আগরতলা, ২১ জুলাই: গ্রাম থেকে শহর সব জায়গায় শিক্ষা ক্ষেত্রে উন্নয়নে অগ্রাধিকার দিয়েছে সরকার। শিক্ষার পরিকাঠামো উন্নয়ন, অন্যান্য সুযোগ সুবিধা ও নতুন নতুন স্কিমের জন্য অর্থ বরাদ্দ করছে সরকার। ছাত্রছাত্রীদের গুণগত মানের শিক্ষা প্রদানের লক্ষ্যে কাজ করছে শিক্ষা দপ্তর। এর পাশাপাশি ত্রিপুরায় একটি শিক্ষা হাব ও একটি স্বাস্থ্য হাব গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
আজ আগরতলার রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবনে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় ১০০% সাফল্য উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত রাজ্যভিত্তিক অনুষ্ঠানে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা।
বিদ্যালয় শিক্ষা দপ্তরের উদ্যোগে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী তথা শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ সাহা বলেন, আজকে এই কার্যক্রমের মাধ্যমে আগামীতে স্কুলগুলির মধ্যে একটা সুষ্ঠু প্রতিযোগিতা গড়ে উঠবে। যেসমস্ত স্কুল ১০০% সাফল্য অর্জন করেছে সেসব স্কুলের প্রতিনিধিরা আজকের কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেছেন। এতে অন্যান্য স্কুলগুলিও অনুপ্রাণিত হবে। স্কুলে ছাত্রছাত্রীদের ভালো বা খারাপ ফলাফলের দায়ভার কিন্তু যায় শিক্ষক শিক্ষিকাদের উপর। এখন গুণগত মানসম্পন্ন শিক্ষক নিয়োগের উপর গুরুত্ব দিয়েছে সরকার। শিক্ষাদান এমন একটি প্রক্রিয়া যেখানে শিক্ষকদেরও যথাযথ প্রশিক্ষণের প্রয়োজন রয়েছে। এজন্য বিভিন্ন নীতি নির্দেশিকা অনুসরণ করতে হয়। টেট, টিআরবিটির মাধ্যমে গুণগত মানের শিক্ষক নিয়োগ করছে রাজ্য সরকার।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, গুণগত শিক্ষা ছাত্রছাত্রীদের প্রদান করতে হবে। সর্বভারতীয় স্তরে বিভিন্ন প্যারামিটারে প্রতিযোগিতায় রয়েছে ত্রিপুরা। পরবর্তী প্রজন্মের উপর আমাদের রাজ্যের ভবিষ্যত আগামীদিনে নির্ভর করছে। তাদের উপর আগামীদিনে রাজ্যের এগিয়ে চলা নির্ভর করছে। এখন স্কুলগুলিতে থিঙ্কারিং ল্যাব, স্মার্ট ক্লাশ শুরু হয়েছে। শিক্ষা ক্ষেত্রে প্রতিনিয়ত অনেক সংস্কার হচ্ছে। প্রযুক্তির সমন্বয় ঘটেছে এখন। বিভিন্ন ক্ষেত্রে আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স সংযুক্ত হয়েছে। সেই সঙ্গে উদ্ভাবনী চিন্তাভাবনা নিয়েও এগিয়ে আসতে হবে। আজকে যারা ১০০% সাফল্য অর্জন করেছে তাদের আত্মতুষ্টির কোন অবকাশ নেই। কারণ আরো সামনে এগিয়ে যেতে হবে। আমাদের আরো ভালো ফলাফল করতে হবে। ত্রিপুরার ছেলেমেয়েরা কোন অংশে কম নয়।
অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী আরো বলেন, শিক্ষা ক্ষেত্রে কোন কোন জায়গায় খামতি রয়েছে সেটা প্রত্যক্ষ করছে বর্তমান সরকার। আমরা বছর বাঁচাও পরীক্ষা চালু করেছি। আগে কেউ দুটো বিষয়ে ফেল করলে পুরো বছর নষ্ট হয়ে যেতো তার। সেটা যাতে না হয় সেজন্য বছর বাঁচাও পরীক্ষা চালু করা হয়। এখন ভোকেশন্যাল সাবজেক্ট চালু করা হয়েছে। এতে ছেলেমেয়েদের বাস্তব জীবনের দক্ষতা অর্জন হচ্ছে এবং আত্মনির্ভর হওয়ার সুযোগ তৈরি হচ্ছে। বিদ্যাজ্যোতি স্কুলগুলিতে গতবছর ফলাফল খারাপ হয়েছিল। এবছর ভালো হয়েছে। তবে আরো ভালো করতে হবে। কিছুদিন আগে দেশের তৃতীয় রাজ্য হিসেবে পূর্ণ সাক্ষর রাজ্যের স্বীকৃতি অর্জন করেছে ত্রিপুরা। ৯৫.৬% নিয়ে এই গৌরব অর্জন করেছে আমাদের রাজ্য। বর্তমান সরকার চেষ্টা করছে শিক্ষা ক্ষেত্রে পরিকাঠামো আরো উন্নয়ন করার। তথ্য দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী জানান, ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষে ১৫৩ কোটি টাকা ব্যয়ে স্কুলগুলিতে নতুন ভবন নির্মাণ করেছে রাজ্য সরকার। ৩৪৬টি স্কুলে সংস্কারের জন্য ৮০ কোটি টাকার অধিক ব্যয় করা হয়েছে। এছাড়া ২০২৫-২৬ অর্থ বছরে ৩০টি বিদ্যালয়ে নতুন ভবন নির্মাণের জন্য ২৬৪ কোটি টাকা ব্যয় বরাদ্দ ধরা হয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যে এনসিইআরটি পাঠক্রম চালু হয়েছে। সুপার ৩০ প্রকল্প চালু হয়েছে। জনজাতি এলাকায় শিক্ষা ক্ষেত্রে উন্নয়নে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এজন্য রাজ্যে ২১টি একলব্য মডেল রেসিডেন্সিয়াল স্কুল গড়ে তোলার জন্য অর্থ বরাদ্দ হয়েছে। এরমধ্যে ৬টি স্কুল চালু রয়েছে। বাকিগুলোও পর্যায়ক্রমে চালু করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মেধা পুরস্কার চালু করা হয়েছে। ট্যালেন্ট সার্চ এক্সাম চালু করা হয়েছে। নবম শ্রেণীর ছাত্রীদের বিনামূল্যে বাই সাইকেল প্রদান করা হচ্ছে। প্রি প্রাইমারি ক্লাশ, নিপুণ ত্রিপুরা, মডিউল বিদ্যাসেতু সহ শিক্ষার উন্নয়নে আরো অনেক প্রকল্প চালু করা হয়েছে। ডিজিটাল শিক্ষার উপরও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী আত্মনির্ভর যোজনায় ১৪০ জন ছাত্রীকে বিনামূল্যে স্কুটি দেওয়া হয়েছে। জেনারেল কলেজগুলিতে ছাত্রীদের জন্য সমস্ত ধরণের ফি মকুব করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষা দপ্তরের বিশেষ সচিব রাভেল হেমেন্দ্র কুমার, শিক্ষা অধিকর্তা এন সি শর্মা, এসসিইআরটির অধিকর্তা এল ডার্লং সহ অন্যান্য পদস্থ আধিকারিকগণ। এই অনুষ্ঠানে রাজ্যের ৮টি জেলা থেকে ১০০% সাফল্য অর্জন করা স্কুলগুলিকে পুরস্কৃত করেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা।