রকৃত অর্থে বাস্তবায়িত হয় সেটাই অন্যতম লক্ষ্য। বর্তমান সময়টা প্রযুক্তির যুগ। তাই শিক্ষকদেরও একটা জায়গায় আটকে না থেকে নিজেদের আপডেট করতে হবে। বর্তমানে ছাত্রছাত্রীরাও অনেক আপডেট থাকে। ইন্টারনেট থাকার ফলে অনেক ক্ষেত্রে সুবিধা হয়েছে। ছাত্রছাত্রীদের সত্যিকারের মানুষ হিসেবে তৈরি করতে হবে শিক্ষকদের। শিক্ষা দপ্তর অবহেলিত, দরিদ্র, সংখ্যালঘু শ্রেণী, মহিলাদের শিক্ষা ব্যবস্থার আওতায় আনার লক্ষ্যে কাজ করে চলছে।

শিক্ষামন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা বলেন, দীর্ঘ বছর বাদে জাতীয় শিক্ষা নীতি চালু করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। আর আমরাও জাতীয় শিক্ষা নীতি চালু করেছি। আমরা জানি শিক্ষা যেকোন জাতির অগ্রগতির প্রধান সোপান। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি রাজ্য সরকারের অন্যতম অগ্রাধিকারের ক্ষেত্র। সেই সঙ্গে সবগুলি দপ্তরকেই গুরুত্ব সহকারে দেখছে সরকার। ত্রিপুরা রাজ্য এখন জাতীয় স্তরে বিভিন্ন প্যারামিটারে পুরস্কৃত হচ্ছে। আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এ আই) এর উপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। দুনিয়া খুব দ্রুত চলছে। অন্যান্য দেশের মতো আমাদেরও প্রতিযোগিতামূলক মানসিকতা নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ২০১৮ সালে ভারতীয় জনতা পার্টি নেতৃত্বাধীন সরকার আসার পর ২০২৫ এর এপ্রিল পর্যন্ত বিভিন্ন স্তরে ৬,৮৮৭ জন শিক্ষক নিয়োগ করা হয়েছে। ডাঃ সাহা জানান, ২০২৫-২৬ অর্থ বছরে ৩০টি বিদ্যালয়ে নতুন ভবন নির্মাণ করা হবে। এজন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ২৬৪ কোটি টাকা। এছাড়া ১২৩টি বিদ্যালয়ে পরিকাঠামো উন্নয়নের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। সমগ্র শিক্ষার অধীনে অতিরিক্ত ক্লাশরুম, টয়লেট, ল্যাব, লাইব্রেরি, হোস্টেল ইত্যাদি নির্মাণের জন্য ১৫১ কোটি টাকার অধিক ব্যয় করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। রাজ্য সরকার ডিজিটাল শিক্ষায় গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে। এখন পর্যন্ত রাজ্যে ৮৫৪টি স্মার্ট ক্লাশ চালু হয়েছে। এছাড়াও ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলগুলির পাশাপাশি বাংলা মিডিয়াম স্কুলগুলিতে গুণগত শিক্ষার মান বাড়াতে গুরুত্ব দিয়েছে সরকার।

অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন খাদ্য ও পর্যটন মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী, শিল্প ও বাণিজ্য দপ্তরের প্রতিমন্ত্রী বৃষকেতু দেববর্মা, আগরতলা পুর নিগমের মেয়র তথা বিধায়ক দীপক মজুমদার, শিক্ষা দপ্তরের বিশেষ সচিব রাভেল হেমেন্দ্র কুমার, শিক্ষা অধিকর্তা এন সি শর্মা, রামনগর স্কুলের প্রধান শিক্ষক দিলীপ দেববর্মা সহ অন্যান্য পদস্থ আধিকারিকগণ।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *