আগরতলা: ভারতীয় জনতা পার্টি নেতৃত্বাধীন সরকার মানব দরদী সরকার। এই সরকার সবসময় মানুষের কল্যাণে নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছে। রাজ্যে আরো ২০,৪৮৫ হেক্টর জমিতে রাবার চাষ বৃদ্ধি করা হবে। ১০টি নতুন রাবার প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্র স্থাপন করা হবে। শুক্রবার খোয়াই জেলায় একাধিক উন্নয়নমূলক প্রকল্পের উদ্বোধন করে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা। প্রথমে তেলিয়ামুড়া মোটরস্ট্যান্ডে উদ্বোধন হওয়া প্রকল্পগুলির মধ্যে রয়েছে – নবনির্মিত তেলিয়ামুড়া মোটরস্ট্যান্ডের উদ্বোধন, ভার্চুয়ালি ৩টি স্কুল ভবনের উদ্বোধন – তেলিয়ামুড়া ইংলিশ মিডিয়াম দ্বাদশ শ্রেণী স্কুল, কবি নজরুল বিদ্যাভবন দ্বাদশ শ্রেণী স্কুল এবং মুঙ্গিয়াবাড়ি দ্বাদশ শ্রেণী স্কুল। দ্বিতীয় উদ্বোধন পর্বের আয়োজন করা হয় খোয়াই জেলার কল্যাণপুর উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। এদিন মুখ্যমন্ত্রীর হাত ধরে উদ্বোধন হয় – কল্যাণপুর উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতল ভবন, ভার্চুয়ালি উদ্বোধন হয় কল্যাণপুর বিডিও আবাস ও বীরচন্দ্রপুর উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নতুন ভবন। এছাড়া ২টি ব্লাড কালেকশন ট্রান্সপোর্টেশন ভ্যানের ফ্ল্যাগ অফ করেন মুখ্যমন্ত্রী।
অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা বলেন, গত পরশুদিন ধর্মনগরে গিয়ে প্রায় ৪৬টি প্রকল্পের উদ্বোধন করেছি। এভাবে প্রায় প্রতিদিনই এধরণের কর্মসূচি রয়েছে। আজ এখানে তিনটি স্কুল ও মোটরস্ট্যান্ডের উদ্বোধন করলাম। এছাড়াও বিভিন্ন জায়গা থেকে আমার সময় দিতে পারা নিয়ে জিজ্ঞেস করা হচ্ছে। এতে প্রমাণ করে সারা রাজ্যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মার্গদর্শনে আমরা উন্নয়নের কর্মযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছি। ত্রিপুরা পূর্ণরাজ্য হওয়ার এত বছর পর তেলিয়ামুড়ায় একটা মোটরস্ট্যান্ড হলো। যা কোনদিন ভাবা যায় না। অথচ এই সড়ক ধরে আমাদের প্রতিনিয়ত আসা যাওয়া করতে হয়। কিন্তু কেউ এবিষয়ে নজর দেয়নি। আমাদের সরকার আসার পর আমরা প্রতিটি দপ্তরে উন্নয়নের চেষ্টা করছি। শুধু স্কুল বিল্ডিং নয়, স্কুলের অভ্যন্তরের চেহারাও বদলে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। ছাত্রছাত্রীরা যাতে গুণগতমানের শিক্ষা পরিষেবা পায় সেদিকেও নজর দেওয়া হচ্ছে। শিক্ষকের স্বল্পতা নিরসনে রাজ্য সরকার প্রয়াস জারি রেখেছে। টিচার্স রিক্রুটমেন্ট বোর্ডের মাধ্যমে এখন ভালো ভালো শিক্ষকরা আসছেন।
অনুষ্ঠানে আলোচনা করতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এই সরকার আসার পর ৭ বছরে প্রায় ১৬ থেকে ১৭ হাজার সরকারি চাকরি দেওয়া হয়েছে। আমরা চাইছি আরো যেসব চাকরি রয়েছে সেগুলি প্রদান করার। শুধু সময়ের অপেক্ষা। আজ তেলিয়ামুড়ায় উন্নয়নের ক্ষেত্রে আরো একটি নতুন পালক যুক্ত হলো। এতে যাত্রী স্বাচ্ছন্দ্য বৃদ্ধির সাথে সাথে পরিবহন শ্রমিকদেরও অনেক সুবিধা হবে। সারা দেশেই সবকা সাথ, সবকা বিকাশ, সবকা প্রয়াস ও সবকা বিশ্বাস এর কর্মযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। আমরাও সেই দিশায় কাজ করছি। প্রধানমন্ত্রীর চিন্তাভাবনাকে সামনে রেখে রাজ্য সরকারও মানুষের কল্যাণে কাজ করছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি সহ সবক্ষেত্রেই অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করছে সরকার। মানুষের যাতে দক্ষতা বৃদ্ধি হয় সেদিকেও নজর দেওয়া হয়েছে। পরিসংখ্যান দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী গত এক বছরে খোয়াই জেলায় বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের খতিয়ান তুলে ধরেন। ডাঃ সাহা জানান, কেন্দ্রীয় প্রকল্পতে কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহণ ও মহাসড়ক মন্ত্রকের অধীনে এই জেলায় খোয়াই থেকে তেলিয়ামুড়া পর্যন্ত প্রায় ২৬ কিমি জাতীয় সড়ক (NH 208) নির্মাণের কাজ চলছে। মুঙ্গিয়াকামী থেকে চম্পকনগর পর্যন্ত জাতীয় সড়ক (NH 08) চার লেনের প্রশস্তকরণের জন্য জমি অধিগ্রহণের কাজ চলছে। রাজ্য সরকারের প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে – গত ১২ ফেব্রুয়ারি তেলিয়ামুড়ায় জেলা পরিবহন কার্যালয়ের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন, খোয়াই পুরান বাজারে পার্কিং কমপ্লেক্সের উদ্বোধন, খোয়াই সরকারি উচ্চতর মাধ্যমিক বালক স্কুল মাঠে সিন্থেটিক টার্ফ ফুটবল গ্রাউন্ডের উদ্বোধন, খোয়াই ইংরেজি মাধ্যম দ্বাদশ শ্রেণী বিদ্যালয়ের নবনির্মিত ভবনের উদ্বোধন, খোয়াইয়ের সিঙ্গিছড়া শরৎ চন্দ্র দ্বাদশ শ্রেণী বিদ্যালয়ের নবনির্মিত ভবনের উদ্বোধন, তুলাশিখর ব্লকের আশারাম বাড়ি উচ্চতর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ক্লাশরুম, ল্যাবরেটরি উদ্বোধন। সেই সঙ্গে খোয়াইয়ে ডিস্ট্রিক্ট পঞ্চায়েত রিসার্চ সেন্টার নির্মিত হয়েছে। ঠাকুর পাড়ায় হোস্টেল বিল্ডিং নির্মিত হয়েছে। এছাড়াও আরো বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প বাস্তবায়ন হওয়ার পর্যায়ে রয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এবারের বাজেটে অনেক সুন্দর সুন্দর প্রকল্প রাখা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী শস্য শ্যামলা যোজনায় যাতে আরো ভালো ফলনশীল জাতের ফসল উৎপাদন করা যায় এজন্য বাজেটে আর্থিক সংস্থান রাখা হয়েছে। এর পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী বালিকা সমৃদ্ধি যোজনা, চিফ মিনিস্টার স্কিম ফর মেন্টালি চ্যালেঞ্জড পার্সন, মুখ্যমন্ত্রী কন্যা বিবাহ যোজনা, চিফ মিনিস্টার এসিস্ট্যান্স ফর ডটার সান ফর আর্মি সিআরপিএফ সহ আরো বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প এবারের বাজেটে রাখা হয়েছে। আমাদের সরকার প্রতিনিয়ত প্রতিটি বিষয়ে নজর রাখে। এই সরকার যে মানুষের সরকার সেটা বারবার প্রমাণিত হয়েছে। এবারের বাজেটে ভারত মাতা ক্যান্টিন কাম নাইট সেন্টার গড়ে তোলার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। সমস্ত মহকুমায় স্পেশাল কোচিং সেন্টার তৈরি করার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য আগরতলা, উদয়পুর, আমবাসায় কম্পিটিটিভ এক্সামিনেশন সেন্টার চালুর প্রস্তাব রাখা হয়েছে। যানজটের সমস্যা নিরসনে আগরতলা ও উদয়পুরে দুটি ফ্লাইওভার নির্মাণের জন্য বাজেটে আর্থিক বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
বক্তব্য রাখতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী আরো বলেন, রাজ্যে আরো ২০,৪৮৫ হেক্টর জমিতে রাবার চাষ নতুন করে বাড়ানো হবে। ১০টি নতুন রাবার প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্র স্থাপন করা হবে। ৩টি ১০০ শয্যা বিশিষ্ট জনজাতি হোস্টেল করা হবে। ৫০ শয্যা বিশিষ্ট ৭টি এসটি হোস্টেল গড়ে তোলা হবে। হাঁপানিয়ায় প্রায় ১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে কম্পিউটার ভিত্তিক অনলাইন পরীক্ষা কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। রাজ্যের বেশ কয়েকটি থানার আধুনিকীকরণের জন্য বাজেটে বরাদ্দ রাখা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী জন আরোগ্য যোজনায় এখন পর্যন্ত প্রায় ২২২ কোটি টাকার পরিমাণে বিনামূল্যে সেটেলমেন্ট হয়েছে। একইভাবে মুখ্যমন্ত্রী জন আরোগ্য যোজনায় আমাদের রাজ্যে প্রায় ২ লক্ষ ২৮ হাজার পরিবারে কার্ড বিতরণ করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিবহন মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী, জনজাতি কল্যাণ মন্ত্রী বিকাশ দেববর্মা, বিধানসভার মুখ্যসচেতক কল্যাণী সাহা রায়, খোয়াই জিলা সভাধিপতি অপর্ণা সিংহ রায়, পরিবহন দপ্তরের সচিব সি কে জমাতিয়া, খোয়াই জেলার জেলাশাসক রজত পন্থ, শিক্ষা দপ্তরের অধিকর্তা এন সি শর্মা সহ অন্যান্য জনপ্রতিনিধি ও বিশিষ্ট ব্যক্তিগণ।
উল্লেখ্য, এদিন তেলিয়ামুড়ায় নির্মিত আধুনিক মোটরস্ট্যান্ডের জন্য ব্যয় হয়েছে ৪.৯০৫৮ কোটি। ৪.৪০৪৩ কোটি টাকা ব্যয়ে তেলিয়ামুড়া ইংরেজি মাধ্যম উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ভবন, ২ কোটি টাকা ব্যয়ে কবি নজরুল বিদ্যাভবন উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভবন এবং ৪.২৪০৮ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয়েছে মুঙ্গিয়াবাড়ি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ভবন। সেই সঙ্গে ৩.৬৭ কোটি টাকা ব্যয়ে কল্যাণপুর উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতল ভবন, ৫৫.৪১৬ লক্ষ টাকা ব্যয়ে বিডিও কোয়ার্টার ও ২.১৮ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয়েছে বীরচন্দ্রনগর উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ভবন।